ভেজাল না অনুদান? জালে জড়াচ্ছে তৃণমূল

নারদ কাণ্ডের ভিডিও ফুটেজকে আবার ‘ভেজাল’ বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! আর তৃণমূলের সাংসদ-আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে দাঁড়িয়ে ভিডিওর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেও বললেন, ঘুষ ও অনুদানের মধ্যে ফারাক রয়েছে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৬ ০৪:০৭
Share:

নারদ কাণ্ডের ভিডিও ফুটেজকে আবার ‘ভেজাল’ বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! আর তৃণমূলের সাংসদ-আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে দাঁড়িয়ে ভিডিওর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেও বললেন, ঘুষ ও অনুদানের মধ্যে ফারাক রয়েছে! একই সঙ্গে আদালতে তাঁর আর্জি, ‘‘নির্বাচনের আগে এই মামলায় আদালত যেন এমন কোনও নির্দেশ না দেয় যা বিরোধীরা হাতিয়ার করতে পারেন! নির্বাচনের পরে রায় দিক আদালত।’’ আদালত অবশ্য এই আর্জি মানেনি। বরং আগামী ৮ এপ্রিল ফের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

Advertisement

এ দিন কল্যাণের সওয়ালের পরে প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি স্ববিরোধিতার জালে জড়াচ্ছে তৃণমূল? নাকি তারা পরোক্ষে মেনে নিচ্ছে যে, সত্যিই টাকা নিয়েছিলেন দলের সাংসদ-বিধায়করা! কারণ, যে ভিডিওকে স্বয়ং দলনেত্রী বারবার ভুয়ো বলে দাবি করছেন, তাতে দেখানো টাকা ঘুষের না অনুদানের— সেই প্রশ্ন উঠছে কেন? আর সে ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ নিয়ে ভয় পাওয়ারই বা কারণ কী?

এ দিন নারদ মামলা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর তৃণমূলের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেন, যে ফুটেজে টাকা নেওয়া দেখানো হয়েছে, আপনি কি তার সত্যতা স্বীকার করছেন? জবাবে ভিডিওর সত্যতা অস্বীকার করেও কল্যাণ বলেন, ‘‘ব্রাইব আর ডোনেশন (ঘুষ ও অনুদান)-এর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ওই ছবি তোলা হয়েছে ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে।’’ পাশাপাশিই তিনি ভোটের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে আদালতে আর্জি জানান।

Advertisement

রাজনৈতিক নেতাদের মতে, নারদ কাণ্ডে তৃণমূল যে যথেষ্ট বেকায়দায়, আদালতে কল্যাণবাবুর আবেদনেই তা পরিষ্কার। কারণ প্রকারান্তরে তিনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন! যদিও ঠিক এই প্রশ্নটাই আদালতের বাইরে করলে কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘আদালতে কী বলেছি, তার ব্যাখ্যা সংবাদমাধ্যমের কাছে দেব না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এই মামলা ধোপে টিকবে না। কারণ, আইনে কোথাও প্রার্থীর অনুদান নিতে বাধা নেই।’’

কিন্তু সত্যিই কি তা-ই? ভোটে রাজনৈতিক দলকে অনুদান দেওয়ার নিয়ম নিয়ে আইনজীবীরা কী বলছেন?

এই মামলার আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতের বাইরে জানান, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও প্রার্থীকে ২০ হাজার টাকার বেশি অনুদান নিতে হলে তা চেক-এ নিতে হবে। অনুদান যিনি দিচ্ছেন, তাঁর সম্পর্কে তথ্য (ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, প্যান কার্ড ইত্যাদি) কমিশনকে জানাতে হবে। উপরন্তু, অনুদান নিলে দল বা প্রার্থীর পক্ষ থেকে পাকা রসিদ দিতে হবে। তাঁর দাবি, ‘‘কল্যাণবাবু হয় ভুল বলছেন বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।’’ বিকাশবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘যাঁরা ঘুষ কাণ্ডে অভিযুক্ত, তাঁরা তো কেউ অনুদান নেওয়ার কথা বলেননি!’’ নারদ নিউজের কর্ণধার ম্যাথু স্যামুয়েলও দিল্লিতে বলেন, ‘‘ওগুলো অনুদান ছিল না। ওঁরা ঘুষ নিয়েছেন। তা ছাড়া আমার রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মতলব ছিল বলে যদি অভিযোগ ওঠে, তা হলে তারও তদন্ত হোক।’’

এ দিন বেলা ২টোয় নারদ-মামলা নিয়ে শুনানির শুরুতে নারদের আইনজীবী তথা রাজ্যের প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল বিমল চট্টোপাধ্যায়ের কাছে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, নির্বাচন কমিশনকে মামলার নোটিস পাঠানো হয়েছে কি না। হয়নি জেনে কমিশনকে অবিলম্বে নোটিস পাঠাতে নির্দেশ দেন তিনি।

সওয়াল-জবাব শেষে ৮ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত। অর্থাৎ ভোটের ভরা মরসুমেই নারদ নিয়ে শুনানি চলবে। তৃণমূলের অস্বস্তি তাই রয়েই গেল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন