শিলিগুড়িতে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচার সভা ঘিরে আশায় বুক বাঁধছে বিজেপি শিবির। আগামী ৭ এপ্রিল শিলিগুড়ির গোঁসাইপুরে প্রস্তাবিত একটি আবাসন প্রকল্পের জায়গায় ওই জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে কালিম্পং থেকে চোপড়া, নকশালবাড়ি থেকে ময়নাগুড়ি পর্যন্ত বিভিন্ন আসনের বিজেপি প্রার্থীরা অংশ নেবেন। ইসলামপুরের প্রার্থীও উপস্থিত থাকবেন। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে এ কথা জানিয়েছেন দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। প্রধানমন্ত্রীর জনসভার মঞ্চে বিজেপি’র সহযোগী দল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ, আদিবাসী বিকাশ পরিষদ এবং গ্রেটার কোচবিহারের প্রতিনিধিরাও থাকবেন বলে জানানো হয়। ওই দিন ডুয়ার্সের বীরপাড়াতেও একটি সভা করবেন নরেন্দ্র মোদী।
লোকসভা ভোটে প্রধামন্ত্রীর পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী শিলিগুড়িতে সভা করেছিলেন। সে সময়, দার্জিলিং জেলা এবং লাগোয়া ডাবগ্রাম এলাকায় বিজেপি’র ভোটব্যাঙ্ক বেড়েছিল। সেই তথ্যকে নির্ভর করেই আশাবাদী বিজেপি শিবির। বিরোধীদের কটাক্ষ লোকসভা ভোটের সঙ্গে এ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফারাক অনেক। তৃণমূলের জেলা কমিটির অন্যতম নেতা গৌতম দেব বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর আসা আর বিধানসভা ভোটে আসা অনেক পার্থক্য রয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।’’
এ দিন বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘এই নির্বাচন এমন সময় হচ্ছে যে তার অনেক রসায়ন আছে। যা দেখে জনসাধারণ ভাবতে শুরু করেছে। কেননা পাঁচ বছর আগে কংগ্রেস, তৃণমূলকে ঘাড়ে চাপিয়ে সিপিএম’কে বধ করেছে। এখন আবার সিপিএম’কে ঘাড়ে চাপিয়ে তৃণমূলকে বধ করতে চাইছে। কংগ্রেসই খেলাটা খেলছে। দেশে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কমছে।’’
কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, এ রাজ্যে বিজেপি’র গ্রহণযোগ্যতা যে নেই তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারের দাবি, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। লোকসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কথা বলেছিলেন এখন অন্য অবস্থা। এখন তাদের মধ্যে ভিতরে যোগ রয়েছে। বাইরে কেবল অন্য কথা বলছেন মোদীভাই আর দিদিভাই।’’ জীবেশবাবু জানান, তৃণমূলকে হঠাতে ধর্মনিরপেক্ষ, বামপন্থী গণতান্ত্রিক জোটকে ভোট দেওয়ার জন্য তারা বাসিন্দাদের কাছে আহ্বান করছেন।
বিজেপি’র সাংসদের কথায়, মানুষ ৩৪ বছর এবং ৫ বছরকে সামনে রেখে ভাবছে। একবার পরিবর্তন করা হল। তাতে হল না। আবার পরিবর্তনের কথা তোলা হচ্ছে। এই অবস্থায় প্রশাসনের তরফে নির্বাচনী প্রচারে অনুমতি নিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বিজেপি’কে। মাইক ব্যবহার করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। হরকাবাহাদুর বিজনবাড়িতে এক মাস আগে র্যালি করলেন। এখন মোর্চা, বিজেপি র্যালি করতে চায়। অথচ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট হতে পারে বলে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তা নিয়ে পর্যবেক্ষকরা যদি চুপ করে থাকেন তা দুর্ভাগ্যজনক। বিজেপি’র অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী এসে ঘূর্ণি ঝড় তুললেন। কার জোট থেকে কাকে ভাঙিয়ে দলে টানতে পারবেন, তা নিয়ে কেনাবেচা শুরু করে দিয়েছেন।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে গোঁসাইপুর এলাকায় জাতীয় সড়কের ধারে মাঠে মোদীর ওই নির্বাচনী জনসভা হবে। রবিবার প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা স্থানীয় প্রশাসনকে নিয়ে সভাস্থল পরিদর্শন করে বৈঠক করেছেন। ৭ এপ্রিল বেলা ১টায় বীরপাড়ায় নরেন্দ্র মোদীর সভা রয়েছে। বিমানে তিনি হাসিমারা যাবেন। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে সভাস্থলে পৌঁছবেন। সভা সেরে হাসিমারা থেকে বিমানে অন্ডাল যাবেন। আসানসোলে জনসভা করে বিমানে বাগডোগরা আসবেন। সেখান থেকে সড়ক পথে গোঁসাইপুরের সভায় আসবেন বিকেল পাঁচটার পরে। প্রধানমন্ত্রীর সভামঞ্চে বিজেপি’র রাজ্য নেতৃত্ব সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, কৈলাস বিজয় বর্গীয়র থাকার কথা রয়েছে।
গত ২ এপ্রিল কেন্দ্রের তরফে একটি কমিটি গড়ে সিকিম–সহ গোর্খা অধ্যুষিত বিভিন্ন রাজ্যে ১১টি সম্প্রদায়কে ‘সিডিউল ট্রাইব স্টেটাস’ দেওয়ার বিষয়টি দেখতে নির্দেশিকা জারি হয়েছে। ভোটের মুখে তাতে মোর্চা অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দাদের প্রভাবিত করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘২০০৪ সাল থেকে সিকিম বিষয়টি নিয়ে দাবি জানাচ্ছে। এ রাজ্যে তরফেও ২০১৪ সালে এ ব্যাপারে দাবি জানানো হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের ব্যাপার নেই বলে দাবি সাংসদের।’’ গৌতম দেবও জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় এ ব্যাপারে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানিয়েছিলেন।