সামনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, পিছনে মুকুল রায়। হেলিকপ্টার থেকে নেমে জামবনির সভার পথে। রবিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
ভোটের মুখে নারদ-হুলে তৃণমূল যে জেরবার, দু’দিন আগে তার আভাস মিলেছে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়। উত্তরবঙ্গে প্রচারে গিয়ে মরিয়া মমতা নিজের ‘সততা’র ভাবমূর্তি বাজি রেখে বলেছেন, ‘‘মনে রাখবেন, ২৯৪টি কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী!’’
এ বার সেই একই সুর তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। রবিবার জঙ্গলমহলে ভোট প্রচারে এসে যুব তৃণমূলের সভাপতি অভিষেকের মন্তব্য, “আমাদের দলে প্রধান দু’টি সম্পদ। প্রথম সম্পদ: আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর দ্বিতীয় সম্পদ তৃণমূলের বুথ স্তরের কর্মীরা, যাঁরা জোড়া ফুলের ঝান্ডাটা ধরে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলনকে পাথেয় করে এই পরিবর্তনের সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন।”
মমতার নামে ভোট চাওয়া তৃণমূলে নতুন নয়। ২০১১ সালের নির্বাচনের আগেও তৃণমূল নেত্রী নিজে বারবার বলেছেন, সব আসনে তিনিই প্রার্থী। ক’দিন আগে সাতগাছিয়ায় সভা করতে গিয়ে অভিষেকও ভোট চেয়েছিলেন মমতার নাম করেই। তবে সেখানে পরিস্থিতি ছিল আলাদা। প্রার্থী সোনালি গুহকে নিয়ে এলাকার নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ সামলাতে সে দিন মমতার নাম করেছিলেন অভিষেক।
ইতিমধ্যে নারদ-কাণ্ডের জেরে সব ওলটপালট হয়ে গিয়েছে। ওই ভিডিওতে এমন কয়েকজন নেতাকে হাত পেতে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, যাঁরা এ বার ভোট-প্রার্থী। ফলে, এই অবস্থায় মমতার ভাবমূর্তির ভরসায় ভোট বৈতরণী পেরোনোর মরিয়া চেষ্টা শুরু হয়েছে তৃণমূলে। সে জন্যই মমতার পরে এ দিন অভিষেকও ওই মন্তব্য করেছেন বলে মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। একই সঙ্গে তাঁদের ব্যাখ্যা, ভোটটা যে শুধু মমতার ভাবমূর্তি দিয়ে হবে না, লড়াইয়ে নিচুতলার কর্মীদেরও লাগবে, সেটা বিলক্ষণ জানেন অভিষেক। আর তাই এই কৌশলী মন্তব্য করেছেন।
এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে দু’টি সভা করেন অভিষেক। মুকুল রায়কে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন হেলিকপ্টারে। দুপুরে বিনপুর বিধানসভার অন্তর্গত জামবনি ব্লকের পড়িহাটিতে প্রথম সভা হয়। দ্বিতীয় সভাস্থল নয়াগ্রাম বিধানসভার অন্তর্গত গোপীবল্লভপুর। দু’টি সভাতেই অভিষেক জানান, ‘ঝাড়গ্রামে সুকুমার হাঁসদা, বিনপুরে খগেন্দ্রনাথ হেমব্রম, গোপীবল্লভপুরে চূড়ামণি মাহাতো, নয়াগ্রামে দুলাল মুর্মুরা নন, প্রার্থী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে মমতাকে ভোট দেওয়া।’
তাঁর সরকারের সাফল্যের সব থেকে বড় নজির হিসেবে বারবারই ‘জঙ্গলমহলের হাসি’র কথা বলেন মমতা। এ দিন অভিষেকও সেই শান্তি আর উন্নয়নের কথা বলেই ভোট চেয়েছেন। যুব তৃণমূলের সভাপতি বলেন, ‘‘এই পাঁচ বছরে আপনার নির্বাচিত বিধায়ক যতবার আপনার এলাকায় এসেছেন তার থেকে পাঁচগুণ বেশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছেন। জঙ্গলমহলের যুবকদের কাজ, রাস্তাঘাট, খাদ্যসাথী, কন্যাশ্রী, সবুজ-সাথী দিয়েছেন। রক্ত থাকতে জঙ্গলমহলকে অশান্ত হতে দেব না।’’
গত পাঁচ বছরে সারদা কেলেঙ্কারি-সহ নানা ঘটনায় দলের অভিযুক্তদের বারবার আড়াল করেছেন মমতা। বিরোধীরা সে কথা তুলে বিঁধেছেন তৃণমূল নেত্রীকে। নারদ-কাণ্ডেও বিরোধীদের নিশানায় সেই মমতাই। তাঁকে লক্ষ করে সিপিএম স্লোগান তুলেছে— ‘লুঠ হয়েছে হাজার কোটি/ কে খেয়েছে হাওয়াই চটি।’ এ দিন তাই বারবার অভিষেকের বক্তব্যে ফিরে এসেছে মমতার ‘সততা’র প্রসঙ্গ। তৃণমূল নেত্রীর ভাইপোর কথায়, ‘‘দেশের মধ্যে মমতাই একমাত্র নেত্রী যাঁর জীবনযাত্রায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। দশ কোটি মানুষের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও টালির ছাদের বাড়িতে থাকেন। সেই হাওয়াই চপ্পল পরেন, কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ঘুরে বেড়ান।’’ অভিষেকের মতে, এহেন ভাবমূর্তির মমতার দিকে আঙুল তোলার অর্থ সাধারণ খেটে-খাওয়া মানুষকে অপমান করা।