West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls: নাগরিকত্ব না ধর্ম, দখল নেবে কে

শিক্ষা-সংস্কৃতির সাবেক বাম গড়ে এবার শাসকের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি। কিন্তু বামেরা সেই চেষ্টা বানচাল করতে কতটা ভূমিকা নিতে পারবে, তার উপরই নির্ভর করছে হিলি-বালুরঘাটের নতুন দিশা।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৯:১০
Share:

ছবি প্রতীকী পিটিআই

‘‘ওপারের মানুষ গো আমরা। ’৭১ এ চলি এলাম। লকডা‌উন ব্যবসা খাইল। তার উপর বিএসএফের অত্যাচার। ভোট থাকা, না থাকা সমান।’’

Advertisement

সূর্য ঢলেছে খানিক আগে। টিন-দরমার ছাউনিতে টিমটিমে আলোয় গায়ের ঘাম শুকোতে বসে বলছিলেন হিলির দোকান কর্মচারি অসিত মণ্ডল। সীমান্তে মানুষের দুর্দশার দিন শেষ হয়ে আসছে? নতুন রাস্তা খুলবে? অবাক হয়ে দৃষ্টি ভাসালেন ওই শ্রমিক। আর কয়েকদিন হাতে। সপ্তম দফা ভোটের আগে প্রশ্নের ঘুরপাক। প্রতিবাদী সংস্কৃতির ধারায় পালিত নাট্যশহর বালুরঘাটের দখল কার হাতে থাকবে? সীমান্তবর্তী বালুরঘাটে ওপার থেকে আসা মানুষের নাগরিকত্ব আরও সুরক্ষিত হওয়ার দাবির উল্টো দিকে কেউ অসমের দিকে আঙুল দেখাচ্ছেন। বামেদের ভোট বামে ফিরবে কি না সেই প্রশ্নই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শিক্ষা-সংস্কৃতির সাবেক বাম গড়ে এবার শাসকের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে বিজেপি। কিন্তু বামেরা সেই চেষ্টা বানচাল করতে কতটা ভূমিকা নিতে পারবে, তার উপরই নির্ভর করছে হিলি-বালুরঘাটের নতুন দিশা। শিক্ষা সংস্কৃতির গড়ে বিজেপির প্রার্থী অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়ী। শিক্ষিত বাঙালির সঙ্গে তাঁর ভাবর্মূতি মিলেমিশে গেলেও ‘ভূমিপুত্র’ তত্ত্বে তাঁকে বেগ দিয়েছে তৃণমূল-বামেরা।

Advertisement

প্রার্থীর নিজের দাবি, তিনি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। প্রতি মাসেই আসবেন। তাঁর অভিযোগ, এরমধ্যে তাঁরই একটি বক্তব্যের অংশ তুলে প্রচার হয়েছে, তিনি এখানে থাকছেন না বলে। অশোক বলেন, ‘‘হিলি-তুরা করিডর করতে হবে। সবাইকে সরকারি চাকরি দেওয়া না গেলেও কৃষি-ভিত্তিক শিল্প তো করাই যেত। কিন্তু তার বদলে দু’তিন হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে। তাও শুনতে পাই, ঘুষ নিয়ে।’’ বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী প্রচারে এসে হিন্দুত্বের কড়া ডোজে ভোট মেরুকরণের রসদ উস্কে দিয়েছেন। হিন্দুত্বের লাইনেও প্রচার হচ্ছে হিলি-বালুরঘাটের অলিগলিতে।

আরএসপি প্রার্থীই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী, দাবি বিজেপির। গতবারের জেতা প্রার্থী তথা প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরীর বদলে এবার দলের প্রাক্তন পুর চেয়ারম্যান সুচেতা বিশ্বাস সংযুক্ত মোর্চার সমর্থনে এই কেন্দ্রে প্রার্থী। কিন্তু তাঁকে নিয়ে নাকি বামেদের শরিকি পরিবারের অন্দরে নানা আপত্তির কথা শোনা যাচ্ছে। প্রচার সংগঠিতভাবেই করছে সিপিএমও। কিন্তু বিশ্বনাথবাবুর সেই ক্যারিশমা কি সুচেতা দেখাতে পারবেন? প্রার্থীর নিজের দাবি, তিনি বহিরাগত বা দু’দিন হল দলে যোগ দেওয়া নন। পুরসভা চালানোর অভিজ্ঞতা এবং পরিচিতির সূত্রেই তিনি ভোট চাইছেন। প্রচারে আক্রমণ করছেন বিজেপির সাম্প্রদায়িক বিভাজনের নীতিকে। কিন্তু নিচু তলায় মেরুকরণের স্রোত কী দিয়ে আটকাবেন? সুচেতা বলেন, ‘‘শিক্ষিত মানুষ কেন হিন্দুত্বের আরক গিলবে? তা ছাড়ও কাটমানি সংস্কৃতি বন্ধের দাবি উঠছে। যুবকরা স্কুল সার্ভিসে স্বচ্ছ নিয়োগ চায়।’’

ভোট ঘোষণার আগের দিন কংগ্রেস থেকে পদত্যাগ করিয়ে শেখর দাশগুপ্তকে শাসক দলে আনা হয়। সরকারি কাজের সাফল্যের বাইরে এই কেন্দ্রে তৃণমূলের দ্বিতীয় অস্ত্র শেখরবাবুর ভাবর্মূতি। নির্ঝঞ্জাট মানুষকে নিয়ে বিবাদ নেই ঠিকই, কিন্তু প্রার্থী ঘোষণার পর কিছু নেতাদের বিদ্রোহ দেখেছে বালুরঘাট। সেই ড্যামেজ কি আদৌ নিয়ন্ত্রণে এসেছে? উত্তর এড়ালেন প্রার্থী। ডবল ইঞ্জিনে সোনার বাংলা প্রসঙ্গে শেখর বলেন, ‘‘একটা ইঞ্জিন না চললে ডবল ইঞ্জিন ট্রেনে লাগে। তাহলে বিজেপি ধরেই নিচ্ছে, বাংলার ইঞ্জিনে রাজ্য চলবে না, দিল্লি থেকে চালাতে হবে।’’ তাঁর দাবি, অন্যান্য রাজ্যেও ক্ষমতায় এসে বিজেপি সোনার ডিম পাড়েনি। অসমে এনআরসি থেকে বহু বাঙালি বাদ পড়েছে। এবার কি বালুরঘাটের মানুষকেও সে দিকেই নিয়ে যেতে চাইছে ওরা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন