West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: ট্রেনের টিকিটের টাকা দিত আগে নেতারা, এ বার বলার মুখ নেই

ভোট দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নিজের ও পরিবারের পেট বাঁচাতে ভিন্‌ রাজ্য পড়ে রয়েছেন। ভোটের সময় ফেরেননি।

Advertisement

দিলীপ নস্কর ও নবেন্দু ঘোষ

হিঙ্গলগঞ্জ ও ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৪৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

হিঙ্গলগঞ্জ ও ডায়মন্ড হারবার: লকডাউনে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তাঁরা। এলাকায় মন মতো কাজ না পেয়ে তাঁদের অনেকেই ফিরেছিলেন ভিন্‌ রাজ্যে কাজের জায়গায়। এ বার ভোট দিতে আসতে চাইছেন না তাঁদের অনেকেই। কারণ হিসাবে জানাচ্ছেন, আর্থিক অনিশ্চয়তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া, শীতলখুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার জেরেও মনে ভয় বাসা বেঁধেছে অনেকের।

Advertisement

সন্দেশখালি থানার মণিপুর গ্রামের সন্দীপ গায়েন থাকেন কেরলে। টেলিফোনে বললেন, ‘‘কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করি বহু বছর ধরে। লকডাউনের পরে খুব কষ্টে বাড়ি ফিরেছিলাম। গ্রামে কাজ পেলাম না, তাই দু’মাস হল আবার কেরল এসেছি। ভোটের আগে থেকেই গ্রামের রাজনৈতিক অবস্থা ভাল না। চাপা সন্ত্রাসের পরিবেশ। ভোটের দিন জানি না কী হবে। তাই এ বার ভোট দিতে আর বাড়ি যাব না। কোনও অশান্তিতে জড়াতে চাই না।’’ একই কথা জানালেন এই গ্রাম থেকে কয়েক দিন আগে কেরলে যাওয়া দীনেশ রায়, প্রদীপ মিস্ত্রি।

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের হেমনগর থানার বাসিন্দা কালীপদ মণ্ডল কয়েক মাস হল স্ত্রীকে নিয়ে তামিলনাড়ু গিয়েছেন পোশাক তৈরির কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতে। ভোটে বাড়ি আসবেন কিনা প্রশ্ন শুনে এক রাশ ক্ষোভ উগরে বললেন, ‘‘টিভিতে দেখলাম কয়েকজন মারা গিয়েছেন ভোটের দিন। আমরা কি গুলি খেতে যাব? অনেক কষ্ট করে তামিলনাড়ু থেকে বাড়ি ফিরেছিলাম লকডাউনের সময়ে। সাহায্য পাইনি কোনও সরকারের। গ্রামে ফিরেও কাজ জোটেনি। সংসার চালাতে ঋণের জালে জড়াই। বাধ্য হয়ে তামিলনাড়ু ফিরে এসেছি। গ্রামে গিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের পিছনে ঘুরে আর আক্রান্ত হয়ে লাভ কী! আমপান বা লকডাউনের সময়ে তো কোনও সুযোগ-সুবিধা পাইনি! এ বার তাই ভোট নিয়ে কোনও আগ্রহ নেই। তাই যাচ্ছি না গ্রামে।’’ হিঙ্গলগঞ্জের বহু মানুষ সে রাজ্যে আছেন বলে জানালেন কালীপদ। তাঁরাও বেশিরভাগ ভোট দিতে ফিরবেন না বলে জানালেন তিনি। কালীপদ আরও বলেন, ‘‘অন্যবার ভোটের সময়ে গ্রামের নেতারা বলে, ভোট দিতে আয়। যাতায়াত খরচও দিয়ে দেব। তবে এ বার কারও ডাকার মুখ নেই। কারণ, আমাদের দুঃখের দিনে কেউ তো পাশে দাঁড়ায়নি।’’ হাসনাবাদ থানার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা বিমান মণ্ডল, ভবতোষ মণ্ডল, বিশ্বজিৎ মণ্ডলরা কেরলে রেস্তরাঁয় কাজ করেন। জানালেন, এলাকায় কাজ না পেয়ে মাসখানেক হল কেরলে ফিরেছেন। এখন টাকা খরচ করে ভোট দিতে যাওয়ার আগ্রহ নেই। ভোটে যে ভাবে অশান্তি ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তা দেখেও ভোট দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানালেন বিমান, ভবতোষরা।

Advertisement

সাগরে ভোট মিটেছে আগেই। প্রথমবার ভোটার কার্ড পেয়েছিলেন শেখ সরিদুল। কিন্তু ভোট দেওয়া হল না তাঁর। আমপানে ভেঙে পড়া বাড়ি তৈরি করতে অনেক ধারদেনা হয়েছে। সেই টাকা মেটাতে হোটেলের কাজ নিয়ে গুজরাতে গিয়েছেন। তাঁর বাবা শেখ সামাদ বলেন, ‘‘সরকারি ক্ষতিপূরণ পাইনি। ঘর ঠিক করতে অনেক দেনা হয়ে গিয়েছে। ছেলে কাজ করতে বাইরে গিয়েছে। ভোট দিতে আসেনি।’’

সাগর ব্লকের ধবলাট শিবপুর পঞ্চায়েত এলাকা থেকে অনেকেই ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করেন। ২০১৬ সাল ও তার পরবর্তী ভোটগুলিতে দলে দলে বাড়ি ফিরে আসতেন তাঁরা। ভোট দেওয়ার আগ্রহ ছিল এমনই। কিন্ত গত বছর আমপানে এলাকার প্রচুর মাটির ভেঙেছে। অনেকে সরকারি ক্ষতিপূরণ পাননি বলে জানালেন। বাড়ি সারাতে ধারদেনা করেছেন অনেকে। তারপর থেকে প্রায় ২০০ জন যুবক গুজরাত ও কেরলে পাড়ি দিয়েছেন। অনেকে পরিবারের সব সদস্যকে নিয়েই চলে গিয়েছেন ভিন্‌ রাজ্যে।

গ্রামের বাসিন্দা শেখ মইদুল, শেখ কাজিরুলদের অভিযোগ, ‘‘আমপানে আমরা সর্বস্বান্ত হয়েছি। এলাকায় কোনও কাজ নেই। কী খেয়ে বাঁচব, সেটাই এখন চিন্তা। তাই বাধ্য হয়ে ভিন্‌ রাজ্যে কাজের সন্ধানে যেতে হয়েছে। ভোট নিয়ে আমাদের কোনও আগ্রহ নেই।’’ ভিন্‌ রাজ্য থেকে শেখ সরিদুল, শেখ হোসেনেরা ফোনে জানালেন, আমপানে ঘরবাড়ি সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। কোনও রোজগার ছিল না। ভোট দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও নিজের ও পরিবারের পেট বাঁচাতে ভিন্‌ রাজ্য পড়ে রয়েছেন। ভোটের সময় ফেরেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন