Lok Sabha Election 2024

শুখা পড়ে ‘মোদী নাল্লি’, তবু দক্ষিণে মোদী-নাম

কর্নাটক বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং নির্বাচন কমিটির দায়িত্বে থাকা সুনীল কুমার বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের দলের নেতারা তো প্রচার করছেনই।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩২
Share:

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

আসুন, একটা সই করে দিন!

Advertisement

শহরের প্রাণকেন্দ্রে এম জি রোডে শিবির খুলে বসে প্রায় জনে জনে অনুরোধ করছেন এক দল স্বেচ্ছাসেবক। আগামী দু’টি রবিবার ১৫ লক্ষ লোককে দিয়ে নরেন্দ্র মোদীর প্রার্থীদের জন্য প্রচার করানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা। যার পোশাকি নাম ‘নানু মোদী পরিবারা, মোদীগাগী মিসালু এ ভানুভারা’! অর্থাৎ কি না আমি মোদীর পরিবার এবং মোদীর জন্য এই রবিবার উৎসর্গ করছি!

কর্নাটক বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং নির্বাচন কমিটির দায়িত্বে থাকা সুনীল কুমার বুঝিয়ে দিচ্ছেন, তাঁদের দলের নেতারা তো প্রচার করছেনই। কিন্তু আম জনতাকে দিয়ে আগামী ২১ ও ২৮ এপ্রিল পদ্ম-প্রার্থীদের জন্য প্রচার করিয়ে চমকে দিতে চাইছেন তাঁরা। তাই চলছে সই সংগ্রহ।

Advertisement

বেঙ্গালুরুরই অন্যত্র এই গরমে সুর চড়ছে জলের দাবিতে। চাতক এই রাজ্যে প্রতি ভোটেই জল একটা বড় বালাই। কিন্তু এ বার বিজেপি-বিরোধীরা নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘জল জীবন মিশন’ প্রকল্পকে। বিজেপি কর্মীরা যার প্রচার করেছেন ‘হর ঘর জল’ বলে। অথচ বেঙ্গালুরু গ্রামীণ লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাওয়া যাবে শানুভোগানাহাল্লির মতো গ্রাম, যেখানে ওই প্রকল্পে পাইপ পৌঁছেছে। জল নয়! স্থানীয় মানুষ ওই পাইপকে বলেন ‘মোদী নাল্লি’। শুখা সেই ‘মোদী নাল্লি’র অন্য দিকে ‘মন্ডলা নাল্লি’তে (পঞ্চায়েতের প্রকল্প) স্বল্প হলেও জলের ধারা দেখা যায়। বেঙ্গালুরু প্রেস ক্লাবে এই সঙ্কটের প্রসঙ্গ উঠতে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি কে শিবকুমার সোজাসাপ্টা বলে দেন, ‘‘কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের প্রকল্প এটা। ভোট চলে গেলে মোদীর গ্যারান্টি ওই নলের জলের মতো হয়ে যাবে! লোককে বোকা বানিয়ে সব ফাঁকা!’’ বিজেপির সুনীলের অবশ্য পাল্টা দাবি, রাজ্য সরকারের অসহযোগিতার জন্যই জল ঘরে পৌঁছচ্ছে না।

‘মোদী নাল্লি’তে জল আসুক বা না আসুক, মোদী কিন্তু বসে নেই। তিনি আবার শনিবারই আসছেন বেঙ্গালুরুর চার আসন-সহ দু’টি জায়গায় জোড়া সভা করতে। তার দু’দিন পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রোড-শো, সভা চিকমাগালুরে। আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডাও। প্রচারের এই আগ্রাসী কৌশলকে পরিভাষায় বলে ‘কার্পেট বম্বিং’। দক্ষিণ ভারত থেকে এ বার লোকসভায় বাড়তি ফায়দা ঘরে তুলতে মোদী-শাহেরা মরিয়া। সুনীলের মতে, আসনের হিসাব দিতে না পারলেও কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল ও তামিলনাড়ু থেকে তাঁদের ভোট বাড়বেই।

বিজেপির এই ‘কার্পেট বম্বিং’-এর মুখে কংগ্রেস শিবিরের সেনাপতি রাহুল গান্ধী আপাতত মনোনিবেশ করছেন কেরলে। কান্নুরে গিয়ে বৃহস্পতিবার ফের তিনি বলেছেন, ‘‘দু’টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জেলে। কিন্তু কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে কেন্দ্রীয় সংস্থা কিছু বলছে না। যতই বিজেপি-আরএসএসের সঙ্গে মতাদর্শগত লড়াইয়ের কথা সিপিএম বলুক, বোঝাই যাচ্ছে বিজয়ন বিজেপির বিরুদ্ধে নীরব থাকেন বলে তাঁকে এজেন্সি ধরে না!’’

মলপ্পুরমে পাল্টা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়নও। তাঁর বিস্মিত উক্তি, ‘‘বিজেপির সমালোচনা করি না, এটা ওঁরা আবিষ্কার করলেন কোথায়? সিপিএম তার ইস্তাহারে সংশোধিত নাগরিত্ব আইন (সিএএ) বাতিল করার কথা বলেছে। কংগ্রেস বলেছে? যারা বিজেপির সঙ্গে তাল দিতে নরম হিন্দুত্ব চালায়, তাদের শংসাপত্র আমাদের চাই না!’’

বিজেপি যেখানে দক্ষিণ ভারতে বিশেষ নজর দিয়ে ঝাঁপিয়েছে, রাহুলেরা তখন সিপিএমকে আক্রমণে ব্যস্ত কেন? কংগ্রেস এবং সিপিএম, দু’দলেরই শীর্ষ নেতৃত্বের যুক্তি, নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ চালিয়ে কেরলে যত ক্ষণ বিজেপিকে শূন্য রাখা যাচ্ছে, তত ক্ষণ এই কৌশলের মার নেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন