Lok Sabha Election 2024

ভোটেও গুলি মণিপুরে, নাগাল্যান্ডে ভোট বয়কট

পূর্ব ইম্ফল জেলার মৈরাংকাম্পি সাজেব আপার প্রাইমারি স্কুলের বুথেও গুলি চলে। এক জন জখম হন। ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা ইভিএম ও ভিভিপ্যাট যন্ত্র পুড়িয়ে দেয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি ও শিলচর শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:০৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

১১ মাস ধরে চলতে থাকা হিংসাকে সঙ্গী করেই ভোটে গিয়েছিল মণিপুর। উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যের ভোটের দিনটাও কাটল সকাল থেকে শুরু হওয়া বিক্ষিপ্ত হিংসায়। গুলি চলল, ইভিএম ও ভিভিপ্যাট যন্ত্র পুড়িয়ে দেওয়া হল, দাপটে বুথ দখলও করল আরাম্বাই টেঙ্গল বাহিনী। গুলিতে তিন জন আহত হলেও কারও মৃত্যুর খবর এখনও পর্যন্ত জানায়নি প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ যদিও বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদীকে তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী করার জন্য ভোট দিয়ে গর্ববোধ করছি।”

Advertisement

প্রচার পর্বে মৈরাংয়ে কংগ্রেস প্রার্থী বিমল আকৈজামের সভাস্থলে গুলি চলেছিল। এ দিন সকাল থেকেই বিষ্ণুপুরে কংগ্রেস-প্রভাবিত বিভিন্ন এলাকা থেকে বুথ দখলের অভিযোগ আসতে শুরু করে। নিরাপত্তা বাহিনীর সামনেই সামরিক পোশাকে সজ্জিত ও সশস্ত্র মেইতেই বাহিনী আরাম্বাই টেঙ্গল বুথ দখল করে ভোট দিতে থাকে। তা নিয়ে কংগ্রেস সমর্থকদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। বিষ্ণুপুরের থামনাপোকপিতে একটি বুথে গুলি চলে। তিন জনের গুলি লাগে। প্রথমে তিন জনের মৃত্যুর খবর রটে গেলেও পরে জানা যায়, তাঁরা জখম হয়েছেন। বুথ দখলের অভিযোগ আসে খংজু এলাকা থেকেও। কংগ্রেস প্রার্থী বিমল বুথে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁকে বাধা দেয়। বিমল অভিযোগ করেন, বাহুবল প্রয়োগ করে বিজেপি মণিপুরে জিততে চাইছে। কংগ্রেসের পোলিং এজেন্টকে বার করে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীও নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে।

পূর্ব ইম্ফল জেলার মৈরাংকাম্পি সাজেব আপার প্রাইমারি স্কুলের বুথেও গুলি চলে। এক জন জখম হন। ঘটনার পরে উত্তেজিত জনতা ইভিএম ও ভিভিপ্যাট যন্ত্র পুড়িয়ে দেয়। খোংমানে সশস্ত্র লোকেরা বুথ দখলের চেষ্টা করলে জনতা বাধা দেয়। সেখানেও ইভিএম ভাঙচুর হয়। কুকি এলাকা কাংপোকপিতে ভোট বয়কটের ডাক থাকায় বুথ খালি ছিল। তবে কুকি বাদে অন্য জনজাতির ভোটারেরা ভোট দিয়েছেন। মুখ্য নির্বাচনী অফিসার প্রদীপকুমার ঝা জানান, সরকারি ভাবে গুলিতে হতাহতের কোনও খবর নেই।

Advertisement

নাগাল্যান্ডের ৬টি জেলার কোনও বুথেই কেউ ভোট দেননি। রাজ্যের ইতিহাসে এমন ঘটনা এই প্রথম। পূর্ব নাগাল্যান্ডে পৃথক রাজ্যের দাবিতে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইএনপিও। ফলে বুথগুলির অধিকাংশই খালি ছিল। এমনকি পূর্ব নাগাল্যান্ডের ২০ জন বিধায়কও ভোট দেননি। একই ভাবে মণিপুরের কুকি এলাকায় ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন সংগঠন। ফলে বহু বুথে ভোটারই ছিল না। নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও বলেন, ‘‘নাগরিকেরা যা ভাল মনে করেছেন, তা-ই করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের তরফে নির্বিঘ্নে ভোটদানের যাবতীয় ব্যবস্থা করা হয়েছিল। রাজ্য সরকারও ইএনপিও-র সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছিল। আমরা এ নিয়ে কোনও সংঘাতে যেতে চাই না।’’

অরুণাচলে ইতস্তত ভাবে ও অসমের রাঙাপাড়ায় বুথ দখলের অভিযোগ উত্তেজনা ছড়ায়। অরুণাচলে ৬০টি আসনে একই সঙ্গে বিধানসভা ভোটও হল আজ। ইতিমধ্যেই বিনা যুদ্ধে ১০টি আসনে জিতেছে বিজেপি। এ বারের ভোটে ৭ জন মহিলা প্রার্থী লড়ছেন। বিকেল ৩টে পর্যন্ত ৫৬ শতাংশ ভোট পড়ে অরুণাচলে।

কয়েক জায়গায় ইভিএম বিকল হওয়া ছাড়া অসমের পাঁচ আসনে নির্ঝঞ্ঝাট ভোটগ্রহণ হয়। শিবসাগরের বানমুখ পঞ্চায়েতে রাইজ়র দলের একটি ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন নির্বাচনী কার্যালয়ে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে সঙ্গীতা গগৈ নামে এক মহিলা মারা যান। নগাঁও লোকসভা আসনের লামডিঙে একটি ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার অসুস্থ হয়ে পড়লে ভোটগ্রহণ কিছু সময়ের জন্য স্থগিত থাকে। শোণিতপুরের নবদম্পতি ফুংসুর নার্জারি ও দুলুমণি বসুমাতারি বিয়ের আসর থেকেই সোজা চলে যান ভোটকেন্দ্রে।

সিকিমের একমাত্র লোকসভা আসনটির সঙ্গে ৩২ আসনবিশিষ্ট বিধানসভারও ভোটগ্রহণ হয় আজ। সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় ধীরগতিতে ভোট চলার দরুন বিকেলে দীর্ঘ লাইন পড়ে। অধিকাংশ ভোটকেন্দ্রে রাত আটটা পর্যন্ত ভোট নেওয়া হয়। এসডিএফ নেতা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পবনকুমার চামলিঙের অভিযোগ, শাসক এসকেএম বহু জায়গায় ভোটারদের বুথে যেতে বাধা দিয়েছে, গন্ডগোলও করেছে। এ দিকে, মিজ়োরামে শান্তিতেই ভোট হয়েছে। ভাঙচিয়ায় ভোটের ডিউটিতে আসা ইন্ডিয়ান রিজ়ার্ভ ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল লালরিনপুইয়া ঘুমের মধ্যেই মারা যান।

ভিড় এড়াতে মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা গাড়ি চালিয়ে ভোর সাড়ে ৬টায় ভোট দিতে গিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ভোট দিতে পারেন আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন