এসএসকেএম-এ মদন মিত্র। মঙ্গলবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।
সব দিক থেকে প্রস্তুতির পরেও নিজের কেন্দ্রে ভোটের আগের দিন হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেননি তিনি। সোমবার সেই ভোট চুকে যাওয়ার পরে, মঙ্গলবার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হল প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সন্ধ্যা সওয়া ৭টায় তাঁকে আলিপুর জেল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় পিজি-র কার্ডিওলজি বিভাগে।
সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ড কার্যত হয়ে উঠেছিল মদনবাবুর অন্যতম ঠিকানা। তখনও তিনি জোড়া দফতরের মন্ত্রী। প্রভাব খাটিয়েই তিনি হাসপাতালকে ঘরবাড়ি তুলেছেন বলে তখন অভিযোগ তুলত বিরোধী শিবির। চতুর্থ দফার নির্বাচনে তাঁর কেন্দ্র কামারহাটিতে ভোট ছিল সোমবার। তার আগের দিন, রবিবারেও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে ফেলা হয়েছিল। এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে টিকিটও তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাঁর নামে।
কিন্তু ভোটের আগের দিন কামারহাটির তৃণমূল প্রার্থী এবং প্রাক্তন মন্ত্রী মদনবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর কথা জানাজানি হতেই ওই কেন্দ্রের কংগ্রেস-সিপিএম জোট প্রার্থী, সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায় নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন। কমিশনের কাছে তাঁর আর্জি ছিল, মদন মিত্রকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও তাঁর হাতের নাগালে যাতে কোনও ফোন বা ইন্টারনেট সংযোগ না-থাকে, সেই ব্যবস্থা করা হোক। তাঁকে যেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ তার পরে মদনবাবুকে পরীক্ষা করে জানান, তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। সে-দিন তাঁকে আর ভর্তি করানো হয়নি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী কয়েক দিন ধরে জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। অস্থিরতার জন্য তিনি চার রাত ঘুমোতে পারেননি। তার উপরে সোমবার রাত থেকে নতুন উপসর্গ হিসেবে বুকে ব্যথা শুরু হয়। মঙ্গলবার সকালে জ্বর না-এলেও বুকের ব্যথা বাড়তে থাকে। কোনও ভাবেই তা না-কমায় জেলের চিকিৎসকেরা হাসপাতালের মেডিক্যাল টিমকে খবর দেন।
মেডিক্যাল টিমের চিকিৎসকেরা এ দিন সকালে জেলে গিয়ে মদনবাবুকে পরীক্ষা করেন। কিন্তু বুকে ব্যথা না-কমায় সন্ধ্যায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। তড়িঘড়ি কার্ডিওলজি বিভাগের তেতলায় কেবিনের রুম সাফসুতরো করা হয়। সন্ধ্যা সওয়া ৭টা নাগাদ জেল থেকে মদনবাবুকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে পিজি-র কার্ডিওলজি বিভাগে ভর্তি করানো হয় চিকিৎসক অচ্যুতানন্দ সরকারের অধীনে। তাঁকে ওই বিভাগের তেতলায় এসি-ওয়ান রুমে রাখা হয়েছে। রাতেই তাঁর চিকিৎসা শুরু করে দেন কয়েক জন চিকিৎসক। তাঁর স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যেরা কিছু পরে হাসপাতালে পৌঁছন। মদনবাবুকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর খবর রটে যাওয়ায় রাতেই পিজি-চত্বরে ভিড় জমাতে শুরু করেন তাঁর অনুগামীরা।