Nandigram

Bengal Polls: নন্দীগ্রাম যেন অযোধ্যা, আন্দোলন-ভূমে জমাট ‘মন্দির রাজনীতি’, অর্ঘ্যে পদ্মের সঙ্গে জোড়াফুল

সরযূ নদীর তীরে অযোধ্যা নগরীতে হাজার হাজার মন্দিরের কথা সকলের জানা। কিন্তু হলদি এবং হুগলি নদীর মাঝে নন্দীগ্রামেও যে এত মন্দির রয়েছে, তা জানিয়ে দিল এই বিধানসভা নির্বাচন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২১ ১০:৪৯
Share:

মমতা এবং শুভেন্দু।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহত হওয়ার পর এখন গোটা দেশের নজরে নন্দীগ্রাম। বুধবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার থেকে নন্দীগ্রাম অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত নন্দীগ্রামে যে রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ দেখা যাচ্ছিল, তাতে ‘আন্দোলন ভূমি’ হিসেবে পরিচিত নন্দীগ্রামকে মনে হচ্ছিল মন্দিরনগরী অযোধ্যা। সরযূ নদীর তীরে অযোধ্যা নগরীতে হাজার হাজার মন্দিরের কথা সকলের জানা। কিন্তু হলদি এবং হুগলি নদীর মাঝে নন্দীগ্রামেও যে এত মন্দির রয়েছে, তা জানিয়ে দিল এই বিধানসভা নির্বাচন। যে নন্দীগ্রাম একদিন গুলি-গোলা-বোমার শব্দে তপ্ত হয়েছিল, সেখানে ক্ষণে ক্ষণে শোনা যাচ্ছিল ঘণ্টাধ্বনি। ধূপ-ধুনোর গন্ধে পুজোর আবহ।

Advertisement

বুধবার নন্দীগ্রাম আসনের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে হলদিয়ায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। কিন্তু তার আগে ও পরে একের পর এক মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছেন তিনি। মমতার মঙ্গল ও বুধবারের মন্দির-সফর চলার কথা ছিল বৃহস্পতিবারও। আহত না হলে বৃহস্পতিবার শিব চতুর্দশীতে নন্দীগ্রামের একটি মন্দিরে শিবলিঙ্গের মাথায় জল ঢালার কথা ছিল তাঁর। বুধবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগে নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ার শিব মন্দিরে পুজো দিয়েছিলেন মমতা। ওই মন্দিরের কাছেই ভোটের জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ওই মন্দিরেই শিবরাত্রির ব্রত পালন করার কথা ছিল তাঁর। আবার সেই একই মন্দিরের উপর তাঁর অধিকারের দাবিও তুলেছেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেছেন, ‘‘ওই মন্দির আমি সংস্কার করেছি। ওই মন্দির আমার হাতে গড়া।’’ লড়াই এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, বৃহস্পতিবার মমতার যেখানে শিবকে অর্ঘ্য দেওয়ার কথা ছিল, সেই মন্দিরেই পুজো ও মেলার উদ্বোধন করার কথা ছিল শুভেন্দুরও।

মঙ্গলবার বিকেল থেকে নন্দীগ্রামে ছিলেন মমতা। ওই সময়ের মধ্যে মনোনয়ন জমা দেওয়া ছাড়া তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি বলতে ছিল নন্দীগ্রামের স্টেট ব্যাঙ্কের পাশের মাঠে কর্মিসভা এবং রেয়াপাড়ায় একটি পথসভা। বাকি সময়ের বেশিরভাগটাই ছিল মন্দির থেকে মন্দিরে দর্শন। মঙ্গলবার কর্মিসভা শেষ করেই মমতা গিয়েছিলেন সোনাচূড়ার গাংড়ায় বাসুলি মায়ের মন্দিরে। সেখান থেকে গোকুলনগর শহীদ বেদীতে মালা দেন। তারপর তেখালির চণ্ডীমাতার মন্দির। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ১০ নভেম্বরের শহিদ বেদী করপল্লিতে মালা দেন। তার পর আবার পারুলবাড়ি মন্দির। সেই মন্দির ছেড়ে বেরিয়েই ছোটেন সামসাবাদ পীরের থানে। সেখান থেকে থানা মোড়ে দোকানে চা খান। নিজের হাতে চা বানিয়ে পরিবেশনও করেন। এরপর নন্দীগ্রাম সদরে জানকীনাথ মন্দিরে পুজো দেন। যেখানে বুধবার দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করেছেন শুভেন্দু।

Advertisement

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

আহত হওয়ার আগে পর্যন্ত বুধবারও মন্দির দর্শনে বিরাম ছিল না তৃণমূল নেত্রীর। বেলা ১২টা নাগাদ তিনি সাময়িক বাসস্থান ছেড়ে বেরিয়েই রাস্তার উল্টোদিকে রেয়াপাড়া শিবমন্দিরে পুজো দিতে যান। রেয়াপাড়া থেকে বেরিয়ে হেলিকপ্টারে হলদিয়ায় মহকুমা শাসকের দফতরের মনোনয়ন জমা দিয়ে আবার নন্দীগ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন মমতা। ফের শুরু করেছিলেন মন্দির দর্শন। নন্দীগ্রামের শিবরামপুর কালীমন্দিরে পুজো দেওয়ার পর তিনি চলে গিয়েছিলেন চালমারি মন্দিরে। তার পর আমদাবাদ মন্দির। নন্দীগ্রামে এমন কোনও মন্দির নেই, যেখানে তিনি ভগবান দর্শনে যাননি।

পিছিয়ে নেই শুভেন্দুও। প্রতিনিয়ত তিনি ধর্মের খোঁচা দিয়ে প্রতিপক্ষকে কাবু করার চেষ্টা করছেন। বুধবার শুভেন্দু তাঁর নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করেছেন জানকী মন্দিরের পাশের হনুমান জিউর মূর্তিতে মালা পরিয়ে। এরপর ফিতে কেটে নারকেল ফাটিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ। শুভেন্দুর অনুগামী বিজেপি নেতা পবিত্র কর জানিয়েছেন, পঞ্জিকা দেখে নির্ধারিত সময় ১০টা ১৫ মিনিটে যজ্ঞ শুরু হয়। এর পর ধর্মীয় রীতিনিতি মেনেই হয় ‘পার্টি অফিস প্রবেশ’। শুভেন্দু আবার জনসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, বৃহস্পতিবার তিনি নন্দীগ্রামের রেয়াপাড়ার শিব মন্দিরের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মন্দিরে পুজোর উদ্বোধন করবেন। সব মিলিয়ে জমজমাট হয়ে উঠেছিল আন্দোলন ভূমের ‘মন্দির রাজনীতি’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন