যত দিন যাচ্ছে, হাওয়ার বদল টের পাওয়া যাচ্ছে।
জোটের বলে বলীয়ান সিপিএমের ক্রমশ গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসার, এত দিন যাদের ভয়ে কাঁটা হয়ে থেকেছে সেই তৃণমূলের উপরে পাল্টা চড়াও হওয়ার খবর আগেই মিলছিল।
এ বার বিজেপি ও তৃণমূল ছেড়ে বাম শিবিরে যোগ দেওয়ার ঘটনাও ঘটতে শুরু করেছে। শনিবার নদিয়ার কল্যাণীতে দুই দলের শ’দেড়েক কর্মী সিপিএমে যোগ দেন। মুর্শিদাবাদের নওদায় সিপিএম এবং আরএসপিতে ফেরেন ন’মাস আগে তৃণমূলে চলে যাওয়া ১১ জন পঞ্চায়েত সদস্য।
এ দিন দুপুরে কল্যাণীর মদনপুরে আলাইপুর এলাকার সভামঞ্চে জনা ষাটেক বিজেপি ও শ’খানেক তৃণমূল কর্মীর হাতে লালঝান্ডা তুলে দেন প্রাক্তন সাংসদ তথা সিপিএম প্রার্থী অলকেশ দাস। সেখান থেকে বিশাল মিছিল যায় ‘তৃণমূলের গড়’ হিসেবে পরিচিত সগুনায়। ওই মিছিলে যোগ দেন কংগ্রেস নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্রও।
গত বছরই নওদা বিধানসভা এলাকার মাড্ডা পঞ্চায়েতের ন’জন সিপিএম এবং দু’জন আরএসপি সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা রাখা হয়নি, এই অভিযোগ শনিবার রাতে তাঁরা ফের যে যার দলে ফেরেন।
কোনও ক্ষেত্রেই অবশ্য তৃণমূলের নেতারা কারও দল ছাড়ার কথা স্বীকার করেননি। কল্যাণী ব্লক তৃণমূল সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, এ রকম কিছু তাঁর জানা নেই। দলের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মান্নান হোসেন বলেন, ‘‘যত আজগুবি খবর। এ রকম কিচ্ছু ঘটেনি। আনন্দবাজারই খালি এই সব খবর পায়।’’ বিজেপিও খবরটা উড়িয়ে দিয়েছে।
গত লোকসভা নির্বাচনে যে বিপুল ভোট ছিনিয়ে নিয়ে বামেদের কার্যত পথে বসিয়ে দিয়েছিল বিজেপি, তা যে তারা এ বার ধরে রাখতে পারবে না, তা অনেকটাই প্রত্যাশিত। ওই ভোট বাম-কংগ্রেস জোটের ঘরে ফিরলে তা বহু কেন্দ্রেই নির্ণায়ক হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞেরা। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি কর্মীদের সিপিএমে চলে যাওয়াটা তাই গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন জোটের নেতারা।
কিন্তু কেন এই দলবদল?
স্থানীয় সূত্রের খবর, ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে অন্তর্দ্বন্দ্বে বীতশ্রদ্ধ হয়ে মদনপুরের তৃণমূল কর্মীদের একাংশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। আর একটা অংশ দলে থেকে কোণঠাসা হচ্ছিলেন। এ রকমই কিছু কর্মী সিপিএমে যোগ দিয়েছেন। বিজেপি ছেড়ে আসা গুরুপদ বিশ্বাস, গৌরাঙ্গ সরকার এবং তৃণমূল ছেড়ে আসা আজিজ মণ্ডল, প্রভাস মণ্ডলরা জানান, বারবার তৃণমূলের সংখ্যাগুরু অংশের হাতে আক্রান্ত হলেও দল তাঁদের বাঁচাতে পারছিল না। জোট শক্তিশালী হয়ে ওঠায় তাঁরা তাদের কাছে আশ্রয় খুঁজছেন।
অলকেশবাবুর দাবি, ‘‘এ রকম অনেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু প্রকাশ্যে আসতে ভয় পাচ্ছেন। আমরা বলেছি, ভোটটা দিন, তা হলেই হবে।’’ তৃণমূলের মতো বিজেপির কল্যাণী মণ্ডলের সভাপতি সুখদেব মণ্ডলও অবশ্য দাবি করেন, কেউ দল ছেড়েছে বলে জানা নেই।