শান্তির আর্জি উপেক্ষা করে অশান্ত হুগলি

বুথ ফেরত সমীক্ষায় তৃণমূলের ক্ষমতা ফেরার ইঙ্গিত পেয়ে অশান্তি এড়াতে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই জনমানসে আবেদন জানিয়েছিল। নিজের নিজের দলের কর্মী-সমর্থকদের কোনওরকম প্ররোচনায় পা না দিতে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু অনুগামীদের কাছে সেই বার্তা যে ঠিকমতো পৌঁছয়নি, বৃহস্পতিবার ভোটের ফল ঘোষণার পরেই তাঁর আঁচ মিলল।

Advertisement

পীযূষ নন্দী

আরামবাগ শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৬ ০৩:৩৫
Share:

হাসপাতালে তৃণমূলের আহতেরা। ছবিটি তুলেছেন মোহন দাস।

বুথ ফেরত সমীক্ষায় তৃণমূলের ক্ষমতা ফেরার ইঙ্গিত পেয়ে অশান্তি এড়াতে শাসক-বিরোধী দু’পক্ষই জনমানসে আবেদন জানিয়েছিল। নিজের নিজের দলের কর্মী-সমর্থকদের কোনওরকম প্ররোচনায় পা না দিতে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু অনুগামীদের কাছে সেই বার্তা যে ঠিকমতো পৌঁছয়নি, বৃহস্পতিবার ভোটের ফল ঘোষণার পরেই তাঁর আঁচ মিলল।

Advertisement

এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ ভোট গণনার পাঁচ-ছয় রাউন্ড পরেই জয় নিশ্চিত জেনে আরামবাগ মহকুমা জুড়ে তৃণমূলের “চড়াম চড়াম” উৎসব পালনের খবর আসতে শুরু করে। দিনের প্রথম ঘটনাটি ঘটে খানকুলের ঘোষপুরে। সিপিএম নেতা কাজল ঘোষালের খোঁজে গিয়ে তাঁকে না পেয়ে রাস্তায় তাঁর ভাই তাপসের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নিমাই কর নামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর ও লুঠ হয়। ইছাপুরে সুশান্ত সামন্ত এবং ঠাকুরানিচকে স্বদেশ চোয়ান নামে দুই সিপিএম নেতার বাড়ি ভাঙচুর ও মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। খানাকুলের কুতুবচক, গণেশপুর, চব্বিশপুরে তৃণমূলের লোকজন সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের লাঠিপেটা করে বলে অভিযোগ। পুরশুড়ার ভাঙামোড়ায় কয়েক জন সিপিএম কর্মীর বাড়িতে ঢুকে মারধর, ভাঙচুর ও পানীয় জলের কলটি ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। গোঘাটের বালি অঞ্চলে সিপিএম নেতা অসিত সিংহ রায় এবং মানস ভঞ্জর বাড়ি ভাঙচুর, হাজিপুরে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া থেকে নকুন্ডায় বাসু সাঁতরা এবং বাপী পাত্র নামে দুই সিপিএম কর্মী সহ ৬জনকে মারধর—সবক্ষেত্রেই অভিযপক্ত তৃণমূল। আহতদের ৩ জনকে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পাল্টা হামলার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধেও। আরামবাগের বনমালিপুরে তৃণমূলের হামলা ঠেকাতে গিয়ে সিপিএমের লোকজনের হাতে গুরুতর জখম উদয় সিংহ, দিলীপ সিংহ, মিতা সিংহ, সমাপ্তি সিংহ-সহ আট তৃণমূল কর্মীকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আরামবাগের কালিপুর সংলগ্ন হোড়পুরে তৃণমূল হামলা করতে এলে অস্ত্র নিয়ে সিপিএমের কর্ণী-সমর্থকেরা বাধা দিলে দু’পক্ষে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ গিয়ে লাঠি চার্জ করে দু’দলকে হটিয়ে দেয়। শেখ আব্দুল মহম্মদ, শেখ আব্দলু সাত্তার এবং শেখ আব্দুল রেজ্জাক নামে তিন সিপিএম কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

অন্য দিকে, চুঁচুড়ার কেওটা লাটবাগানের বাসিন্দা সিআইটিইউ-এর সম্পাদকম‌ণ্ডলীর সদস্য গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বিজয় মিছিল যখন ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল সেই সময় কিছু উত্তেজিত যুবক তাঁর বাড়িতে হামলা চালায়। জানালার কাচ ভেঙে দেয় তারা। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এ দিনই চুঁচুড়ার পাঙ্কাটুলি এলাকায় রেল সেতুর নীচে কয়েকটি দোকানে, চন্দননগরের মাদ্রাজিবাগানের ধাড়া পাড়ায় সিপিএমের উত্তর আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সুশান্ত সিংহের বাড়ি এবং উত্তরপাড়ার বিবিএনসি সরণীতে বাম সমর্থক অরুণ ঘোষালের বাড়িতে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অরুণবাবুকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের জেলা সম্পাদক তপন দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘নিজের দলের বিক্ষুব্ধরাই এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’’ তথ্য: তাপস ঘোষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন