‘প্রচেষ্টা’র ঢাকনা খুলে হোর্ডিং সেই মমতাময়

ঝড় উঠুক, না-ই বা উঠুক, আবরণ সরছেই! নির্বাচনী বিধি মেনে রাস্তার পাশের বাস ছাউনির সরকারি হোর্ডিং ঢাকা দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সে ঢাকা বড়ই আলগা। বারবার খসে পড়ছে। আর তাতেই ফের সামনে চলে আসছে সরকারি হোর্ডিং আর মুখ্যমন্ত্রীর মুখ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০১:৫২
Share:

কামারহাটি, ছবি : সজল চট্টোপাধ্যায়

ঝড় উঠুক, না-ই বা উঠুক, আবরণ সরছেই!

Advertisement

নির্বাচনী বিধি মেনে রাস্তার পাশের বাস ছাউনির সরকারি হোর্ডিং ঢাকা দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু সে ঢাকা বড়ই আলগা। বারবার খসে পড়ছে। আর তাতেই ফের সামনে চলে আসছে সরকারি হোর্ডিং আর মুখ্যমন্ত্রীর মুখ।

কোথাও কোথাও আবার সরকারি বিজ্ঞাপনের মুখ দিনে ঢাকলেও রাতে বেআব্রু হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ, গ্লোসাইন বোর্ডের উপরে কাগজ, পলিথিনের চাদর ঢাকা দেওয়ায় দিনে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু আঁধার নামলেই জ্বলে উঠছে আলো। পলিথিনের আড়াল থেকেই ঝাপসা হয়ে উঁকি দিচ্ছেন শাসক দলের নেতারা!

Advertisement

কোনও মতে ঢাকা দেওয়ার উদাহরণ আরও আছে। দমদম রোডের উপরে রয়েছে বিরাট মাপের সরকারি হোর্ডিং। ঢাকা দিতে গিয়ে অতটা পলিথিন শিট জোগাড় করতে পারেনি স্থানীয় পুর-প্রশাসন। তাই আবরণ জোটেনি হোর্ডিংয়ের এক পাশে থাকা এক মহিলার কান এবং মাথার একাংশের। স্থানীয় এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘ওইটুকু দেখেই
তো বোঝা যায়, ওটা কার মুখ!’’ বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের বাস স্ট্যান্ডে আবার কাগজে ঢাকা হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীর মুখ। সে ঢাকা ছিঁড়ে গিয়েছে। ছবির গায়ে আটকে রয়েছে কাগজের কিছু অংশ।

বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, গত পাঁচ বছরে কলকাতা এবং আশপাশের এলাকা জুড়ে সার-সার সরকারি হোর্ডিং পড়েছে। বিধানসভা ভোট ঘোষণার পরেও সেগুলি ঢেকে দেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়নি প্রশাসন। খাস কলকাতার ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কড়া নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে। তার পরেই তৎপরতা বেড়েছিল। কিন্তু তাতে কাজের কাজ তেমন হয়নি। কাগজের ঢাকা সরে গিয়েছিল এক রাতের মধ্যেই। সেগুলি সারিয়ে তুললেও ফের একই ছবি ধরা পড়ছে খাস কলকাতা থেকে শুরু করে পানিহাটি এলাকায়।

যেমন গল্ফ গ্রিনে দূরদর্শন কেন্দ্রের উল্টো দিকে বাসস্ট্যান্ডে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পাশে ছবি রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তা কাগজ দিয়ে ঢাকা হলেও ক’দিনেই খুলে পড়েছে। বেরিয়ে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর হাসিমুখ। কামারহাটি এলাকার বাসস্ট্যান্ডে আবার মুখ্যমন্ত্রীর ছবিতে কোনও ঢাকাই পড়েনি। জ্বলজ্বল করছে মদন মিত্রের নামও। পানিহাটিতেও বাসস্ট্যান্ডে সরকারি হোর্ডিং ঢাকা হয়নি। উত্তর শহরতলির আরও কয়েকটি জায়গাতেও এমন রয়েছে। সেখানেও রাত হলেই বেশ কিছু জায়গায় আড়ালের পিছন
থেকে ফুটে উঠছে মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য নেতাদের মুখ।


বাঙুর, ছবি : শৌভিক দে

খাস কলকাতায় এই আবরণ দেওয়ার কাজ করছেন পুরসভার কর্মীরা। তবে তার নির্দেশ দিচ্ছেন নির্বাচনী আধিকারিক বা জেলাশাসকেরা। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, কলকাতা দক্ষিণ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের কর্মীদের দল দেওয়া রয়েছে। তাঁরা কাজ করছেন। কোথাও হোর্ডিং থেকে ঢাকা সরে যাওয়ার অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উত্তর কলকাতাতেও পুরসভার বিজ্ঞাপন দফতরের ১০টি দল এই কাজ করছে। পুরসভার একাংশের সন্দেহ, কোথাও কোথাও ইচ্ছে করেই ঢাকা সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, কোনও হোর্ডিংয়ের ঢাকা সরে গেলে অবিলম্বে তা ফের ঢেকে দিতে হবে। যে সব জায়গায় এখনও সরকারি হোর্ডিংয়ে ঢাকা দেওয়া হয়নি, সে সব জায়গায় ব্যবস্থা নিতে জেলা নির্বাচনী আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘‘সরকারি বিজ্ঞাপন নিয়ে কমিশনের নির্দিষ্ট গাইডলাইন রয়েছে। সে ব্যাপারে কোনও রকম গাফিলতি বরদাস্ত করা হবে না’’, বলেন এক কমিশন-কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন