এফআইআর করল সিপিএম, বিজেপি

ডেরেকের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে তৃণমূল

জাল ছবি-কাণ্ডে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছেন তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর পর্যন্ত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১৯
Share:

জাল ছবি-কাণ্ডে বিরোধীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পড়েছেন তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর পর্যন্ত হয়েছে। এ বার দেখা যাচ্ছে, যে দলের জন্য বড় মুখ করে জাল ছবি প্রকাশ্যে দেখিয়েছিলেন ডেরেক, তারাও তাঁর পাশে নেই! দূরত্বের বার্তা স্পষ্ট করে তৃণমূলের সহ-সভাপতি মুকুল রায় রবিবার স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, ‘‘ওই ঘটনায় এফআইআর যখন হয়েছে, তখন আইন আইনের পথেই চলবে।’’

Advertisement

তৃণমূল জমানার ‘আইন’ বলে, ব্যঙ্গচিত্র ফরওয়ার্ড করায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অম্বিকেশ মহাপাত্রকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এ দিন ফের অম্বিকেশবাবু দাবি করেন, ‘‘আমাকে যেমন গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই একই সূত্রে ডেরেককেও গ্রেফতার করা উচিত এবং তা অবিলম্বে।’’ তবে মুকুল রায়ের বক্তব্য, ‘‘অম্বিকেশ তখন ক্ষমা চাননি, কিন্তু ডেরেক ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন।’’ ডেরেক দাবি করেছিলেন, ওই সাংবাদিক সম্মেলন তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই করেছিলেন। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মুকুল বলেন, ‘‘বাস্তব ক্ষেত্রে সব সময় সব কাজের আগে দলনেত্রীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয় না।’’

আর ডেরেক? তাঁকে এ দিন ফের প্রশ্ন করা হয়, দিদির নির্দেশেই কি ওই সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন তিনি? ডেরেক বলেন, ‘‘আমার যা বলার, আমি বলে দিয়েছি। আমি ওই ছবি তুলে নিয়েছি। আর কিছু বলার নেই। এ বার আনন্দবাজার যা ইচ্ছে লিখতে পারে।’’ তাঁর আরও দাবি, তিনি ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন। তাই এ নিয়ে আর বিতর্কের কিছু নেই। যার অর্থ, মমতার নির্দেশের প্রসঙ্গটি এড়িয়েই গেলেন তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র!

Advertisement

ডেরেক শনিবার দু’টি ভিডিও এবং ছ’টি ছবি প্রকাশ করেছিলেন। তার মধ্যে একটি ছবির বিষয় ছিল, সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। কিছু ক্ষণ পরেই জানাজানি হয়, ওই ছবিটি জাল। আসল ছবিতে ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দলের দফতরে মিষ্টি খাওয়াচ্ছেন রাজনাথ। এর পরেই ছবিটি তৃণমূলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। টুইটার হ্যান্ডলেও ছবিটি নিয়ে ভুল স্বীকার করা হয়। ডেরেক নিজেও ভুল স্বীকার করে নেন।

কিন্তু তাতেও বিরোধীদের হাত থেকে রেহাই পাননি ডেরেক। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ এবং সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট শনিবারই জাল ছবি-কাণ্ডের প্রতিবাদ করেছিলেন। রাজ্য বিজেপির প্রতিনিধিরা রবিবার লালবাজারে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) দেবাশিস বড়ালের সঙ্গে দেখা করে এফআইআর করেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মদন ঘোষও লালবাজারে সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেছেন। নয়াদিল্লির মন্দির মার্গ পুলিশ থানায় ডেরেকের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন কারাট।

বিজেপির রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার এ দিন বলেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছবি জাল করলে তো জেলেই যেতে হবে!’’ অম্বিকেশবাবুর প্রসঙ্গ টেনে জয়প্রকাশবাবু বলেন, ‘‘ডেরেককেও গ্রেফতার করতে হবে। আর ডেরেক শনিবার বলেছিলেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন। সুতরাং, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করতে হবে।’’ পুলিশ-কর্তা দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগপত্র পেয়েছি। প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে।’’ জাল ছবিতে যে-হেতু প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জড়িত, সে জন্য এ ব্যাপারে দিল্লিতেও অভিযোগ জানাচ্ছে বিজেপি।

কারাট এ দিন বলেন, ‘‘একটি ছবিকে বিকৃত করে আমার এবং আমার দলের গায়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কাদা ছেটানোর চেষ্টা হয়েছে। এটি রাজনৈতিক মানহানির সমান। সে কারণেই ডেরেক ও’ব্রায়েনের বিরুদ্ধে আইনের নির্দিষ্ট ধারায় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অভিযোগ দায়ের করেছি।’’

সূত্রের খবর, এফআইআর-এর মোকাবিলায় নিজের আইনজীবীদের সাহায্য নিচ্ছেন ডেরেক। সিপিএম এবং বিজেপি এক সঙ্গে থানায় গেলে তা তৃণমূলের পক্ষে মঙ্গলজনক, প্যাঁচে পড়ে এখন এই যুক্তি দিচ্ছেন ডেরেকের ঘনিষ্ঠ নেতারা। যদিও দলেরই অনেকে তা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, জাল ছবি দেখিয়ে জাতীয় স্তরেও তৃণমূলের মুখ পুড়িয়েছেন ডেরেক।

ঘটনা হল, ডেরেকের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলেরই অন্দরে। দলের একটা অংশ এমনিতেই এই সাংসদের আচরণ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। শনিবারের ঘটনা তা আরও বাড়িয়েছে। তবে ভোটের মধ্যে এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলে কেউই আর দলনেত্রীর কোপে পড়তে চাইছেন না। নাম না করে এক নেতার বক্তব্য, যে ভাবে নিজের রিসার্চ টিমের ঘাড়ে দায় চাপিয়েছেন ডেরেক, তা অত্যন্ত অন্যায়। ওই রিসার্চ টিমে কাজ করা কিছু মেধাবী যুবক-যুবতীর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আসলে তাঁদেরই চূড়ান্ত অপমান করা হয়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষতি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন