শ্যামনগরে বিজেপির অবরোধ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
ভোট যত এগিয়ে আসছে তত বিরোধীদের উপর হামলার অভিযোগ উঠছে শাসক দলের বিরুদ্ধে। শনিবার এবং রবিবার দুই ২৪ পরগনার তিনটি জায়গায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মারধর এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সবক্ষেত্রেই অভিযুক্ত তৃণমূল।
দেওয়াল লেখা নিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি-র গণ্ডগোলের জেরে রবিবার দুপুরে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের ঘোষপাড়া রোড অবরোধ করল বিজেপি। এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে অবরোধ শুরু হয়। মিনিট চল্লিশ পর জগদ্দল থানার পুলিশ এসে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জগদ্দলের আঁতপুর ফাঁড়ির কাছে বিজেপির কর্মীরা দেওয়াল লেখার সময় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা চড়াও হয়। খবর পেয়ে জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অরুণ ব্রহ্ম কয়েকজন অনুগামীকে নির্বাচনী প্রচারের গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে পাঠান। তৃণমূল কর্মীরা সেই গাড়িটিও ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। এর পরে অরুণবাবু ও বিজেপি সমর্থকেরা পথ অবরোধ করেন।
আচমকা ঘোষপাড়া রোড অবরোধে শিল্পাঞ্চলের ব্যস্ত রাস্তায় যান চলাচল ব্যহত হয়। প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ ঘুরে ফিডার রোড দিয়ে এই রাস্তার গাড়িগুলিকে যেতে হয় বলে জা নায় ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ট্রাফিক পুলিশ। অরুণবাবু বলেন, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা আমাদের উপর যে ভাবে হামলা চালিয়েছে এবং তারপরেও পুলিশ প্রশাসন কার্যত চুপ থেকেছে। নির্বাচন কমিশনকে ঘটনার কথা জানিয়েছি।” অভিযোগ অস্বীকার করে ভাটপাড়ার বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহ বলেন, “আমাদের দলের কেউ ওদের উপর চড়াও হয়নি। বিজেপি কর্মী সমর্থকরা একটি গল্প তৈরি করে আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ আনছে।”
এ দিনই হাড়োয়াতে দেওয়াল লেখার ‘অপরাধে’ বিজেপি কর্মীদের বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় সসোনাপুকুর শঙ্করপুর পঞ্চায়েতের ধুতুরপোতা বাজারে। আহতদের হাড়োয়া হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। বিজেপির পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ ওই বাজারে বিজেপি প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লেখা হচ্ছিল। সে সময়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতার ছেলে দীপঙ্কর মণ্ডল কয়েকজনকে নিয়ে মোটরবাইকে সেখানে যান। কেন তারা ওই এলাকাতে বিজেপি প্রার্থীর নামে দেওয়াল লিখছে তা জানতে চান। এরপরেই দু’পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয়। মারামারি বাধে। অভিযোগ, বিজেপি-র আব্দুল মোমিন মোল্লা, নিখিল মণ্ডল এবং অনিশ মণ্ডলকে প্রচন্ড মারে তৃণমূলের লোকজন। দেওয়াল লেখক কার্তিক মণ্ডলকেও রাস্তার উপর ফেলে মারা হয় বলে অভিযোগ।
খবর পেয়ে বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত মণ্ডল ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যান। জয়ন্তবাবু বলেন, ‘‘পঞ্চানন মণ্ডলের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই তাঁর দেওয়ালে লেখা হচ্ছিল। তা সত্ত্বেও আমাদের দলীয় কর্মীদের মারধর করা হয়। দীপঙ্কর-সহ অভিযুক্তদের নামে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।’’ এই অভিযোগ অস্বীকার করে হাড়োয়া ব্লকের কার্যকরী সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা সঞ্জু বিশ্বাস বলেন, ‘‘যতদূর শুনেছি বিনা অনুমতিতে লেখার জন্য সামান্য বচসা হয়েছে। কাউকে মারধর করা হয়নি। মিথ্যা এবং অপপ্রচার করে বিজেপি প্রচারের আলোয় আসতে চাইছে।’’ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এছাড়াও শনিবার বিজেপি প্রার্থীর প্রচারের পরই তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা মোটরবাইক নিয়ে এলাকার মানুষকে ভয় দেখিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে বাসন্তীর আঠারোবাকি পঞ্চায়েতের। শনিবার সন্ধ্যার ঘটনা। রবিবার বিজেপির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। ক্যানিং ২ ব্লকের বিডিও তথা এআরও অভিজিৎ সামন্ত বলেন, “বিজেপির পক্ষ থেকে একটা অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশকে বলেছি বিষয়টি দেখার জন্য।”
পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে খবর, বাসন্তীর বিজেপি প্রার্থী পঙ্কজ রায় ওই এলাকায় নির্বাচনী প্রচার সেরে আসার পরেই তৃণমূলের মোটরবাইক বাহিনী সাধারণ মানুষকে হুমকি দেয় বলে বলে অভিযোগ। বিজেপির বাসন্তীর ব্লক সভাপতি প্রতিশ্রুতি দেবনাথ বলেন, “আঠারোবাকি পঞ্চায়েতের প্রধান জালাল সর্দারের নেতৃত্বে তৃণমূলের গুণ্ডা বাহিনী এলাকায় গিয়ে হুমকি দিয়েছে।’’ জালাল সর্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ক্যানিং ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সওকত মোল্লার দাবি, “ওরা প্রধানের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে। গত চারদিন ধরে প্রধান হাসপাতালে ভর্তি। ’’