মমতার ছটা ছাড়া নিষ্প্রভ এই চাঁদ

স্বাস্থ্যে তিনি থেকেও নেই। আইনে আছেন। কিন্তু সে থাকা এমনই অস্বস্তিকর যে, কন্টকশয্যার মতোই তা তাঁকে বিঁধেছে বারবার।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৬ ০২:০৫
Share:

প্রচারে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। — ফাইল চিত্র

স্বাস্থ্যে তিনি থেকেও নেই। আইনে আছেন। কিন্তু সে থাকা এমনই অস্বস্তিকর যে, কন্টকশয্যার মতোই তা তাঁকে বিঁধেছে বারবার।

Advertisement

ভোটে জিতে দু’-দু’টি দফতরের মন্ত্রী হয়েছেন ঠিকই, কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরটি গোড়া থেকেই তাঁর গলার কাঁটা হয়ে থেকেছে। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও নির্মল মাজি সেই দফতরে সমান্তরাল প্রশাসন চালিয়ে গিয়েছেন। ‘দিদি’র বিরাগভাজন হওয়ার ভয়ে চন্দ্রিমা বাধা দেননি। অভিযোগ, আইনমন্ত্রী হয়েও দলের নানা ‘বেআইনি’ কাজকর্মে কখনও তাঁকে বিবেকের ভূমিকায় দেখা যায়নি।

সুতরাং মন্ত্রিত্বের পরিচয় চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে বিধায়ক হিসেবে তাঁর জীবনের দ্বিতীয় বারের লড়াইয়ে কোনও বাড়তি সুবিধা দিতে পারছে না। অগত্যা শুধু দমদম (উত্তর)-এর বিধায়ক হিসেবে তিনি কতটা সফল, তা প্রমাণ করাই এখন তাঁর লড়াই।

Advertisement

চন্দ্রিমা থাকেন দক্ষিণ কলকাতায়। আর তাঁকে লড়তে হচ্ছে একেবারে উত্তর শহরতলিতে। স্থানীয়েরা বলছেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, আপদ-বিপদে তাঁর দেখা পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু কাছে যাওয়ার আগে তাঁরা দু’বার ভেবে নেন। এর মূল কারণ, চন্দ্রিমার মেজাজ-মর্জি। ‘দিদি’র ছায়ায় থাকার অভ্যাস তাঁকে অভিযোগ শোনার ধৈর্য বিশেষ দেয়নি। ন্যূনতম বিরোধিতার আভাস পেলেই অপর পক্ষকে আছড়ে ফেলতে চেয়েছেন তিনি।

তাঁতকল এলাকার সরকারি আবাসনের এক বাসিন্দা যেমন বলছিলেন, ‘‘এলাকায় জলের পাম্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘তৃণমূলকে ভোট না দিলে কত দিন জল পাবেন, তা জোর দিয়ে বলতে পারছি না।’ এই কথাটা আমাদের ভাল লাগেনি। এর মধ্যে সরাসরি যে ভাগাভাগির কথা রয়েছে, সেটা যে ওঁকে অনেকটা দূরে সরিয়ে দিতে পারে, তা ওঁর বোঝা উচিত।’’

চন্দ্রিমা অবশ্য দাবি করেছেন, এমন অভিযোগ সর্বৈব ভুল। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনৈতিক রং দেখে নয়, কাজ করি এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে। যত দূরেই থাকি না কেন, এলাকায় পড়ে থাকি। মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করি। আমার বিশ্বাস, মানুষ এর মূল্য বুঝবেন।’’

দমদম (উত্তর) বিধানসভা কেন্দ্রটি তৈরি হয় ২০০৯ সালে। আওতায় দু’টি পুরসভা। উত্তর দমদম আর নিউ ব্যারাকপুর। তার আগে উত্তর দমদম ছিল দমদম বিধানসভার অধীনে। আর নিউ ব্যারাকপুর ছিল খড়দহ বিধানসভার অধীনে। উত্তর দমদমে ৩৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬টিই তৃণমূলের। আর নিউ ব্যারাকপুরে ২০টির মধ্যে ১৭টি তৃণমূলের। ফলে আপাত ভাবে এই কেন্দ্রের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৃণমূলের পক্ষে যথেষ্ট স্বস্তিদায়ক। আর চন্দ্রিমার পক্ষে? রাস্তাঘাট, পানীয় জল, নতুন হাসপাতাল, রেশন অফিস, এলাকায় নতুন থানা, অভয়াশ্রমকে রাজ্য খাদি গ্রামোদ্যোগের আওতায় আনা— নিজের কাজের যথেষ্ট দীর্ঘ খতিয়ান পেশ করেছেন তিনি। তবে চন্দ্রিমা সম্পর্কে তাঁর দলের বাইরে ও ভিতরে একটা কথা প্রচলিত আছে। চাঁদ যেমন সূর্যের প্রতিফলিত আলোয় আলোকিত, চন্দ্রিমাও তেমনই ‘মমতা-ময়’। সর্বদাই। চন্দ্রিমা তা অস্বীকার করতেও চান না। প্রায়
মুদ্রা দোষের মতো যে কোনও কথাতেই টেনে আনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম।

এ সব শুনে একটা পুরনো রসিকতা সামনে আনছেন তাঁর বিরোধীরা। স্কুলে অঙ্কের খাতায় এক ছাত্র লিখে এসেছিল, ‘এই সব প্রশ্নের উত্তর একমাত্র ভগবানই জানেন।’ পরীক্ষক খাতায় লিখে দিয়েছিলেন, ‘তা হলে ভগবানকে ১০০ দিলাম। তোমার জন্য রইল শূন্য।’

বিধায়ক চন্দ্রিমার জমা-খরচের খাতায় কী রইল?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন