শেষবেলায় বিজেপির ভোট-লুঠ তত্ত্ব মমতার

প্রতিপক্ষ কোন কোন আসন জিততে পারে তা নিজেদের প্রচার সভা থেকে কোনও রাজনৈতিক দলই বলে না। সেটাই রাজনীতির দস্তুর। কিন্তু দিদি উলটপুরাণ ঘটালেন সেখানেও। বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগ এনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার কার্যত ইঙ্গিত করতে চাইলেন উত্তরবঙ্গে কোন কোন আসনে জিততে পারে নরেন্দ্র মোদীর দল!

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস

পাঁশকুড়া ও চণ্ডীপুর শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৬ ০৪:২২
Share:

প্রতিপক্ষ কোন কোন আসন জিততে পারে তা নিজেদের প্রচার সভা থেকে কোনও রাজনৈতিক দলই বলে না। সেটাই রাজনীতির দস্তুর। কিন্তু দিদি উলটপুরাণ ঘটালেন সেখানেও। বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগ এনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার কার্যত ইঙ্গিত করতে চাইলেন উত্তরবঙ্গে কোন কোন আসনে জিততে পারে নরেন্দ্র মোদীর দল!

Advertisement

রবিবার পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর ও পাঁশকুড়ায় সভা ছিল দিদির। একেবারে বিধানসভা কেন্দ্রের নাম করে দুই সভাতেই মমতা বলেন, ‘‘বিজেপি বলছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট লুঠ করতে। লোকাল পুলিশ তাদের পাঁচটি কেন্দ্রে সেটা করতে দিল। আমি কেন্দ্রগুলোর নামও জানি।’’ তিনি চারটি কেন্দ্রের নাম মঞ্চ থেকে জানিয়ে দেন— নাগরাকাটা, কালচিনি, মাদারিহাট ও বৈষ্ণবনগর। তবে পঞ্চম কেন্দ্রটির নাম আর করেননি। সোমবার কোচবিহারেও প্রচারে যান মমতা। কিন্তু সেখানে বিজেপির ভোট লুঠ নিয়ে কিছু বলেননি তিনি।

ভোট-পর্বের শেষ লগ্নে পৌঁছে হঠাৎ কেন মমতা এমন অভিযোগ তুললেন, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরে শুরু হয়েছে জল্পনা। অনেকের মতে, লোকসভা ভোটের সময় বাম-কংগ্রেস থেকে যে ভোট বিজেপির দিকে চলে গেছিল, তার একাংশের ‘ঘর ওয়াপসি’ হচ্ছে জোটের দিকে। আর সেই সঙ্গে একটা নতুন ধারাও শুরু হয়েছে। তা হল আর্থিক ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে পড়াদের যে অংশ তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক ছিল, তাতে ধস নামছে। আর সেই ভোট যাচ্ছে বিজেপির দিকে। সে কারণেই বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট লুঠের অভিযোগ করেছেন দিদি।

Advertisement

তবে বাম-কংগ্রেস নেতাদের মতে, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রচার সভা থেকে যে ভাবে আসন ধরে ধরে বিজেপির জয়ের সম্ভাবনার কথা বলছেন, রাজনীতিতে তা একেবারেই বিচিত্র ব্যাপার। এর নেপথ্যে দিদির সুনির্দিষ্ট কৌশল রয়েছে। সেটা কী? অধীর চৌধুরী-মহম্মদ সেলিমদের বক্তব্য, তৃণমূল-বিরোধী ভোটের একটা অংশ বিজেপিতে গেলে যে তাঁর লাভ হবে, সেটা বিলক্ষণ জানেন মমতা। সেই কারণেই মমতা ঠারেঠোরে এই বার্তা দিতে চাইছেন, যে ভাবেই হোক বিজেপি এ বার ভাল রকম ভোট পাচ্ছে। মমতার উদ্দেশ্য, গত লোকসভা ভোটে বিজেপি যে বাড়তি সমর্থন পেয়েছিল, সেটা যেন জোটের পক্ষে ‘ঘর-ওয়াপসি’ না হয়।

আগামী ৫ মে শেষ দফায় পূর্ব মেদিনীপুর ছাড়াও ভোট রয়েছে কোচবিহারে। নন্দীগ্রামের জেলাতেও গত লোকসভায় বিজেপির পালে হাওয়া লেগেছিল। বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ১০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। কোচবিহারের ছবিটাও আলাদা নয়। ২০১১-তে যেখানে উত্তরবঙ্গের এই জেলার ৯টি বিধানসভা আসনে বিজেপি মাত্র ২-৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সেখানে ২০১৪-তে বিজেপির ভোট এক লাফে বেড়ে যায়। মাথাভাঙা, শীতলকুচি, নাটাবাড়ি, তুফানগঞ্জের মতো আসনে তিরিশ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিল তারা। রাজনীতিকদের মতে, মূলত কংগ্রেসের ওপর আস্থা হারিয়ে সেখানে প্রচুর মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। জোটের আবহে সেই ভোট এ বার কংগ্রেসের ঘরে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। বাস্তবে তা হলে কোচবিহারে তৃণমূলের ভরাডুবি হতে পারে। সেই কারণেই, মমতা উত্তরবঙ্গের কিছু আসন ধরে ধরে উদাহরণ দিয়ে দেখাতে চেয়েছেন যে বিজেপি কিছু আসন জিতবে।

তবে মমতার এই কৌশলে কোনও লাভ হবে না বলেই মনে করেন অধীরবাবু। তাঁর মতে, ‘‘মানুষ আর বিভ্রান্ত হবেন না। তৃণমূলকে সরাতে গেলে যে মানুষের জোটকেই ভোট দিতে হবে তা তাঁরা বুঝে গিয়েছেন।’’ অধীরবাবুর দাবি, পূর্ব মেদিনীপুর ও কোচবিহারেও জোটকেই সমর্থন করবেন মানুষ।

বিজেপি অবশ্য ব্যাপারটা সরল ভাবেই দেখছে। তাঁদের মতে, ওই চার কেন্দ্রে তাদের ভাল ফলের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে মাদারিহাট নিয়ে তো তারা খুবই আশাবাদী। আর কালচিনি ও নাগরাকাটা যেহেতু মাদারিহাটের মতোই ডুয়ার্সের দু’টি আসন, সেখানে মোর্চা ও আদিবাসী বিকাশ পরিষদের ভাল প্রভাব রয়েছে। মোর্চা তো বিজেপির সঙ্গী। আদিবাসী বিকাশ পরিষদের বিক্ষুব্ধরাও তাদের সঙ্গে রয়েছে। তার উপর কালচিনিতে তৃণমূল প্রার্থী হলেন বিতর্কিত উইলসন চম্প্রমারি। তাঁর বিরুদ্ধে ভোট পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। এই সব সমীকরণেই ওই চার কেন্দ্রে হারের ভয়ে মমতা ভোট-লুঠের তত্ত্ব আওড়াচ্ছেন বলে বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘যারা নিজেরা ভোট-লুঠ করতে অভ্যস্ত, তারা এ বার ভোট লুঠ করতে পারল না। সেই আক্ষেপ থেকেই অন্যের ঘাড়ে মিথ্যে দোষ চাপাচ্ছে। এটা ওদের হতাশার প্রকাশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন