Sovon Chatterjee

শোভনের বেহালা পূর্বে তৃণমূল প্রার্থী হতে পারেন শোভন-জায়া রত্না

কিছুদিনের মধ্যেই তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করা হবে। তখনই রত্নার নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হবে দলের তরফে।

Advertisement

অমিত রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২১ ১৩:৪৫
Share:

শোভন চট্টোপাধ্যায় ও রত্না চট্টোপাধ্যায়।

সব পরিকল্পনা মতো চললে বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বেহালা পূর্ব কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী হতে পারেন তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। সূত্রের খবর, রত্নাকে প্রার্থী হিসেবে তৈরি থাকতে নির্দেশ পাঠিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। রত্নাও স্বামী শোভনের কেন্দ্রে দাঁড়াতে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। তবে এখনই প্রকাশ্যে এ বিষয়ে রত্নাকে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই তৃণমূলের প্রার্থিতালিকা ঘোষণা করা হবে। তখনই রত্নার নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হবে দলের তরফে। এই পরিকল্পনা ঠিক পথে এগোলে শোভনের কেন্দ্রে ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রার্থী হবেন স্ত্রী রত্না। অতঃপর বিজেপি যদি শোভনকে তাঁর পুরোন কেন্দ্রে পার্থী করে, তা হলে স্বামী-স্ত্রী’র সরাসরি লড়াই দেখবে বাংলা।

Advertisement

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৪ অগস্ট যেদিন শোভন ও তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে জেপি নড্ডার হাত ধরে বিজেপি-তে যোগ দেন, সেদিনই বেহালার এক দলীয় অনুষ্ঠানে এসে রত্নাকেই স্বামীর ছেড়ে যাওয়া দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন মমতা। কিন্তু ওই বছরই ভাইফোঁটার দিন আবার শোভন বৈশাখীকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে ফোঁটা নিতে গেলে সমীকরণে বদল ঘটে। সেই সময় তৃণমূলের অন্দরেই গুঞ্জন উঠেছিল শোভনের ‘ঘর ওয়াপসি’ কেবল সময়ের অপেক্ষা। আরও জানা গিয়েছিল, শোভন-বৈশাখীরা শর্ত দিয়েছেন, রত্নাকে যাবতীয় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। এই সময়ে বেহালা পূর্বের ‘কো-অর্ডিনেটর’এর দায়িত্ব দিয়েও সরিয়ে দেওয়া হয় রত্নাকে। পরিবারিক সমস্যার জেরে শোভন যখন মহারানি ইন্দিরা দেবী রোডের বাড়ি ছেড়ে গোলপার্কের বহুতলে গিয়ে ওঠেন, তখনও বেহালা পূর্বের বিধায়ক হওযার পাশাপাশি তিনি ছিলেন ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। শোভনের অনুপস্থিতিতে রত্নাই ওই এলাকার পুর পরিষেবার দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছিলেন। তৃণমূলে ফেরার শর্ত হিসেবে তাঁকে সেই দায়িত্ব থেকেও সরাতে বলেছিলেন শোভন-বৈশাখী, এমনটাই জল্পনা তৈরি হয়েছিল তখন। কিন্তু কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষের পর করোনা সংক্রমণের কালে রত্নাকেই আবার ‘কো-অর্ডিনেটর’ নিয়োগ করেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

ওই ঘটনাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, শোভনের আর তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়। শোভনের অনুপস্থিতিতে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বেহালা পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তারক সিং এবং অভিজিত্ মুখোপাধ্যায়। দৌড়ে ছিলেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য সচেতক রত্না শূর এবং অভিনেতা সোহম চক্রবর্তীও। কিন্তু কালীঘাট সূত্রে মঙ্গলবার পর্যন্ত যা খবর, তাতে শোভনকে জবাব দিতে তাঁর কেন্দ্রে রত্নাকেই প্রার্থী করার বিষয়ে মনস্থির করেছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। ওই বিষয়ে রত্নাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি প্রার্থী হব কি না তা দল ঠিক করবে। এখনও আমাকে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। দল আমাকে যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করার চেষ্টা করেছি। আগামিদিনেও দল কোনও দায়িত্ব দিলে তা পালনের চেষ্টা করব। যেখানে লড়াই করতে পাঠাবে লড়ব।’’ ঘটনাচক্রে, এলাকার বেশকিছু কাউন্সিলর রত্নার প্রার্থিপদের বিরোধিতা করেছেন। এখনও পর্যন্ত তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব সেই বিরোধিতায় কর্ণপাত করতে রাজি হননি। কিন্তু রত্নার টিকিট পাওয়ার জোরাল সম্ভাবনার খবর প্রকাশ্যে এলে সিদ্ধান্ত বদলাবে কি না, তা দলের নেতারা বলতে পারছেন না। তবে দলের শীর্ষনেতাদের বড় অংশ মনে করছেন, রত্নাকে ওই কেন্দ্রে দাঁড় করালে জয় অনেকটাই নিশ্চিত।

প্রসঙ্গত, ২০১১ এবং ২০১৬ সালের ভোটে ওই কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়ক হন শোভন। কলকাতার মেয়র হয়েই ২০১১ সালে বেহালা পূর্ব কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী অম্বিকেশ মহাপাত্রকে হারিয়ে জয়ী হলে তাঁকে মেয়রের পাশাপাশি তিন-তিনটি দফতরের মন্ত্রীও করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে শোভন আর বিধায়ক হিসেবে ‘সক্রিয়’ নন বলেই অভিযোগ তৃণমূলের। বর্তমানে শোভন বিজেপি-র হয়ে ময়দানে নেমেছেন। বস্তুত, মঙ্গলবারই শোভন-বৈশাখী বীরভূমে রোড-শো করেছেন। এর আগে নিজের ‘কর্মভূমি’ বেহালাতেও বেশকিছু কর্মসূচি করেছেন শোভন। সেই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে প্রাক্তন দলীয় সতীর্থদের বিক্ষোভেরও সম্মুখীন হয়েছেন। ঘটনাচক্রে, একটি রোড-শো করতে এসে শোভনের বান্ধবী বৈশাখী জানিয়েছিলেন, বিজেপি নেতৃত্ব চাইলে বেহালা পূর্ব থেকেই প্রার্থী হবেন শোভন। রত্নাকে প্রার্থী করার বিষয়ে বৈশাখীর ওই মন্তব্যও কাজ করে থাকতে পারে বলে তৃণমূলের একাংশ মনে করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন