শিয়রে পুবের যুদ্ধ, পাশে পশ্চিম

রামনগরে সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহের সমর্থনে সভা চলছে। বলছেন মানস ভুঁইয়া। তাপসবাবুকে ‘মানুষের প্রার্থী’ হিসেবে তুলে ধরে মানসবাবু বলছিলেন, “আমরা কী এই পরিবর্তন চেয়েছিলাম? এখানে (পূর্ব মেদিনীপুরে) কী রাজ (অধিকারী-রাজ) চলে আপনারা জানেন! অখিল গিরিকে দিয়ে ওরা কোনও উন্নয়ন করবে না। আপনারা মানুষের প্রার্থী তাপসকে জেতান।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৬ ০১:৩৩
Share:

রামনগরে সিপিএম প্রার্থী তাপস সিংহের সমর্থনে সভা চলছে। বলছেন মানস ভুঁইয়া। তাপসবাবুকে ‘মানুষের প্রার্থী’ হিসেবে তুলে ধরে মানসবাবু বলছিলেন, “আমরা কী এই পরিবর্তন চেয়েছিলাম? এখানে (পূর্ব মেদিনীপুরে) কী রাজ (অধিকারী-রাজ) চলে আপনারা জানেন! অখিল গিরিকে দিয়ে ওরা কোনও উন্নয়ন করবে না। আপনারা মানুষের প্রার্থী তাপসকে জেতান।”

Advertisement

বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে বালিসাইতে তখন তৃণমূল প্রার্থী অখিল গিরির সমর্থনে সভা করছেন দীনেন রায়। পরিবর্তনের ব্যাখ্যা দিয়ে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেনবাবু বলছেন, “শান্তি আছে। কন্যাশ্রী- যুবশ্রী- সবুজসাথীর মতো প্রকল্প হয়েছে। এটাও তো পরিবর্তন!”

শুধু মানসবাবু, দীনেনবাবুই নন। গত কয়েকদিন ধরেই পূর্ব মেদিনীপুরের মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতারা। সব দলের ক্ষেত্রেই ছবিটা এক। সিপিএমের দীপক সরকার, তরুণ রায়েরা, সিপিআইয়ের সন্তোষ রাণারা যেমন প্রচারে এসেছেন, তেমন বিজেপির তুষার মুখোপাধ্যায়, শুভজিৎ রায়, অরূপ দাসেরা পূর্ব মেদিনীপুরে এসে একের পর এক বিধানসভা এলাকায় দলের প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার সেরেছেন।

Advertisement

বসে নেই শাসক দলের পশ্চিম মেদিনীপুরের নেতারাও। নির্মল ঘোষ, শ্যামপদ পাত্র, আশিস চক্রবর্তী, অমূল্য মাইতি, অজিত মাইতিরাও পূর্বে এসে দলের প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচার করেছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের এক তৃণমূল নেতা বলছিলেন, “আমরা দলের সর্বক্ষণের কর্মী। ভোটের সময় বসে থাকতে কেমন লাগে! জেলার ভোট তো সেই কবে মিটে গিয়েছে। তাই পাশের জেলায় প্রচারে আসা!” শাসক দলের এই নেতা যোগ করছেন, “হতে পারে মেদিনীপুর জেলা ভাগ হয়েছে! তবে এটা প্রশাসনিক ভাবে! আমাদের কাছে মেদিনীপুর
এখনও এক!”

কাল, বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুরে ভোট। শেষবেলার প্রচারে এখন ঝড় উঠেছে। সকাল হলেই শুরু হয়ে যাচ্ছে প্রচার। কোথাও রোড-শো, কোথাও মিছিল, কোথাও বা পথসভা। পূর্ব মেদিনীপুর তৃণমূলের দুর্গ বলেই পরিচিত। রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে ২০১১ সালে। পূর্বে অবশ্য পরিবর্তনের শুরু ২০০৮ সালে। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এখানকা জেলা পরিষদ দখল করে তৃণমূল। এরপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ঘাসফুল বেড়েছে তরতরিয়ে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখেও এ জেলার ১৬টি আসনের মধ্যে সবক’টিতে এগিয়ে তৃণমূল।

এই সমীকরণ মাথায় রেখেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, এ বার পূর্ব মেদিনীপুরের অনেক কেন্দ্রেই জোট-তৃণমূলের সেয়ানে- সেয়ানে লড়াই হবে বলেই মনে করছেন। শেষবেলার প্রচারে সব দলের কর্মসূচিতেই ভাল ভিড় হচ্ছে। তবে ভিড় দেখে তো আর আঁচ করা যায় না যে ভোট-সমর্থন কোন দিকে ঝুঁকবে।

তবে যুদ্ধ জয়ে পূর্বের পাশে পুরোদস্তুর রয়েছে পশ্চিম। আর সেটা সব দলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পূর্বে প্রচারে আসা পশ্চিম মেদিনীপুরের এক তৃণমূল নেতা বলছিলেন, ‘‘এখন ওদের (সিপিএমের) কত ভাষণ! ভোটের পরে যখন ফলাফলটা বেরোবে তখন বুঝবে! দিদি তো সব কাজই করে দিয়েছেন।” জবাবে পূর্বে প্রচারে আসা সিপিএমের এক নেতার বক্তব্য, “সেই! প্রচুর কাজ করেছেন বলেই এখন ওঁকে (মুখ্যমন্ত্রী) বলতে হচ্ছে, ‘আপনারা যদি একটুও আমাকে ভরসা করেন, ভোটটা জোড়াফুলে দেবেন’। মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই স্পষ্ট, ফলাফলটা কী হতে চলেছে!’’

আত্মবিশ্বাসে ফুটছে দু’পক্ষই। পুবের সঙ্গে পশ্চিমও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন