সটান ফতোয়া ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি—‘‘ভোটটা যেন এ দিক ও দিক না পড়ে, তৃণমূলকেই দিবি!’’ না হলে? সে জবাবও নিজেই দিয়েছিলেন, ‘‘মনে রাখবি, কমিশনের (নির্বাচন) মেয়াদ কিন্তু দু’মাস। তার পরে আমাদের কাছেই আসতে হবে।’’
তিনি মুর্শিদাবাদ জেলার এক গ্রামীণ আউটপোস্টের (ওপি) নিতান্তই এক পুলিশ কর্মী। কাদোয়া গ্রামের একাধিক গ্রামবাসীর অভিযোগ, দিন কয়েক ধরে প্রায় ডেকে ডেকে এমনই চোখ রাঙিয়ে চলেছেন আউটপোস্টের ওই এএসআই শেখ সাহাবুদ্দিন। আর তা নিয়েই কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কংগ্রেসের দখলে থাকা স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ রুবি পালের স্বামী সুমনবাবু। তাতে অবশ্য ফল হয়েছিল উল্টো।
সুমনবাবুর অভিযোগ, বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের কর্ণগোচর হয়েছে জানতে পেরে রবিবার রাতে বাড়ি বয়ে এসে শাসিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সুমনবাবুর স্ত্রী রুবি বলেন, ‘‘রবিবার রাতে পুলিশ যখন এল তখন আমার স্বামী বাড়ি ছিলেন না। দরজা খুলতে চাইছি না দেখে ওঁরা বলতে থাকেন, ‘‘আমরা নির্বাচন কমিশনের লোক, দরজা খুলুন।’’ তিনি জানান, কমিশনের নাম শুনে ভরসা পেয়ে দরজা খুলতেই শুরু হয়েছিল হুমকি, গালমন্দ। শুধু তাই নয়, সোমবার সকালে সুমনবাবু-সহ ছয় অভিযোগকারীকে আহিরণ আউটপোস্টে তলব করে একই সুরে ধমক দিয়েছেন সুতি থানার অফিসার ইনচার্জও। অভিযোগকারীদের বয়ান নেওয়ার সময়ে তাঁদের ভিডিও তুলে ‘চাপ’ও দেওয়া হয়েছে বলে সুমন পালের দাবি।
সুতির ওসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ অবশ্য এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। তাঁর কথায়, ‘‘কমিশনের নির্দেশ মতোই কাজ করা হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে একটি কথাও বলব না।” কথা বলতে চাননি অভিযুক্ত এএসআই সাহাবুদ্দিনও।
নির্বাচন কমিশন ক্রমাগত প্রচার করে চলেছে, নির্বাচনী বিধিভঙ্গ কিংবা ওই সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ জানালে, তদন্তের সময়ে অভিযোগকারীর নাম গোপন রাখা হবে। সুতির ঘটনা অবশ্য সে কথা বলছে না। সুমনবাবুর দাবি, ‘‘অভিযোগ জানানোয় বাড়ি এসে পুলিশের হুমকি, থানায় তলব করে ধমক— এর পরে আর কেউ অভিযোগ জানাতে সাহস পাবেন!’’
এই ঘটনায় আখেরে কমিশনের আশ্বাসও ধাক্কা খেল বলে মনে করছে জেলা প্রশাসনের অনেকেই।
সুতির বিডিও দীপঙ্কর রায় ভোটের কাজে আপাতত এলাকায় নেই। তবে যুগ্ম বিডিও তপন দাস বলেন, “কাদোয়ার গ্রামবাসীদের অভিযোগ আমাদের নজরে এসেছে। রবিবার রাতে, পুলিশ কেন অভিযোগকারীদের বাড়িতে গিয়েছিল তা জানি না। তবে এটুকু বলতে পারি, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে অভিযোগের তদন্তে কাউকে গ্রামে পাঠানো হয়নি।’’ সুতি বিধানসভার রিটার্নিং অফিসার মাসুদ আলমও বলছেন, “ঘটনাটি ভাল বার্তা দিচ্ছে না। অবশ্যই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি স্থানীয় বিডিও’র সঙ্গে কথা বলছি।”
এই ঘটনায় পুলিশ যে ‘দলদাস’-এ পরিণত হয়েছে তাই প্রমাণ করে বলে মনে করছেন সুতির ব্লক কংগ্রেস নেতা তারিকুল ইসলাম। স্থানীয় বিজেপি প্রার্থী সম্রাট ঘোষও বলছেন, “পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে সুতিতে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে শাসক দল। আর সে কাজ পুলিশের চেয়ে ভাল আর কে পারে!”
বিরোধীদের এই সব অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের সুতি ১ ব্লকের সভাপতি জিয়ারত আলি। তিনি বলছেন, ‘‘মনে রাখবেন, সুতিতে জেতার জন্য আমাদের পুলিশের সাহায্য প্রয়োজন নেই। মন গড়া অভিযোগ করে কি আর ভোটে জেতা যায়!’’