প্রথমে শো-কজ বা কারণ দর্শানোর নোটিস। এ বার এফআইআর। বিরোধী দলের মহিলা প্রার্থী সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করায় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের তৃণমূল প্রার্থী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রিটার্নিং অফিসার তথা জেলাশাসক পিবি সেলিম। রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা এ কথা জানান।
রেজ্জাকের বিরুদ্ধে এ দিনের এফআইআরে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ধারাটি জামিনযোগ্য। এতে এক বছর পর্যন্ত জেল অথবা জরিমানা হতে পারে। এডিজি শর্মা জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এফআইআরের কথা শুনে রেজ্জাক বলেছেন, ‘‘আইন অনুযায়ী যা করার করব।’’
অভিযোগ ওঠার পরে কমিশনের তরফে নিয়মমাফিক শো-কজ, এফআইআর করা হলেও নিজেদের প্রার্থীর ওই আচরণ সম্পর্কে শাসক দলের সর্বময়ী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন পর্যন্ত কোনও রকম উচ্চবাচ্য করেনি। দলের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে দুঃখপ্রকাশ বা ক্ষমাপ্রার্থনাও করা হয়নি। বাম জমানাতেও শাসক পক্ষের নেতারা বিরোধী নেতানেত্রী সম্পর্কে দেদার কটূক্তি করতেন। তবে তার পরেই বিশেষ করে সিপিএমের তরফে চটজলদি দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা হতো। এখনকার মুখ্যমন্ত্রী নিজে মহিলা হয়েও অন্য এক মহিলা সম্পর্কে দলীয় নেতার কটূক্তির ব্যাপারে নীরব কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে।
শাসক দলের অন্যেরাই বা নীরব কেন? প্রশ্নটা শুনে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় প্রথমে জানান, তিনি প্রচারে ব্যস্ত আছেন। কমিশনের তরফে রেজ্জাককে ঠিক কী বলা হয়েছে, তা না-জেনে তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না।
কিন্তু বিরোধী দলের মহিলা প্রার্থী সম্পর্কে রেজ্জাক কী বলেছেন, সেই বিষয়ে কী বলেন তিনি? রূপার নাম করেননি শোভনবাবু। বুধবার রূপার সম্পর্কে কটূক্তির সঙ্গে সঙ্গে শাসক দলের তারকা দেব ও মুনমুন সেন সম্পর্কেও কটাক্ষ করেছিলেন রেজ্জাক। সেই প্রসঙ্গ টেনে শোভনবাবু শুধু বলেন, ‘‘চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদেরও রাজনীতিতে আসার অধিকার আছে। দেব, মুনমুন সেন বা ওই জগতের অন্য কেউ রাজনীতিতে আসতেই পারেন। এঁদের সম্পর্কে রেজ্জাক যা বলেছেন, তা সমর্থন করি না। দল কাউকে এমন কথা বলার অধিকার দেয়নি।’’
গত বুধবার এবিপি আনন্দে সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বিজেপি নেত্রী ও উত্তর হাওড়ার প্রার্থী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে ভাঙড়ের প্রার্থী রেজ্জাককে আপত্তিকর মন্তব্য করতে শোনা যায়। তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘উনি বড় বড় সিগারেট খান আর এর-ওর সঙ্গে থাকেন, সব আমি জানি।’’ রূপাকে ‘দ্রৌপদী’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। এর প্রতিবাদে কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছিল বিজেপি।
টিভি-সাক্ষাৎকারে ভাঙড়ের তৃণমূল প্রার্থী রেজ্জাককে যাঁদের বিরুদ্ধে নানান মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে, এফআইআরে অবশ্য তাঁদের কারও নাম করেননি কমিশনের প্রতিনিধি। বলা হয়েছে, বাক্য বা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে মহিলার প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের অভিযোগেই রেজ্জাকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হল। কমিশন সূত্রের খবর, বিজেপির অভিযোগের প্রেক্ষিতেই এফআইআর করা হয়েছে।
ভোট ঘোষণার পরে প্রচারের মঞ্চ থেকে হুমকি দেওয়ায় রেজ্জাককে আগেও শো-কজ করেছিল কমিশন। রেজ্জাক বলেছিলেন, ভোটের পরে তো কেন্দ্রীয় বাহিনী চলে যাবে। যাঁরা তৃণমূলকে ভোট দেবেন না, তখন তাঁদের কী হবে? সে-বার দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন ওই তৃণমূল প্রার্থী।
তার কয়েক দিন পরেই বিরোধী শিবিরের মহিলা প্রার্থী সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে আবার কমিশনের রোষের মুখে রেজ্জাক।