West Bengal Assembly Election 2021

WB election 2021 : ভোটের উৎসবে কর্মহীন ওঁরা সেই ‘পরিযায়ী’ই

পতাকার ছড়াছড়ি চারদিকে। পোস্টার পড়েছে সব দলেরই— জোড়া ফুল, পদ্ম ফুল থেকে সিংহ। একজন মোটরবাইক নিয়ে যাওয়ার পথে বলে গেলেন, ‘জয় শ্রীরাম’।

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ , বাপি মজুমদার 

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২১ ০৭:৪৩
Share:

কার্তিক বর্মণ। নিজস্ব চিত্র।

পরনে ফুল প্যান্ট, হাফ হাতা শার্ট। অনেক দিনের পুরনো জামাকাপড়, একনজরে দেখলেই বোঝা যায়। দুই হাতে মাটি লেগে রয়েছে। এক গৃহস্থের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করছিলেন কার্তিক। পাশেই বাংলাদেশ সীমান্ত। দুই-এক জায়গায় কাঁটাতার থাকলেও বেশিরভাগটাই উন্মুক্ত। রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিএসএফ জওয়ান। হরেক মাল হরেক মাল— চিৎকার করতে করতে একটি টোটো ধীর গতিতে চলেছে। তা থেকে গান ভেসে আসছে, ‘‘ও জীবন রে মোকে ছাড়িয়া না যাস রে।’’ যেন এক অদ্ভুত মায়া ছড়িয়ে আছে চারদিকে। কার্তিক ‘পরিযায়ী’ নামে পরিচিত ওই গ্রামে। এক-দুই বছর নয়, অন্তত পনেরো বছর নিজভূম ছেড়ে ‘ভিনদেশি’ ছিলেন তিনি। কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার কার্তিক বর্মণ হয়ে উঠেছিলেন মুম্বইয়ের বাসিন্দা। দেশের বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও ছোট্ট ছেলে কুণাল থাকত। আর ছিল বাপ-মায়ের ভিটেমাটি। যে মাটি থেকে সোঁদা গন্ধের মধ্যেই বাবা-মায়ের ঘ্রাণ পেতেন কার্তিক। আজ সব ফিরে পেয়েছেন তিনি। করোনা তাঁকে সব ফিরিয়ে দিয়েছি। শুধু কেড়ে নিয়েছে কাজ। কার্তিক বলেন, ‘‘আমি এখন বাড়িতেই আছি। বাড়িতে থাকতে ভালই লাগে। কিন্তু টাকা উপার্জনের কোনও রাস্তা নেই। কী কষ্টে যে দিন কাটে!’’ চোখ ছলছল করে ওঠে তাঁর, গলা বুজে আসে। সীমান্ত পথের দিকে তাকিয়ে থাকেন কার্তিক।

Advertisement

আরেকটি টোটো আসে। এ বারে সেই টোটো থেকে ভেসে আসে ভোটের গান। আর মাঝে মধ্যেই, ‘খেলা কিন্তু হবে বন্ধু’। পতাকার ছড়াছড়ি চারদিকে। পোস্টার পড়েছে সব দলেরই— জোড়া ফুল, পদ্ম ফুল থেকে সিংহ। একজন মোটরবাইক নিয়ে যাওয়ার পথে বলে গেলেন, ‘জয় শ্রীরাম’। কার্তিক কিছু বললেন না। কার্তিক যেখানে কাজ করছিলেন, তা থেকে এক কিলোমিটার দূরেই ওঁদের বাড়ি। ছোট্ট ফুল বাগানে দরমা ও টিনের ছোট্ট ঘর। ভেঙে পড়ছে দরমা। সেই বাড়িতে ছিলেন তাঁর স্ত্রী টুম্পা বর্মণ। বললেন, ‘‘ভোট এসেছে। অনেক কথা শুনছি চারদিকে। কোনও কিছুই ভাল লাগে না। আসলে আমরা চাই, এখানেই কাজ হোক। তা হলে ও এখানে থাকে, আমাদেরও একা থাকতে হয় না।’’

টুম্পার কথাই যেন গ্রাম জুড়ে। না শুধু গ্রাম জুড়ে নয়, এক গ্রাম থেকে ভেসে গিয়েছে আরেক গ্রামে। শুধু ওই গ্রাম দিঘলটারি থেকেই বহু মানুষ ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। ওই গ্রামেরই সাত পরিযায়ী শ্রমিক মুম্বই থেকে ফিরে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখন তাঁরা সুস্থ। তবুও পুরনো সংস্থা এখন আর তাঁদের ফেরত নিচ্ছে না। তাই এখন তাঁরা দিনমজুর।

Advertisement

সেই দিনগুলির কথা মনে পড়ে কার্তিকদের। কয়েকশো কিলোমিটার দূরের মালদহেও এমন ছবির অভাব নেই। মাইলের পর মাইল হেঁটে, অভুক্ত শরীরে তাঁরাও ফিরেছিলেন নিজের ভিটেয়। পথে মারাও গিয়েছিলেন কেউ কেউ। মহারাষ্ট্র থেকে অওরঙ্গাবাদের সেই ঘটনাগুলি এখনও ভোলেনি কোচবিহার বা চাঁচল। গত এক বছরে মালদহের চাঁচল মহকুমার অন্তত ৩০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কারও মৃত্যু হয়েছে কাজের সময় দুর্ঘটনায়, কেউ মারা গিয়েছেন বাড়ি ফেরার পথে। একের পর এক মৃত্যুর পরেও অবশ্য এলাকা থেকে কাজের খোঁজে প্রতিনিয়তই ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন এলাকার যুবক, কিশোররা। কার্তিক বলেন, “সেই কবে থেকে ভোট দিচ্ছি। কিছুই তো হল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন