গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ফের অশান্ত নানুর

তৃণমূল নেতাকে লক্ষ করে গুলি

ভোট পর্ব মিটতে না মিটতেই ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তেতে উঠল নানুর। তৃণমূল প্রার্থী গদাধর হাজরার অনুগামী হিসাবে পরিচিত এক শিক্ষক নেতাকে গুলি-বোমা ছুড়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল দলেরই আর এক নেতা কাজল শেখের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। গুলি মাথা ছুঁয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় তৃণমূলের ওই শিক্ষক নেতা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নানুর শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৬ ০১:২৬
Share:

ভোট পর্ব মিটতে না মিটতেই ফের তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে তেতে উঠল নানুর। তৃণমূল প্রার্থী গদাধর হাজরার অনুগামী হিসাবে পরিচিত এক শিক্ষক নেতাকে গুলি-বোমা ছুড়ে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠল দলেরই আর এক নেতা কাজল শেখের অনুগামীদের বিরুদ্ধে।

Advertisement

গুলি মাথা ছুঁয়ে বেরিয়ে যাওয়ায় তৃণমূলের ওই শিক্ষক নেতা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। তবে, তাঁর শরীরের নানা অংশে আঘাত লেগেছে। আহত হয়েছেন আরও তিন তৃণমূল কর্মী। প্রত্যেককেই অবশ্য প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দিয়েছে নানুর হাসপাতাল। শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ নানুরের দাসকলগ্রাম বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ের সামনের ওই ঘটনায় দলেরই স্থানীয় স্বাধীননগরের পাঁচ কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন জখম নেতা। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানেননি। ঘটনার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন কাজলের এক ঘনিষ্ঠ অনুগামীও। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই এলাকা তথা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে কাজল অনুগামীদের সঙ্গে গদাধর অনুগামীদের সঙ্ঘাতে বারবার তেতে উঠেছে নানুর বিধানসভার বিভিন্ন গ্রাম। পরপর খুন এবং খুনের চেষ্টার অভিযোগও উঠেছে উভয়পক্ষের বিরুদ্ধে। এ বার গদাধরের প্রার্থিপদ আটকানোর মরীয়া চেষ্টা চালান কাজল। কিন্তু তাঁর আপত্তি অগ্রাহ্য করে গদাধরকেই প্রার্থী করে শাসকদল। গদাধরকে হারাতে কাজল শেষপর্যন্ত পরোক্ষে সিপিএমের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন বলে দলেরই ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অভিযোগ। তারই জেরে সিপিএমের নির্বাচনী সভা-সমাবেশে ভিড় বাড়তে থাকে। খোলা হয় দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে থাকা একাধিক দলীয় কার্যালয়। তৃণমূল প্রভাবিত স্থানীয় কলেজের ছাত্র ইউনিটও দখল করে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই। কাজলের গ্রাম পাপুড়িতে প্রচারে গিয়ে কার্যত গ্রামবাসীর বয়কটের মুখে পড়তে হয় গদাধরকে। এমনকী ওই গ্রামেই তৃণমূলের জেলা যুব কার্যালয়টিও রাতারাতি ভোল বদলে ‘ধান্য ক্রয়কেন্দ্রে’ রূপান্তরিত হয়ে যায়।

Advertisement

এ বারের বিধানসভা ভোটে ওই গ্রাম-সহ নানুরের বেশ কিছু বুথে দীর্ঘক্ষণ কোনও এজেন্টই বসাতে পারেনি তৃণমূল। পাল্টা দাসকলগ্রাম-কড়েয়া ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকারও বেশ কিছু বুথে কাজলের ‘সহযোগিতা’ সত্ত্বেও এজেন্ট বসাতে পারেনি সিপিএম। ওই এলাকাটি তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ডানহাত বলে পরিচিত দলেরই জেলা সম্পাদক অভিজিৎ সিংহ ওরফে রানার খাসতালুক হিসাবে পরিচিত। এর আগেও রানা ফরওয়ার্ড ব্লক দলে থাকাকালীন সিপিএমের সঙ্গে সংঘর্ষে বহুবার অশান্ত হয়েছে ওই এলাকার বেশ কিছু গ্রাম।

এ বার ওই দুই পঞ্চায়েত-সহ কীর্ণাহার ১ ও ২ পঞ্চায়েতেই তৃণমূলের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক ছিলেন রানা ঘনিষ্ঠ দলের প্রাথমিক শিক্ষা সেলের নেতা স্বপনকুমার মণ্ডল। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁকে লক্ষ করেই দুষ্কৃতীরা বোমা এবং গুলি চালায় বলে অভিযোগ। তাতে স্বপনবাবু, তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি গীতাকুমার মণ্ডলের দাদা বিপদতারণ মণ্ডল-সহ ৪ জন আহত হন। শনিবার স্বপনবাবু বলেন, ‘‘পার্টি অফিসের সামনে একটা চায়ের দোকানে আমরা কয়েক জন চা খেতে খেতে আড্ডা মারছিলাম। হঠাৎ-ই পাঁচ জন এসে বোমা ও গুলি নিয়ে হামলা চালিয়ে পালিয়ে যাই। বরাত জোরে প্রাণে বেঁচে গিয়েছি।’’ তাঁর দাবি, সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই তাঁদের উপরে হামলা চালিয়েছে। একই দাবি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যেরও। তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। কাজল শেখ এখন সিপিএম হয়ে গিয়েছে। ওর অনুগামী এবং সিপিএমের দুষ্কৃতীরা রাজনৈতিক আক্রোশে আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে।’’

এ দিকে, রাতের ওই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন সিপিএমের স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্য। এ প্রসঙ্গে কাজলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে তাঁর এক অনুগামীর দাবি, ‘‘ওই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনও সম্পর্ক নেই। আর তর্কের খাতিরে যদি ধরেই নিই কাজল ভাই সিপিএম হয়ে গিয়েছেন, তা হলে তার জন্য তৃণমূল নেতাদেরই একাংশ দায়ী।’’ তাঁর ক্ষোভ, তৃণমূলকে নানুরে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যাঁর অবদান সব থেকে বেশি, তাঁকেই ব্রাত্য করে দিয়ে দলে এখন লাল-তৃণমূলীরা ছড়ি ঘোরাচ্ছে। কাজলের ওই অনুগামী মনে করেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে কাজলভাইকে তো কোথাও একটা আশ্রয় নিতেই হবে। না হলে তো দুই দাদার মতো ওঁকেও ছবি করে দেবে।’ এ দিন ফোন ধরেননি অনুব্রত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন