Gas Cylinder

Bengal Polls: জিনিসপত্রের দাম কমুক, ভোটের মুখে চাইছেন বধূরা

আসানসোলের বিভিন্ন এলাকার গৃহবধূদের সঙ্গে কথা বলে এমন বিভিন্ন মন্তব্য উঠে এল।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩৬
Share:

প্রতীকী ছবি। —নিজস্ব চিত্র

ঘিঞ্জি গলিপথ। গায়ে-গায়ে টালির চালের বাড়ি। কয়েকটি বাচ্চা মার্বেল নিয়ে খেলতে ব্যস্ত। একটি বাড়িতে কড়া নাড়তেই বেরিয়ে এলেন আসানসোলের ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডামরা আদিবাসীপাড়ার আশা টুডু। কিন্তু পরক্ষণেই আগন্তুকের প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘‘ভোট দেব। কিন্তু যা চলছে, তাতে আর ক’দিন পরে ঘরে হাঁড়ি চড়াতে পারব না।’’

Advertisement

আসানসোলের বিভিন্ন এলাকার গৃহবধূদের সঙ্গে কথা বলে এমন বিভিন্ন মন্তব্য উঠে এল। তাঁদের কথায় মূলত, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, বাড়ির জন্য পানীয় জলের সমস্যা, পরিবারের রোজগার কমে যাওয়া, এমন নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।

আশাদেবী জানান, বছর দেড়েক আগেও কাঠ বা কাঁচা কয়লার উনুনে রান্না করেছেন। ধোঁয়ায় কষ্ট পেয়েছেন। কেন্দ্র সরকারের ‘উজ্জ্বলা যোজনা’য় গ্যাসের আভেন-সিলিন্ডার পেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি মাসে গ্যাসের দাম বাড়ছে। তাই ভাবছি, উনুনই ভরসা।’’ তিনি জানান, তাঁর স্বামী পেশায় দিনমজুর। বাড়িতে তিন সন্তান। ন’শো টাকা ছুঁই-ছুঁই দরে সিলিন্ডার কেনা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়।

Advertisement

আসানসোলের রেলপাড়ের চাপারিয়া মহল্লার একটি প্রান্তিক পরিবার। সেখানের বাসিন্দা রোশনারা বিবি সবে রোজা ভেঙে স্বামী-সন্তানদের নিয়ে খেতে বসেছিলেন। তিনি জানান, ভোট দেবেন। তবে ‘স্বেচ্ছায় নয়’! তাঁর দাবি, ‘‘প্রতি ভোটের আগেই ওরা বলে যায়, ভোট না দিলে রেশন বন্ধ করে দেবে। রেশন না পেলে আমাদের চলবে কী করে?’’ ‘ওরা’ কারা, তা অবশ্য ভাঙেননি রোশনারা। পাশাপাশি, তিনি বলেন, ‘‘গত দু’বছরে সামান্য জলও পেলাম না। স্বামী জিনিসপত্র ফেরি করেন দিনভর।’’ এমন একটি পরিবারকে প্রতি দিন ৫০ টাকায় ছ’টি ‘তেলের টিনে’ ১৫০ লিটার জল কিনে
যাবতীয় কাজ সারতে হয়।

শিল্পাঞ্চলের শিল্প-পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সবাই সরব হয়েছেন। কিন্তু বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের বাড়িতে কী ভাবে হাঁড়ি চড়ছে, সে খোঁজ কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারাই তেমন নেন না বলে অভিযোগ স্বপ্না সেনগুপ্তের। তাঁর স্বামী বার্নপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা বার্ন স্ট্যান্ডার্ডে কাজ করতেন। কারখানা বন্ধের পরে স্বামী বেসরকারি সংস্থায় অল্প মাইনেতে চাকরি করেন। কারখানার আবাসন ছেড়ে উঠতে হয়েছে ভাড়াবাড়িতে। স্বপ্নাদেবী বলেন, ‘‘পরিবারের আয় কমেছে। অথচ, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। পাঁচ বছর আগেও পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। জানি না, কী করে চলবে আগামী দিনে।’’ ভোট দেবেন বাজারে জিনিসপত্রের দাম-বদলের আশা নিয়েই, জানান
ওই মহিলা।

এই পরিস্থিতিতে রয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও। তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও মানুষকে শান্তিতে থাকতে দিতে পারছে না কেন্দ্র। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনও ভূমিকাই নিচ্ছে না।’’ তবে সিপিএম নেতা বংশগোপাল চৌধুরী কেন্দ্রের পাশাপাশি, রাজ্যকেও জিনিসপত্রের দাম নিয়ে বেঁধেছেন। পক্ষান্তরে, বিজেপির জেলা আহ্বায়ক শিবরাম বর্মনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘পেট্রো-পণ্যের সঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দামের একটি সম্পর্ক রয়েছে। আর পেট্রো-পণ্যের দাম অনেকটাই নির্ভর করে বিশ্ব বাজারের উপরে। কেন্দ্র চেষ্টা করছে। কিন্তু রাজ্য সরকার তার জিনিসপত্রের দামের উপরে নিজস্ব কর চোখে পড়ার মতো কমিয়েছে, এমন উদাহরণ নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন