‘ফাটিয়ে দিচ্ছিস’, সোহমকে দেব

মুনমুন সেন এসেছেন। তাঁর দৌলতে রিয়া-রাইমাও বাঁকুড়ার গাঁ-গঞ্জের লালমাটিতে হেঁটেছেন। মিঠুন চক্রবর্তীও ঘুরে গিয়েছেন লোকসভা ভোটেই। আর সোহম তো ইতিমধ্যেই অনেকের ঘরে ঘরে ঢুকে চা, জলখাবারও খেয়ে ফেলেছেন। বাকি ছিলেন দেব। বিধানসভা ভোট সেই স্বাদটাও পূরণ করে দিল বাঁকুড়াবাসীর!

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

গঙ্গাজলঘাটি শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ০১:২৬
Share:

মুনমুন সেন এসেছেন। তাঁর দৌলতে রিয়া-রাইমাও বাঁকুড়ার গাঁ-গঞ্জের লালমাটিতে হেঁটেছেন। মিঠুন চক্রবর্তীও ঘুরে গিয়েছেন লোকসভা ভোটেই। আর সোহম তো ইতিমধ্যেই অনেকের ঘরে ঘরে ঢুকে চা, জলখাবারও খেয়ে ফেলেছেন। বাকি ছিলেন দেব। বিধানসভা ভোট সেই স্বাদটাও পূরণ করে দিল বাঁকুড়াবাসীর!

Advertisement

মঙ্গলবারই বাঁকুড়া জেলার শালতোড়া, বড়জোড়া ও বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের হয়ে ভোট প্রচার করে গেলেন বাংলা ছবির নায়ক তথা তৃণমূল সাংসদ দেব ওরফে দীপক অধিকারী। ভরা চৈত্রের ঝাঁ ঝাঁ রোদ, পুলিশের চোখ রাঙানি, তৃণমূল নেতাদের অনুরোধ উপেক্ষা করেই তারকার টানে তৃণমূলের সভাস্থলের ব্যারিকেড ভাঙলেন ভক্তেরা! মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে দেবের সফর সঙ্গী মুকুল রায়ের অভিজ্ঞ চোখ বুঝে গিয়েছিল, এই দর্শকের বেশির ভাগই রাজনীতি নয়, স্রেফ দেবের টানে ছুটে এসেছেন। তাই বক্তৃতা বিশেষ না বাড়িয়ে বললেন, “শুধু দেব দেখলাম, সোহম দেখলাম, আর হাত নাড়লাম করলেই হবে না। ভোটের দিন ভোটটাও ঠিক জায়গায় দিতে হবে!’’

সোহম চক্রবর্তীকে এ বার বড়জোড়া কেন্দ্রে প্রার্থী করেছেন তৃণমূল নেত্রী। এ দিন দুপুর প্রায় দু’টো নাগাদ গঙ্গাজলঘাটির স্কুলমাঠের হেলিপ্যাডের মাটিতে নামে দেব- মুকুলের চপার। তার ঘণ্টাখানেক আগে থেকেই ভিড় জমছিল সভাস্থলেই। দর্শকদের বেশির ভাগই ছিল কচিকাঁচা ও তরুণ-তরুণী। মঞ্চে তখন সোহম। চপার আসছে দেখে সোহমও মঞ্চ থেকে নেমে হেলিপ্যাডের দিকে হাঁটা দেন। চপার থেকে লালকালো চেক শার্ট পরা লম্বা-সুদর্শন চেহারাটা নামতেই বাঁধ ভাঙল জনতার। বাঁশের ব্যারিকেড তখন ভেঙে পড়ার জোগাড়। পুলিশ কর্মীরা ভিড় সামলাতে নাজেহাল। নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাঁটো করতে ছুটে বেড়াচ্ছেন ডিএসপি (প্রশাসন) আনন্দ সরকার।

Advertisement

দর্শকদের দিকে ফ্লাইং কিস ছুড়ে, হাত নাড়তে নাড়তে মঞ্চে এলেন দেব। সেখানেও নাটক। যে ফুলের স্তবক দিয়ে বরণ করা হল দেবকে, তা তিনি ছুড়ে দিলেন মহিলা দর্শকদের দিকে। সেই স্তবক নিতে তখন কাড়াকাড়ি। মঞ্চে মাইক হাতে নিলেন মুকুল রায়। সবে বলতে শুরু করেছেন, “এই গঙ্গাজলঘাটি ব্লকের ছ’টি অঞ্চল বড়জোড়া বিধানসভা ও চারটি অঞ্চল শালতোড়া বিধানসভার মধ্যে পড়ছে...।’’ কথা শোনার ধৈর্য তখন নেই জনতার। সবাই চাইছেন দেব কিছু বলুন। পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে বুঝে দেবের হাতে মাইক তুলে দিলেন তৃণমূল নেতা। মাইকে দেবের গলা ভেসে আসতেই উল্লাস মাত্রা ছাড়ায় দর্শকদের।

মঞ্চে এ দিন দুই তারকার বন্ধুত্বও দেখেছেন দর্শকরা। সোহমের উদ্দেশে দেব বলেন, “আজকের প্রজন্মের জন্য সোহমের মতো ‘ইয়ং’ নেতা দরকার। তুই তো পুরো নেতা হয়ে গিয়েছিস! ফাটিয়ে দিচ্ছিস! আমার দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। দেখ তুই কী করছিস!’’ দেবের কাছ থেকে এই প্রশংসা শুনে হাসতে হাসতে আসন ছেড়ে উঠে এসে দেবের সঙ্গে হাত মেলান সোহম। দেব বলে চলেন, “এখন মানুষ শিক্ষিত। আপনারা সব জানেন। বোঝেন। তাই যে দল কাজ করছে তাকেই ভোট দেবেন। আমার মনে হয় দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তাই আমার ভোট তাঁর জন্যই।’’ ক্ষণিকের বক্তৃতা সেরেই মঞ্চ ছাড়েন দেব।

পরের গন্তব্য শালতোড়ার কলেজ মাঠে। সেখানেও তাঁর জন্য অপেক্ষায় ছিলেন হাজার খানেক ভক্ত। শালতোড়া সেরে সড়কপথে দেব আসেন বাঁকুড়া কেন্দ্রের পুয়াবাগান মোড়ে। সেখানে তাঁকে দেখতে কলেজ পড়ুয়া থেকে গৃহবধূ সকলেই হাজির। দেব সভাস্থলে ঢুকতেই কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ভিড় বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

বস্তুত, বাঁকুড়ার এই তিন বিধানসভা কেন্দ্রেই এ দিন তৃণমূলের নির্বাচনী জনসভা দেবের উপস্থিতিতে রাজনীতি ছাপিয়ে গিয়ে নায়ক অনুরাগীদের সভায় পরিণত হয়েছে। গঙ্গাজলঘাটির এক মিষ্টির দোকানি বলে দিচ্ছেন, “তারকা দেখতে সভাতে ভিড় জমছে ঠিকই। তবে এ দেখে ভোটের ফলাফলের বিচার করলে ভুল হবে।’’ দেবের সভা দেখে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে গঙ্গাজলঘাটির গোড়ামারা গ্রামের বাসিন্দা বাবলু দাস বললেন, “কেউ জানে না কী হবে। নায়ক দেখার থেকেও এখন মানুষ কী পেয়েছে, কী পায়নি সেই হিসাব বেশি করছে।’’ শালিয়াড়ার বাসিন্দা বিকাশ বাউরি, তাপস বাউরিদের মন্তব্য, ‘‘আর যাই হোক, এক তরফা ভোট কিন্তু এ বার হচ্ছে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন