Kolkata

Bengal Polls 2021: এমন দিন আসবে, মানুষ শুধু নিজেকেই ভোট দেবে

ভোট একটা উৎসব বটে। যে উৎসবে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হয়। জিতলে কী হবে, না-জিতলে কী হবে— সেটা বড় কথা নয়। বড় কথাটা হল অংশগ্রহণ।

Advertisement

জয়রাজ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২১ ১৮:৩১
Share:

ভোট কি উৎসব?

দুর্গাপুজোর সময় কিছু মানুষ বেড়াতে চলে যান। তাঁরা নগণ্য। তাঁরা জানেন না, চাঁদুদা পুজোর সময়ে এগরোলের সাইজ সামান্য ছোট করে দেন। এতে ৫০-৬০ টাকা বেশি লাভ হয় চাঁদুদার। যে টাকাটা দিয়ে দশমির দিন চর্বির বড়া আর ‘সিক্সটি আপ বাংলা’ নিয়ে বসেন বালকসংঘ মাঠের পিছন দিকটায়। যাঁরা দুর্গাপুজোয় বেড়াতে চলে যান, তাঁদেরই মধ্যে কেউ কেউ ভোটও দেন না। এটা চাঁদুদা খেয়াল করেছেন। এই সব মানুষ ‘অধ্যাপক’ টাইপের। ‘অধ্যাপক’ একটা টাইপ। অনেক অধ্যাপক এই টাইপের মধ্যে পড়েন না। আবার অনেক কেরানি বেমালুম এই টাইপে ফিট হয়ে যান।
তবে ভোট একটা উৎসব বটে। যে উৎসবে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হয়। ভোট বয়কট করাও, ঘুরিয়ে অংশগ্রহণই হল। অলিম্পিকের মতো। জিতলে কী হবে, না-জিতলে কী হবে— সেটা বড় কথা নয়। বড় কথাটা হল অংশগ্রহণ। ইট, রেডিয়ো বা পাখা চিহ্নে দাঁড়িয়ে বছরের পর বছর এই খেলোয়াড়ি মনোভাবকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন কত শত অকুতোভয় মানুষ।
একটা গল্প বলা যাক। অমূল্যচরণের একান্নবর্তী পরিবার। সেখানে ৮৭ জন ভোটার। তারা সবাই ভরসা দিল অমূল্যচরণকেই ভোট দেবে। কিছু চাঁদাও দিল। কিন্তু ভোট গুনতে গিয়ে দেখা গেল, অমূল্য পেয়েছে ১৬টা ভোট। বাড়ির পুরনো বিশ্বস্ত মালি সদাশিবের দাবি, এই ১৬টা ভোটই তার দেশওয়ালি ভাই-বহিন-চাচা-চাচিরা দিয়েছে। অমূল্যচরণ ভীষণ চিন্তায় পড়লেন! তিনিও কি বুথে গিয়ে নিজের চিহ্ন ভুলে গেলেন! চিহ্ন ‘হাতপাখা’র কথা না হয় ভুলে গেলেন, নিজের নামটাও ভুলে যাওয়া সম্ভব? সদাশিবকে ডেকে পাঠিয়ে স্ত্রী যামিনীদেবীকে বললেন, টাকাপয়সা বুঝিয়ে বরখাস্ত করে দিতে। তারপর খেয়াল হল, আচ্ছা যামিনী কাকে ভোট দিয়েছে? আকাশি ঢাকাই জামদানি পরে একই সঙ্গে তো ভোট দিতে গিয়েছিল সাড়ে ১০টায়! হায় হায় হায়! আজ ৩২টা বছর বৃথা মনে হয় অমূল্যচরণের। টাকাপয়সা সদাশিবকে বুঝিয়ে দিয়ে বলেন, গোলাপ আর গাঁদা গাছ তুলে ফেলে কুমড়ো বিজ আর পুঁইশাক লাগিয়ে দিতে।

Advertisement

ভোট দিতে পছন্দ করেন বাঙালিরা?

সেদিন দেখলাম, বালিগঞ্জ কেন্দ্রের প্রার্থী জাভেদ খান মহাশয় গরুর গাড়ি চড়ে প্রচার করছেন। স্বাভাবিক। গঞ্জ এলাকায় খুবই স্বাভাবিক। এই যে নন্দীগ্রামে একজনও নন্দী পদবীর প্রার্থী নেই, এই তথ্য আমাকে খুবই বিহ্বল করেছে। বরং শ্রীমতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের টেলিফোন কলটি আশা জাগিয়েছে! একজন সৎ পিসিমা সুলভ আর্তি আছে তাতে। আমার মেজোপিসি পুজোতে দুটো নারকেল নাড়ু দিয়ে বলতেন, ‘‘চুপিচুপি খেয়ে নে, কেউ জানতে পারবে না, ভাগের চারটে তো আছেই, এ দুটো উপরি।’’ এই রকম নিরীহ উপরি ইনকাম ভোটের বাজারে বেশ হয় ক’দিন। শুধু সারা বছর যাঁদের উপরি আয় যথেষ্ট, কোনও কোনও সময় উপরি ইনকামই মূল মাইনের চেয়ে বেশি, তাঁদের এই ভোটের সময়ের দুর্দশায় চোখে জল আসে। সমস্ত পুলিশ ভাইজানরা খুবই নিপীড়নের শিকার হন ভোট ব্যবস্থায়। সমস্ত ছিঁচকে বাটপাররা এই সময় ক্ষণিকের রাজনীতিক হয়ে ওঠেন। মিনি মাগনায় তাঁদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হয় প্রশাসনকে। কারণ এঁদের মধ্যে থেকেই তো একজন নির্বাচিত হয়ে, আগামী ৫ বছর জনগণের নিরাপত্তার ঠেকা নেবেন!
আমরা বাংলার জনগণ ভোট খুব ভালবাসি। আরও ভালবাসি যারা ভোটে দাঁড়ান, তাঁদের। ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র। এখানে যে কোনও নাগরিক ভোটে দাঁড়াতে পারেন। আমার আশা, সেই দিন সমাগত প্রায়, যে দিন সকলেই ভোটে দাঁড়াবেন। সে দিন সকলেই নিজেকে ছাড়া কাউকে ভোট দেবেন না। ফলে ভোট বলে আর কিছু থাকবে না। শুধু ১৩০ কোটি সিম্বল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেই সমস্যা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন