Bengal Polls: পুর এলাকায় বাজিমাতেই ফুটল পদ্ম

বিধানসভা ভোটে জয় ও পুর এলাকায় এগিয়ে থাকার নিরিখে কাঁথি পুরসভা দখলে মরিয়া বিজেপিও।

Advertisement

কেশব মান্না

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০২১ ০৫:২৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

রাজ্য জুড়ে সবুজ ঝড়ের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬ আসনের মধ্যে ৯টিতে জিতলেও দক্ষিণ কাঁথি কেন্দ্র এবার হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। এই প্রথম সেখানে পদ্ম ফুটেছে। তৃণমূলের হার বা বিজেপির জয়ের পর্যালোচনায় যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের পিছনে কাঁথি পুরসভার ভূমিকাই সামনে এসেছে। দেখা গিয়েছে পুর এলাকায় বেশিরভাগ ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকাটাই বিজেরি প্রার্থীর জেতার পক্ষে গিয়েছে। পুর এলাকায় গেরুয়া শিবিরের এমন উত্থ্বানে মেয়াদের পরেও পুরসভার ভোট না হওয়া এবং পুর-পরিষেবা নিয়ে মানুষের অপ্রাপ্তিই কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Advertisement

রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন পুরসভায় মেয়াদ উত্তীর্ণের পরেও সেখানে ভোট না করে পুরপ্রশাসক বসিয়েছিল শাসক দল। যা নিয়ে বিরোধীরা বারবার সবর হয়েছে। নির্বাচনের দাবিও তুলেছে। কাঁথি পুরসভার পুর বোর্ডের মেয়াদ ফুরিয়েছে গত বছর জুন মাসে। আপাতত পুরসভার দায়িত্বে ছয় সদস্যের প্রশাসকমণ্ডলী। পানীয় জল থেকে নিকাশি নিয়ে অভিযোগ ছিল পুরবাসীর। বিধানসভার ভোটে জয়ে সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ দেখছে বিজেপি।

পুর এলাকায় অধিকাংশ ওয়ার্ডেই ‘লিড’ পেয়েছেন গেরুয়া প্রার্থী। কাঁথি পুরসভা দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভার অন্তর্গত। ওই কেন্দ্রে জয়ী বিজেপি প্রার্থী অরূপ দাস নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতির্ময় করের তুলনায় দশ হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। ২১ টি ওয়ার্ডের কাঁথি পুরসভা এবং কাঁথি-১ ও কাঁথি-৩ ব্লকের দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা এলাকা। এর মধ্যে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের ব্যবধান বাড়ার ক্ষেত্রে পুর এলাকার বাসিন্দারা অনেক বড় ভূমিকা নিয়েছেন। কাঁথি শহরের পূর্বাঞ্চলের ১, ৩, ৪, ৫, ১২ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল এগিয়ে ছিল। কিন্তু ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিলেন বিজেপি প্রার্থী।

Advertisement

লোকসভা এবং তার পরে বিধানসভার উপ-নির্বাচনের কাঁথি পুর এলাকায় দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছিল বিজেপি। সেসময় কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন সৌমেন্দু অধিকারী। পরে মেয়াদ উত্তীর্ণ পুরসভার প্রশাসক হয়েছিলেন সৌমেন্দু। তবে দাদা শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে প্রশাসক পদ থেকে সরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। এরপর সৌমেন্দুও বিজেপিতে যোগ দেন। সেই সঙ্গে বিদায়ী পুরবোর্ডের ১৬ জন কাউন্সিলরও বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন।

তবে, পুরসভার বেশিরভাগ ওয়ার্ডে বিজেপির এগিয়ে থাকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল। জেলায় ১৬ আসনের মধ্যে ৯টিতেই জয়ী হওয়ার পরে তাদের দাবি, মানুষ যে তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছেন বিধানসভায় তার প্রমাণ মিলেছে। তাই আগামী দিন পুর নির্বাচনেও তারাই পুরবোর্ড দখল করবে। দক্ষিণ কাঁথির পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী জ্যোতির্ময় কর বলেন, ‘‘এলাকার মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আমার যোগাযোগ ছিল না। তা ছাড়া আরও কিছুটা সময় পেলে ভাল ফল করতে পারতাম।’’

পরপর তিনবার কাঁথি পুরসভা বিরোধী শূন্য হিসেবে দখলে রেখেছিল তৃণমূল। নেপথ্যে ছিল ‘শান্তিকুঞ্জ’ তথা অধিকারী পরিবার। এখন সেই পরিবারের তিনজনই বিজেপি শিবিরে। এমন পরিস্থিতিতে কী ভাবে ক্ষমতা ধরে রাখা যাবে ? শহর তৃণমূল সভাপতি তথা পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক বলেন, ‘‘যে সব ওয়ার্ডে আমরা পিছিয়ে সেখানে ওয়ার্ড ভিত্তিক কর্মী বৈঠক করে এবং জনসংযোগ বাড়িয়ে ক্ষত মেরামতের চেষ্টা করছি।’’

বিধানসভা ভোটে জয় ও পুর এলাকায় এগিয়ে থাকার নিরিখে কাঁথি পুরসভা দখলে মরিয়া বিজেপিও। কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘বিজেপির সংগঠন এমনিতেই এখানে ভাল। তাই দলীয় প্রার্থী জিতেছে। পুরভোটেও সেই ধারা বজায় থাকবে।’’

এখন দেখার, রাজ্য সরকার পুর নির্বাচন করলে কাঁথি কোন ফুল ফোটে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন