West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls : ‘সবাই চেনেন’, এই ভরসায় নিরুদ্বেগ সুব্রত

বালিগঞ্জ কেন্দ্রে এ বার তা হলে অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যের লড়াই?

Advertisement

সুনীতা কোলে

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১১
Share:

সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ফুয়াদ হালিম এবং লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়।

প্রচারে বেরিয়েছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। একটি বহুতলে আবাসিকদের সঙ্গে ঘরোয়া বৈঠকে কথাবার্তার ফাঁকে এক জন জানতে চাইলেন, তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি কাকে প্রার্থী করেছে। উত্তর এল, ‘‘একটি নতুন ছেলে। আপনারা চিনবেন না।’’ বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে এ বার বিজেপি প্রার্থী করেছে আইনজীবী
লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়কে।

Advertisement

এই কেন্দ্রেই সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম। তাঁর সম্পর্কে সুব্রতর মন্তব্য, ‘‘ফুয়াদকে চিনি। আমার দীর্ঘ বিধায়ক জীবনের অনেকটা সময়ে ওঁর বাবা হাসিম আব্দুল হালিম স্পিকার ছিলেন। ভাল সম্পর্ক ছিল। স্নেহ করতেন আমায়।’’

এই হলেন বালিগঞ্জ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁকে ঘিরে রাজ্য-রাজনীতি নানা ভাবে আবর্তিত হয়েছে। তাঁর বিবিধ রাজনৈতিক পদক্ষেপ রাজ্যের গণ্ডী ছাড়িয়েও হয়ে উঠেছে আলোচনার বিষয়। এমন এক বর্ণময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যখন ভোটে প্রার্থী হন, তাঁর ওজন এবং ছায়া তখন অনেকটাই ভারী বলে মনে হয়। বালিগঞ্জ এ বারও তার ব্যতিক্রম নয়।

Advertisement

সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কথা উল্লেখ করে করোনা পরিস্থিতিতে তাঁর সুস্থতা কামনা করেছেন ফুয়াদ। লোকনাথবাবুর আবার দাবি, ‘‘ওঁর বয়স হয়েছে। আগামী ১০-১৫ বছর কাজ করতে পারবেন এমন তরুণ, দায়িত্বশীল মুখ খুঁজছেন এলাকার মানুষ।’’ এমন দাবির মুখে তৃণমূল প্রার্থীর জবাব, ‘‘আমি এত দিন কী করেছি, আগামী দিনে কী করতে পারি— সেটা তো এলাকার মানুষ জানেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বললেই বিষয়টা ভাল বোঝা যাবে।’’

বালিগঞ্জ কেন্দ্রে কি এ বার তা হলে অভিজ্ঞতা বনাম তারুণ্যের লড়াই?

সুব্রত বললেন, ‘‘এই কেন্দ্রের সঙ্গে আমার সামাজিক, রাজনৈতিক সম্পর্ক বহু দিনের। এলাকার সঙ্গে আমার আবেগ জড়িয়ে। প্রচারে বেরিয়ে কিছু বলতে হয় না। মানুষের সঙ্গে গিয়ে শুধু দেখা করি। বলি, ‘একটু দেখবেন’। তাতেই হয়। আগেও দেখেছি, এ বারও মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। আর যেখানে একান্তই কিছু বলার দরকার হচ্ছে, সেখানে কেন্দ্রের অসহযোগিতা, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির কথা বলছি।’’ প্রচারেও তাঁর এই কথার প্রতিধ্বনি মিলল। তাঁর ‘একটু দেখবেন’ অনুরোধের উত্তরে জবাব এল— ‘দাদা, আমরা তো আপনাকেই চিনি’।

গত দু’টি বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকে জিতেছেন সুব্রত। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে যেখানে বিধানসভা ক্ষেত্রের নিরিখে বেশ কিছু কেন্দ্রে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছিল, সেই পরিস্থিতিতেও বালিগঞ্জে ৫৪ হাজারের বেশি ব্যবধানে এগিয়ে ছিল তৃণমূলই।

তবে সিপিএম প্রার্থী ফুয়াদ বলছেন, ‘‘বালিগঞ্জের মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে ভোট দিয়েছিলেন, তা পূরণ হয়নি। এলাকার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্কুলগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়ন হয়নি। জল, নিকাশির সমস্যা রয়েছে কিছু জায়গায়। বস্তি উন্নয়নের দিকটিও অবহেলিত।’’ এ ছাড়া, ফুয়াদ প্রচারে তুলে আনছেন যুবসমাজের জন্য চাকরির অভাব, মূল্যবৃদ্ধির মতো আলোচিত বিষয়গুলি। তাঁর দলের পক্ষ থেকে পেট্রল-ডিজেলের দামের ক্ষেত্রে রাজ্যের করের অংশ কমিয়ে দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ভর্তুকি দিয়ে পরিবারপিছু ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ দেওয়ার কথাও প্রচারে তুলে আনছেন ফুয়াদ। বলছেন, ‘‘বর্তমান সরকার মানুষের জন্য সক্রিয় ভাবে কাজ করেনি। আর অন্য দল বাংলার সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিপন্থী। তারা সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করার চেষ্টা করছে।’’ গত কয়েক বছর ধরে সিপিএমের তরুণ মুখ হিসেবে তো বটেই, চিকিৎসক হিসেবে নানা সামাজিক কাজের জন্যও পরিচিতি বেড়েছে ফুয়াদের। এই পরিচিতির প্রতিফলন কি ভোটে পড়বে? ফুয়াদ বলেন, ‘‘মানুষের জন্য যা করি, তা আমার রাজনৈতিক দর্শনেরই প্রতিফলন। আমার ব্যক্তি পরিচয় রাজনৈতিক পরিচয়ের থেকে খুব আলাদা নয়।’’

বালিগঞ্জের বস্তি এলাকার কথা প্রচারে তুলে আনছেন বিজেপি প্রার্থী লোকনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ আগেই বামেদের প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ বার নিশ্চিত ভাবে তৃণমূলকেও করবেন। বালিগঞ্জ মানে শুধুই অভিজাত আবাসন নয়। এলাকার বেশ কিছু অংশে নিকাশি, বিদ্যুৎ, পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। দুর্নীতি নিয়েও সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ। তাই সবাই বিজেপিকে চাইছেন। মুসলিম জনসংখ্যার মধ্যে অনুন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ বেশি। তাঁদের মধ্যে মহিলাদের থেকে খুব সাড়া পাচ্ছি। আবার অভিজাত এলাকাতেও শান্তিভঙ্গের অভিযোগ পাচ্ছি।’’ প্রচারে নিকাশি বা পানীয় জল সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে সুব্রতর বক্তব্য, ‘‘আমি যত দূর জানি, এই রকম
সমস্যা নেই। দু’-একটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে সমস্যা হতে পারে। সেগুলো
দেখা হবে।’’

বিদায়ী বিধায়কের দিকে কে বেশি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন? সুব্রত বলেন, ‘‘বামেদের ভোট কমে গিয়েছে। আর বিজেপির প্রার্থী রাজনীতিতে নতুন। ওঁকে মানুষের কাছে যেতে হবে, আন্দোলন করতে হবে। এত সহজে সব বোঝা যায় না। তবে একটা-দুটো ওয়ার্ডে হয়তো কিছু সুবিধা পাবেন উনি।’’

তিন প্রার্থীকে নিয়ে কী বলছেন এলাকার মানুষ? রাইফেল রেঞ্জ রোডে গাড়ি সারাইয়ের একটি দোকানের এক কর্মচারী নিতাই দাস জানালেন, লকডাউনে পেট চালাতে অসুবিধা হয়নি। তাই ভোট দেবেন ক্ষমতায় থাকা দলকেই। ওই এলাকারই বাসিন্দা শাম মহম্মদ বললেন, ‘‘এখানে মানুষ দিদিকে দেখে ভোট দিয়েছেন। এখনও দিদির টাইমই চলছে। এর পরে সিপিএম আবার বেশি ভোট পেলেও পেতে পারে। তবে এখনই নয়।’’ বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে ক্ষমতায় থাকা দলের পাল্লা ভারী হওয়ার কথা বললেন মল্লিকবাজার এলাকার এক বস্ত্র ব্যবসায়ী শাহনওয়াজ লস্করও। সন্ধ্যায় ধূপ জ্বালতে জ্বালতে আবার একটি টায়ারের দোকানের মালিকের বক্তব্য, ‘‘এখানে অনেক কাজ বাকি। তাই ব্যবসায়ীদের অনেকে অন্য দিকে ঝুঁকছেন। বিজেপির ভোট বাড়বে।’’

এর মধ্যেই ফুয়াদের পথসভার জন্য মঞ্চ বাঁধার কাজের তদারকি করতে করতে প্রবীণ এক বাম সমর্থক বললেন, ‘‘প্রচারে সাড়া পাচ্ছি আমরা। নিজেদের ভোটটা অন্তত এ বার নিজেদের দলে ফেরার আশা রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন