দিল নিয়ে মুশকিল ছিল, এ বার খোদ মুক্তি নিয়েই মুশকিল।
পাক অভিনেতা ফাওয়াদ খান আছেন বলে কর্ণ জোহরের ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ অন্তত চারটি রাজ্যে দেখানো হবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘সিনেমা ওনার্স এক্সিবিটরস অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’ (সিওইএআই)। ২৮ অক্টোবর মুক্তি পাওয়ার কথা ছবিটির। রণবীর কপূর, অনুষ্কা শর্মা, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনের সঙ্গেই ছবিতে রয়েছেন ফাওয়াদ। গত ১৮ সেপ্টেম্বর কাশ্মীরের উরি সেনাশিবিরে জঙ্গি হামলার পরেই যাঁকে ভারত ছাড়ার ফতোয়া দিয়েছিল মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস)।
উরির ঘটনা এবং জবাবে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইককে ঘিরে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এই মুহূর্তে যথেষ্ট অগ্নিগর্ভ। তার আঁচ এসে পড়ছে বিনোদন জগতেও। ভারতীয় প্রযোজকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মোশন পিকচার্স প্রোডিউসার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইম্পা) আগেই বলে দিয়েছিল, আপাতত ছবিতে পাক শিল্পীদের নিয়ে আর কাজ করা হবে না। এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে সিওইএআই-র সভাপতি নিতিন দাতার বললেন, ‘‘ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনও ছবিতে পাক অভিনেতা, টেকনিশিয়ান, পরিচালক, সঙ্গীত পরিচালকরা থাকলে সেই ছবি দেখানো হবে না।’’ মহারাষ্ট্র, গুজরাত, কর্নাটক এবং গোয়ায় সে কারণে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ আদৌ মুক্তি পাবে কি না, তাই নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেল। অন্যান্য রাজ্যেও তাঁদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হবে বলে জানিয়েছে সিওইএআই।
মহারাষ্ট্রে এমএনএস অবশ্য হুমকি দিয়েই রেখেছিল, পাক শিল্পীদের অভিনীত ছবি তারা দেখাতে দেবে না। আজ শিবসেনা এবং এমএনএস, দু’দলই সিওইএআই-এর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। শিবসেনার সাংসদ অরবিন্দ সবন্তের কথায়, ‘‘এটা দারুণ সিদ্ধান্ত। দেশ এখন এ রকম সিদ্ধান্তই চাইছে।’’ ‘সেনা’দের হুমকির মুখেই সিওইএআই আগেভাগে ছবি না দেখানোর কথা বলে দিল কি না, সে প্রশ্নও তাই উঠছে। দাতার অবশ্য এ দিন দাবি করেছেন, কারও চাপে তাঁরা কাজ করছেন না। কিন্তু পাশাপাশি এমন কথাও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে যে, ছবি না দেখালে যেমন হলমালিকদের ক্ষতি, হল ভাঙচুর হলে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি!
কর্ণের ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ এবং শাহরুখ খানের ‘রইস’— প্রথম থেকেই এমএনএস-এর নিশানায় রয়েছে এই দু’টি ছবি। রাহুল ঢোলাকিয়ার পরিচালনায় ‘রইস’-এ শাহরুখ ছাড়াও অভিনয় করেছেন পাক অভিনেত্রী মাহিরা খান। কোনও কোনও মহলে এখনই কানাঘুষো শুরু হয়ে গিয়েছে যে, মাহিরা কাজ করতে না পারলে প্রয়োজনে ছবিটির একাংশ নতুন কাউকে দিয়ে শ্যুট করাতে হতে পারে। এমএনএস নেতা অময় খোপকর হুমকি দিয়েছেন, ফাওয়াদের অংশগুলি বাদ না দিলে ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবিটি রিলিজ করতে দেওয়া হবে না। যাঁরা এই ছবি রিলিজ করার চেষ্টা করবেন বা দেখতে যাবেন, রাস্তায় নেমে তাঁদের ধোলাই দেবেন বলে শাসিয়েছেন তিনি।
ঘটনা হল, যে ইম্পা পাক শিল্পীদের ছবিতে না-নেওয়ার ফতোয়া দিয়েছে, তারা কিন্তু আজ সিওইএআই-এর সিদ্ধান্তে খুশি নয়। বস্তুত ফতোয়া জারির সময়েই ইম্পা বলেছিল, যে সব ছবি তৈরি হয়ে গিয়েছে, সেগুলোকে আটকানোর দরকার নেই। নতুন করে পাক শিল্পীকে নিয়ে কাজ শুরু না করলেই হল! আজও তাদের বক্তব্য, যে ছবির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে, সেটিকে নিশানা করা ঠিক নয়। ইম্পার সদস্য পরিচালক অশোক পণ্ডিতের কথায়, ‘‘সিওইএআই-র এই সিদ্ধান্ত বিপজ্জনক।’’ ইম্পা-র সুরে সুর মিলিয়েছেন সেন্সর বোর্ডের প্রধান পহলাজ নিহালনিও। সিওইএআই-র এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তিনি বলেন, ‘‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। ছবিটিতে ভারতীয় প্রযোজকরাই টাকা ঢেলেছেন। অভিনেতারাও বেশির ভাগ ভারতীয়। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়, যাতে ইন্ড্রাস্টির ক্ষতি হয়।’’
ছবিটি না দেখানোর সিদ্ধান্তকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়েছেন বিক্রম ভট্ট, ওম পুরী এবং পীযূষ মিশ্রও। ওম পুরীর মতে, যত ক্ষণ না ভারত সরকার পাক শিল্পীদের ভিসা বাতিল করছে, তত ক্ষণ কারও অধিকার নেই তাঁদের আটকানোর। আর কেন্দ্রও কিন্তু জানিয়েই দিয়েছে, পাক শিল্পীদের ভিসা বাতিল করার কোনও পরিকল্পনা এখনই নেই।