Kanchan Mallick

Bengal Polls: ভরসা বুথে চরকিপাকের ‘কাঞ্চন-মূল্যেই’

উত্তরপাড়া কেন্দ্রে শনিবার ভোটযুদ্ধের ফাইনাল পরীক্ষায় তারকা-প্রার্থীর এই অফুরান দৌড়ই তাতে প্রলেপ দিয়ে গিয়েছে।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪৮
Share:

ফ্রেমবন্দি: উত্তরপাড়ার একটি বুথের সামনে ভোটারদের সঙ্গে নিজস্বী তুলতে ব্যস্ত তৃণমূল প্রার্থী কাঞ্চন মল্লিক। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

খেলা শেষের ইনজুরি টাইমেও দমে ঘাটতি নেই। দলের কর্মী দাদা, বৌদি, ভাইপো, ভাইঝি, কাকু, মাসিমাদের সামলে হনহনিয়ে হাঁটছেন তিনি। মফস্সলি গলিতে সন্ধে নামছে। উত্তরপাড়া কোতরংপুর এলাকার পারমার উচ্চ বিদ্যালয়ের বুথে তাঁকে দেখেই বিগলিত বিজেপির পোলিং এজেন্ট পারমিতা মণ্ডল। কাঞ্চন মল্লিক তাঁর বাড়ানো হাতটা ধরতে যেন জীবন ধন্য হল।

Advertisement

উত্তরপাড়া কেন্দ্রে শাসক দলের অন্দরে নানা চোরাস্রোতের কানাকানি বাতাসে। শনিবার ভোটযুদ্ধের ফাইনাল পরীক্ষায় তারকা-প্রার্থীর এই অফুরান দৌড়ই তাতে প্রলেপ দিয়ে গিয়েছে। ‘মেলাবেন তিনি মেলাবেন’ ভঙ্গিতে দলের আপাত যুযুধান কোণগুলোও কাঞ্চন মিলিয়ে দিয়েছেন। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জুনিয়র অর্ককুমার নাগ সারাক্ষণ অফিসে বসে প্রার্থীর সাজঘরের দায়িত্বে। আবার দলের হুগলি জেলার কোঅর্ডিনেটর দিলীপ যাদবের দাদা অচ্ছেলাল যাদবের ছেলেদের বাইক-বাহিনী দরকারে হাল্কা ঘুরপাক খেয়েছে। কাঞ্চন হাসেন, “থিয়েটারের কুমার রায় এটা শিখিয়েছিলেন। নতুন কিছু শিখতে হলে একেবারে মূর্খ হয়ে শিখতে হবে। এই ভাল ব্যবহারটুকুর জন্যই সবার সাহায্য পেয়েছি।”

তৃণমূল ছেড়ে সদ্য বিজেপি-ভুক্ত প্রবীর ঘোষাল অবশ্য এ দিনও বলেছেন, “তৃণমূলের কিছু কিছু মুখ রাস্তায় বেরোলেই আমার ভোট বাড়বে!” আবার দলের নতুন মুখ কাঞ্চনের প্রতি ভালবাসায় শাসকপক্ষের কোনও কোনও প্রবীণ নেতা বুঝিয়েছেন, আমি দলের ভালর জন্যই ভোটের দিন তোমার কাছাকাছি থাকব না! কাঞ্চন একান্তে শোনান, ‘‘উফ, এত জন কাউন্সিলরের মানভঞ্জন! এর থেকে বৌকে ম্যানেজ করা সোজা!’’ তারকা-প্রার্থী যেন ভোটের দিনেও ‘পহেলে দর্শনধারী’! কোন্নগরের ডিওয়াল্ডি মোড়ের অনাড়ম্বর পার্টি অফিসে কাঞ্চন একটু জিরোতেই তাঁর দলের ভোটকুশলীরা কোথাও না কোথাও ঠেলছেন। কাঞ্চন লক্ষ্মী ছেলের মতো সবার সঙ্গে প্যাকেটের বিরিয়ানি খেতে খেতে কথা শুনছেন! “শোনো, দরকারে বাইকে উঠেও গলিতে মারোয়াড়িদের এলাকায় কিন্তু যাবেই। ভদ্রকালী মহিলা ক্যাম্পে উদ্বাস্তু ও মতুয়া ভোটারদেরও এক বার চোখের দেখা দিতেই হবে।”

Advertisement

কাঞ্চন মুচকি হাসেন, “কোনও চিন্তা নেই! ওই মারোয়াড়িদের সঙ্গে বসে আমি কত ভজন আর ‘জয় শ্রী শাম’ সেরেছি।” কানাইপুর, নবগ্রামের স্কুলে স্কুলে তাঁকে দেখে চরম নিজস্বী-হিড়িক। ভোটারের চোখেমুখে পরিতৃপ্তি। লাইনে দাঁড়িয়েই বৃদ্ধা ভোটার বলে ওঠেন, “আগের থেকে একটু মোটা হয়েছে! কী শান্ত ভদ্র ছেলে!”

প্রবীরের ঠিক উল্টো স্ট্র্যাটেজি। কোন্নগরের অফিসের এসি-তে এলিয়ে প্রাক্তন সাংবাদিক শোনাচ্ছেন, “আমি ভোট করাটা সুব্রতদা (মুখোপাধ্যায়), মান্নানদার (আব্দুল মান্নান) থেকে শিখেছি। মমতাদি (বন্দ্যোপাধ্যায়) বেরোলেও তাঁকে উত্ত্যক্ত করতে সিপিএম গোলমাল পাকাত। পিসফুল ভোটে প্রার্থীকে খামোখা বেরোতে নেই।” বিকেলে অবশ্য তাঁকেও কোন্নগরের বুথে ঘুরতে দেখা গেল। ৮০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছে। খুচখাচ অভিযোগ ছাড়া সবই নিস্তরঙ্গ। তারকা-প্রার্থীর সরস উপস্থিতি ও ছোটাছুটিই তবু ভোট-আসর মাতিয়ে রাখল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন