Sitalkuchi

bengal polls: ১২৬ নম্বর বুথে কি ওয়েবকাস্ট হয়েছিল, ধন্দ

সেই ঘটনার পরে প্রায় ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ওই বুথে ওয়েবকাস্ট হয়েছিল কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৫৩
Share:

ফাইল চিত্র।

শীতলখুচির ১২৬ নম্বর বুথে ‘ওয়েবকাস্ট’ আদৌ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হল। সোমবার রাত পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও সদুত্তরও মিলল না নির্বাচন কমিশনের থেকে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরের বক্তব্য, এক-একটি বিধানসভার ন্যূনতম ৫০% অথবা সংবেদনশীল বুথের সংখ্যা— যেটা বেশি হবে সেই সংখ্যক বুথে ‘ওয়েবকাস্ট’ করতে হবে। অর্থাৎ, সেই বুথের ভোটপ্রক্রিয়ার লাইভ ছবি সরাসরি পৌঁছবে কমিশনের কন্ট্রোলরুমে।

Advertisement

১০ এপ্রিল চতুর্থ দফার ভোটে কোচবিহারের শীতলখুচির মাথাভাঙা থানা এলাকার ১২৬ নম্বর বুথে সিআইএসএফ-এর গুলিতে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেই ঘটনার পরে প্রায় ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও ওই বুথে ওয়েবকাস্ট হয়েছিল কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। ভোট বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ওয়েবকাস্ট হলে কমিশনের সার্ভারে ভিডিয়ো ফুটেজ থাকার কথা। তা রয়েছে কি না, তা-ও প্রশ্নের মুখে। যান্ত্রিক সমস্যার কারণে ওয়েবকাস্ট না হলেও ভিডিয়ো ফুটেজ রেকর্ড হয়ে থাকার কথা। আবার অভিযোগ উঠেছে, ওই বুথে ক্যামেরা ভাঙা ছিল। কিন্তু এ সব কিছু নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট বক্তব্য মিলছে না সিইও দফতরের থেকে। ভোট বিশেষজ্ঞরা আরও জানাচ্ছেন, সাধারণ ভাবে, ওয়েবকাস্ট না হলে সিসিটিভি অথবা ভিডিয়োগ্রাফ করা হয় সংবেদনশীল এলাকার কোনও বুথে। আবার আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বড় ঘটনায় রাজ্য পুলিশ বা কেন্দ্রীয় বাহিনী ভিডিয়ো তুলেছে কি না, তা-ও স্পষ্ট হয়নি সোমবার পর্যন্ত। যদিও জেলা প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, যাবতীয় সব কিছু কমিশনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কী কী পাঠানো হয়েছে, তা স্পষ্ট করেনি জেলা প্রশাসন।

এ দিন সিইও অফিসে গিয়ে শীতলখুচির ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। ফুটেজ না থাকার পিছনে কোনও চক্রান্ত কাজ করছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে দল। সিইও-কে দেওয়া চিঠিতে তৃণমূল জানিয়েছে, গত ১০ এপ্রিল নিরস্ত্র চার জন নাগরিককে ঠান্ডা মাথায় খুন করা ছাড়াও অনেককে আহত করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি নেতৃত্ব হিংসাকে আরও উস্কানি দেওয়ার পাশাপাশি প্রকৃত ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে চাইছে। তৃণমূলের অভিযোগ, গত রবিবার বরাহনগরের জনসভায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘সবাই দেখেছে শীতলখুচিতে কী হয়েছে। আরও বাড়াবাড়ি করলে জায়গায় জায়গায় শীতলকুচি হবে।’’ হাবড়ায় বিজেপির প্রার্থী রাহুল সিংহও প্রচারে মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘শীতলখুচিতে চার জনের বদলে আট জনকে মারা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনীর। কেন চার জনকে মারল, তার জন্য শো-কজ় করা উচিত।’’ তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু মন্তব্য করেছেন, ‘‘বেশি খেলা খেলতে যেও না, শীতলখুচির খেলা খেলে দেব।’’ এ ছাড়াও বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহের একটি টুইটকেও হাতিয়ার করেছে তৃণমূল। এ সবের ভিত্তিতে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, শীতলখুচির ঘটনা যে বিজেপির উস্কানিতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘটিয়েছে, তা প্রমাণিত। তার পরেও নির্বাচন কমিশন ‘নীরব দর্শক’ হয়ে রয়েছে। দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহ, সায়ন্তন বসু, অর্জুন সিংহ, সৌমিত্র খান, শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে হবে। ভোটের বাকি দফাগুলিতে সংশ্লিষ্টরা যেন প্রচারে থাকতে না পারেন, কমিশনের কাছে সেই দাবিও তুলেছে তৃণমূল।

Advertisement

শীতলখুচির যে বুথকে ঘিরে এই ঘটনা, সেই আমতলি মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রেই প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন এই শিক্ষক আব্দুল রহমান। ওই শিক্ষকের পাশাপাশি তাঁর গোটা পরিবারটাকেই যেন গ্রাস করে রেখেছে একটা আতঙ্ক। প্রশ্ন শুনেই ফোনের ওপাশ থেকে
তাঁর স্ত্রী সাজেদা বানু বলেন, “উনি ভাল আছেন। এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন। কথা বলতে পারবেন না। আমি নিজেও কোনও কথা বলতে পারব না। আর মাস খানেক পরই স্কুল থেকে অবসর নেবেন তিনি। এর আগে বহু বার ভোট পরিচালনার দায়িত্ব সামলেছেন। কিন্তু চাকরি জীবনের একেবারে শেষ লগ্নে এসে তাঁকে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে, কখনও ভাবেননি।” আব্দুল রহমানের সহকর্মী এক শিক্ষক বলেন, “বাড়িতে গিয়ে একটি ঘরে পরিবারের বাকিদের সঙ্গে আমরা কথা বলছিলাম। আর মাষ্টারমশাই তখন পাশের একটা ঘরে শুয়ে রয়েছেন। অনেক ক্ষণ পর একবার ঘর থেকে বেরিয়ে আমাদের কাছে এলেন ঠিকই, কিন্তু স্পষ্টতই বুঝলাম, তিনি কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। গোটা মুখটা জুড়ে রয়েছে আতঙ্কের ছাপ। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। সে ভাবেই কয়েক মুহূর্তের জন্য আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেই, আবার সেই ঘরে চলে গেলেন।”

এ দিনই বারাসতে গিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে এবং বিশেষ পর্যবেক্ষক অজয় নায়েক। ১৭ এপ্রিল পঞ্চম দফার ভোট হবে ৬ জেলার ৪৫টি আসনে। তার মধ্যে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ১৬টি আসন। সূত্রের দাবি, এই এলাকায় অতীতে ভোট-হিংসার ইতিহাস থাকায় কমিশন-কর্তাদের কাছে তা বাড়তি চ্যালেঞ্জ। ফলে নিরাপত্তার দিকটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বন্দোবস্তের পক্ষে সওয়াল করেছেন তাঁরা।
প্রশাসনিক মহলের ধারণা, শীতলখুচির ঘটনার পরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে যাতে আর প্রশ্ন না ওঠে, সেই দিকটিও নিশ্চিত
করতে চাইবেন বিবেক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন