মারের দাগ দেখাচ্ছেন অরিন্দম ভট্টাচার্য। — নিজস্ব চিত্র
নৌকাডুবির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলেন মাঝরাতে। কিন্তু উদ্ধারকাজ নিয়ে প্রশ্ন করায় কালনায় পুলিশ ও তৃণমূলের লোকজন তাঁকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ করলেন শান্তিপুরের বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী তথা যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্য।
ভোট প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে এক প্রার্থীর সঙ্গে কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল, সেই প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে কংগ্রেস। ঘটনার নিন্দা করে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের প্রশ্ন, ‘‘অগ্রাধিকার কোনটা, উদ্ধারকাজ নাকি রাজনৈতিক বিরোধীদের শায়েস্তা করা?’’ বর্ধমান জেলা পুলিশের যদিও দাবি, ঘটনাস্থলে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করছিলেন অরিন্দমবাবু। তাই তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে ব্যক্তিগত জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। অরিন্দমবাবু কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করান।
শনিবার রাত ১১টা নাগাদ কালনা খেয়াঘাটের কাছে যাত্রী বোঝাই নৌকা ডুবে যায়। তাতে নদিয়ার শান্তিপুরের অনেকে ছিলেন। অরিন্দমবাবু জানান, রাতে খবর পাওয়ার পরেই দলের নেতা সৌমেন মাহাতোকে নিয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। তাঁর অভিযোগ, ‘‘নিজের পরিচয় দিয়ে নিখোঁজদের সম্পর্কে জানতে চাই। তাতে হয়তো পুলিশকর্মীরা অপমানিত বোধ করেন। এক জন আমার মুখে ঘুষি মারেন। ঘিরে ধরে বেধড়ক মারধর করা হয়। আশপাশে ঘোরাফেরা করা তৃণমূলের লোকজনও চড়াও হয়।’’ তিনি জানান, ভোরে তাঁকে কালনা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। রবিবার সকালে সিপিএম এবং কংগ্রেসের লোকজন পৌঁছনোর পরে ব্যক্তিগত জামিনে ছাড়া পান তিনি।
এ দিন রাজ্যসভার কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নসীম জৈদীকে অভিযোগ জানিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ভোট প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে পুলিশ এখন কমিশনের অধীনে। তা-ও এক জন প্রার্থীর সঙ্গে কী ভাবে এমন ঘটল? প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। এক প্রার্থী সেখানে উদ্ধারকাজের দাবি জানাতে যাওয়ায় তাঁর উপরে যে বর্বরোচিত অত্যাচার হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে কমিশনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা যেন না হয়, তা-ও দেখার দাবি জানিয়েছে জৈদীর কাছে।’’ ঘটনার নিন্দা করেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি মানস ভুঁইয়াও।
পুলিশ যদিও মারধরের কথা মানতে চায়নি। তাদের দাবি, অরিন্দমবাবু জনতাকে খেপিয়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন। তাই তাঁকে সতর্কতামূলক গ্রেফতার (প্রিভেন্টিভ অ্যারেস্ট) করা হয়। বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রশান্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘এত লোকের মাঝে কী ঘটেছে জানা নেই। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’ তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের বক্তব্য, ‘‘ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। আমাদের কেউ কাউকে মারধর করেছে, এ কথা কারও কাছে শুনিনি।’’