শিল্প থমকে, তবু শিল্প মমতার মুখে

পুরুলিয়ায় শিল্পের মুখ রঘুনাথপুরে শিল্প হচ্ছে না কিংবা থেমে গিয়েছে শিল্পায়নের চাকা বলে হামেশাই অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। সেই অভিযোগের জবাব রঘুনাথপুর বিধানসভা কেন্দ্রে সভা করতে এসেই দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

প্রশান্ত পাল ও শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

পাড়া ও সাঁতুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৬ ০১:৪৩
Share:

সাঁতুড়ির রামচন্দ্রপুরে সভা করে পাড়ার গুড়গুড়িয়ায় উড়ে গেলেন মমতা। সেখানে আকাশে তাঁর চপারের দেখা মিলতেই দমকলের ইঞ্জিনে চড়ে পড়েন জনতা। সামলাতে হিমশিম পুলিশ।—প্রদীপ মাহাতো ও সুজিত মাহাতো

পুরুলিয়ায় শিল্পের মুখ রঘুনাথপুরে শিল্প হচ্ছে না কিংবা থেমে গিয়েছে শিল্পায়নের চাকা বলে হামেশাই অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। সেই অভিযোগের জবাব রঘুনাথপুর বিধানসভা কেন্দ্রে সভা করতে এসেই দিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

পুরুলিয়ায় মোট যে আটটি সভা এ বার করেছেন মমতা, তার শেষের দু’টি ছিল মঙ্গলবার রঘুনাথপুর কেন্দ্রের অন্তর্গত সাঁতুড়ি এবং পাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে। সাঁতুড়ির রামচন্দ্রপুরের আনন্দমেলা ময়দান এবং পাড়ার গুড়গুড়িয়া ফুটবল মাঠের সভায় তৃণমূল নেত্রী সওয়াল করেছেন শিল্পকেন্দ্রিক উন্নয়নের বিষয় তুলে ধরে। এ দিন দু’টি সভাতেই তিনি দাবি করেন, রঘুনাথপুরকে শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। সাঁতুড়িতে বলেন, ‘‘রঘুনাথপুরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইস্পাত কারখানা, সিমেন্ট কারখানা হচ্ছে। আরও শিল্প হবে।’’ পাড়ার সভায় বলেছেন, ‘‘পাশের রঘুনাথপুর শিল্পনগরী হলে পাড়াতেও শিল্প হবে।’’

বস্তুত, এর আগে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রশাসনিক সভা করতে এসেও শিল্প-উন্নয়নের যে-সব খতিয়ান শোনা গিয়েছে মমতার মুখে, এ বার ভোটের মুখেও তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ঘটনা হল, মুখ্যমন্ত্রী বা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব যাই দাবি করুন না কেন, শিল্পের বহুমুখী সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এই মুহূর্তে রঘুনাথপুর অঞ্চলটি শিল্প-বন্ধ্যা। গত বিধানসভা থেকে পঞ্চায়েত, মাঝে লোকসভা নির্বাচন—বারবারই রঘুনাথপুরে ভোট যুদ্ধের কেন্দ্রে অনিবার্য ভাবেই থেকেছে শিল্পায়ন। ক্ষমতায় আসার আগে তৃণমূল নেত্রী অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও কোনও বড় শিল্প-প্রকল্পই গড়ে ওঠেনি এই অঞ্চলে। এক মাত্র রয়েছে ডিভিসির তাপবিদ্যুৎ কারখানা। তা-ও নানা সমস্যায় ধুঁকছে। আজও বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়নি ওই কেন্দ্র থেকে।

Advertisement

বিরোধীদের কটাক্ষ, সেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কথা গত কয়েক বছরে বারবার কুমিরছানার মতো জেলার মানুষকে শুনিয়ে এসেছেন মমতা। এ বারের ভোটের প্রচারেও সে প্রসঙ্গ তুলছেন। তবে, শিল্পের পাশাপাশি শিল্পকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার কথাও শুনিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘রঘুনাথপুরে আইটিআই, পলিটেকনিক হচ্ছে। প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। আরও শিল্প আসছে। আমি চাই রঘুনাথপুর ও পুরুলিয়ায় আরও শিল্প আসুক। এলাকার ছেলেদের কাজের জন্য বাইরে যেতে হবে না।’’

এর পরেই লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বিঁধেছেন সে রাজ্যের বিজেপি শাসিত সরকারকে। বলেছেন, ‘‘ওখানে তো অনেক খনিজ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু কী হয়েছে?’’ সেই সূত্রেই রঘুনাথপুর ঘিরে শুনিয়েছেন তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। পুরুলিয়ায় আরও কী কী শিল্প হতে পারে, পুরুলিয়ার সম্পদ ও পরিকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে আরও কী শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখার কথাও জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার জয়পুরের সভাতেও পুরুলিয়ায় শিল্পের প্রসঙ্গ এনে তৃণমূল নেত্রী দাবি করেছিলেন, তিনি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আনাড়ায় রেলের কারখানা, তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের (আদ্রায়) কাজ শুরু করেছিলেন। পরের কেন্দ্রীয় সরকার তা বন্ধ করে দেয়।

এ দিন সাঁতুড়ির সভায় ভিড় খুব বেশি না হলেও সেই ঘাটতি পুষিয়ে দিয়েছে পাড়া। গুড়গুড়িয়া মাঠে চড়া রোদ উপেক্ষা করে প্রচুর ভিড় হয়েছিল। এই কেন্দ্রে শক্ত লড়াইতে রয়েছেন কংগ্রেসের টিকিটে গতবার ভোটে জিতে বিধায়ক হয়ে পরে তৃণমূলে যাওয়া উমাপদ বাউরি। স্থানীয় তৃণমূলের একাংশই তাঁর বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। এ দিনের সভার পরে অবশ্য উমাপদবাবু বললেন, ‘‘এই বিপুল সমাগমের পরে অন্য লড়াই।’’

পাড়ার সভায় ভিড় দেখে তৃণমূল নেত্রীও বারবার শুনিয়েছেন জেলার বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর সরকারের নানা কাজের কথা। একই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সাড়ে চার বছরের মধ্যে চারটে নির্বাচন। কাজ করব কখন?’’ শুনিয়েছেন তাঁর সরকারের সময়ে জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার কথাও। বলেছেন, ‘‘জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরানো আমাদের গর্ব।’’ সিপিএমকে বিঁধে বলেছেন, আগের সরকারের আমলে ৩৪ বছরে ৭৮ লক্ষ কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। অথচ কুৎসার ফুলঝুরি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন