ভোটে ভূতের খেলা বাম জমানাতেও চলত। প্রকারান্তরে স্বীকারই করে নিলেন মহম্মদ সেলিম। আনন্দবাজার ওয়েবসাইটের জন্য অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, গুন্ডা, বদমাশ, মস্তানদের সামনে এনে অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে রাজনীতির। পার্টি থেকে এখনও কাউকে কাউকে বার করে দিতে হবে, এমনও মনে করছে সিপিএম। জানালেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য।
বাম জমানাতেও ভোটে জল মেশানোর অভিযোগ উঠত বিস্তর। তৃণমূলের জমানাতেও উঠেছে বার বার। কিন্তু এ বারের ভোটে কঠোর নজরদারি নির্বাচন কমিশনের। প্রথম দফার ভোটগ্রহণ বাদ দিলে, ভোট লুঠের অভিযোগ তেমন নেই। সিপিএম কি মানছে সে কথা? সেলিম বুঝিয়ে দিলেন সবটাই মানছেন। বাম জমানাতে যে ভোট লুঠের অভিযোগ উঠত, তা মেনে নিয়েই বললেন, ‘‘রুল অফ ল বলে একটা কথা আছে। গুন্ডা বদমাশ, মস্তান যদি সব কিছু ঠিক করে দেয়, তা হলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় রাজনীতির। ভাল লোকজন, যাঁরা চিন্তা করবেন, ভাবনা করবেন, দেশের কথা ভাববেন, সমাজের কথা ভাববেন, তাঁরা দূরে চলে যান। আর যারা বেশি হম্বিতম্বি করতে পারে, তারা সামনে চলে আসে। সে ক্ষতি আমাদের হয়েছে।’’
শুধু ভুল মেনে নিলেই কি দায় সারা? সেলিম বলছেন, মোটেই তা নয়। তাঁর দাবি, বামেরা শিক্ষা নিয়েছে ভুল থেকে। দলকে শুদ্ধিকরণের মুখে দাঁড় করানো হয়েছে। তবে কাজ যে এখনও কিছুটা বাকি, তাও স্পষ্ট করে দিলেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য। বললেন, ‘‘আমরা তো শিক্ষা গ্রহণ করেছি। মানুষও শিক্ষা নিয়েছেন। ঠোকর খেলে মানুষ আরও বেশি সাবধান হয়। এবং এটা সাময়িক নয়। আমরা দলের মধ্যে, বামফ্রন্টের মধ্যে, এমনকী বাইরের মানুষকেও বলেছি। আমরা শুধু ভুল স্বীকার করেই থেমে যাইনি। শুদ্ধিকরণের প্রক্রিয়ায় এরকম অনেককে দল থেকে বার করে দিয়েছি। সূর্য মিশ্র ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড থেকে বলছেন, এখনও এরকম কয়েক জন রয়ে গেছে, যাদেরকে আমাদের বার করতে হবে। এটা কম কথা নয়। প্লেনামের প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে এক জন রাজ্য সম্পাদক বলছেন এত বড় কথা, মানুষ এই বার্তাটা গ্রহণ করেছেন।’’
দেখুন ভিডিও:
বছর দু’য়েক আগেই দীপা দাশমুন্সির বিরুদ্ধে লড়ে রায়গঞ্জ থেকে জিতে এসেছেন সেলিম। এখন সেই দীপার হয়ে ভোট চাইছেন। দু’বছর আগে যাঁকে হারাতে বলেছিলেন, এখন তাঁকেই জেতাতে বলছেন কোন যুক্তিতে? সেলিম মনে করছেন, বিরোধিতা কোনও ব্যক্তির সঙ্গে নয়। বিরোধিতা নীতির সঙ্গে নীতির। কংগ্রেসের নীতির বিরুদ্ধে ভোট চেয়েছিলেন রায়গঞ্জে। বামেদের নীতির পক্ষে ভোট চেয়েছিলেন। দীপা দাশমুন্সির বিরুদ্ধে বা মহম্মদ সেলিমের পক্ষে নয়। রায়গঞ্জের সাংসদের কথায়, ‘‘দীপা দাশমুন্সি হেরে গিয়েও কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ দেখাননি। আমি জিতে গিয়েও কখনও ভাবিনি কংগ্রেসকে শেষ করে দেব।’’
আরও পড়ুন:
‘মমতাকে বিশ্বাস করে বাংলার মুসলিমরা প্রতারিত বোধ করছেন’
কিন্তু বাম আর কংগ্রেসের সেই নীতিগত বিরোধিতার কী হল? তা কি উবে গেল? সেলিম বলছেন, ‘‘এখন তো বাম ও কংগ্রেস অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে লড়তে নেমেছে। তৃণমূলের নীতির বিরোধিতায় এখন বাম-কংগ্রেস এক।’’