B. R. Chopra

‘মহাভারত’-এর চিত্রনাট্য লেখেন এক মুসলিম কবি! বিতর্ক হতেই কী বলেছিলেন বিআর চোপড়া?

গত কয়েক বছরে পুরাণ নিয়ে ছবি তৈরির প্রবণতা বেড়েছে। বলিউডে এ বিষয়ে সবচেয়ে সফল দৃষ্টান্ত ‘কল্কি ২৮৯৮’। মহাভারতের কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই ছবির কল্পকাহিনি বোনা হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:২৫
Share:

বিআর চোপড়ার ‘মহাভারত’ ধারাবাহিকের চিত্রনাট্য লিখেছিলেন রাহি মাসুম রজ়া, অর্জুন চরিত্রে ছিলেন ফিরোজ খান। ছবি: সংগৃহীত।

সম্প্রতি আমির খান জানিয়েছেন তিনি মহাভারতের গল্প নিয়ে ছবি তৈরি করতে চান। একটি ছবি নয়, এই বিষয়ে একাধিক পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চান বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’।

Advertisement

গত কয়েক বছরে পুরাণ নিয়ে ছবি তৈরির প্রবণতা বেড়েছে। বলিউডে এ বিষয়ে সবচেয়ে সফল দৃষ্টান্ত ‘কল্কি ২৮৯৮’। মহাভারতের কাহিনি থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই এই ছবির কল্পকাহিনি বোনা হয়েছে। কিন্তু আমিরের ইচ্ছা প্রকাশিত হতেই শুরু হয়েছে কানাঘুষো। হিন্দু মহাকাব্য নিয়ে এক জন মুসলিম অভিনেতার কাজ করার আগ্রহকে অনেকেই কটাক্ষে বিঁধেছেন।

কিন্তু ঘটনা হল এর আগেও মহাভারত নিয়ে কাজ করেছেন ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা। প্রায় ৩৭ বছর আগে দূরদর্শনে ধারাবাহিক ভাবে মহাভারতের কাহিনি নির্ভর নাটক প্রদর্শিত হত। প্রযোজক ছিলেন খ্যাতনামী বিআর চোপড়া। তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, মুসলমান কলাকুশলি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকেও। কিন্তু ঘটনা হল, দূরদর্শনের সেই বিখ্যাত ‘মহাভারত’ নির্মাণের পিছনে ছিলেন এক মুসলমান কবিই। তাঁর নাম রাহি মাসুম রজ়া।

Advertisement

বিআর চোপড়া স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, মহাভারতের বিরাট কাহিনি সম্ভার, অগণিত চরিত্রের মধ্যে থেকে সুনির্বাচিত গল্প চিত্রায়িত করার কাজ সহজ ছিল না। কিন্তু সেটাই করে দেখিয়েছিলেন রজ়া। ধারাবাহিক শুরুই হতো একটি অমোঘ সংলাপে— “ম্যায় সময় হুঁ (আমি কাল)”। তার পর সেই ‘সময়’ই নিরন্তর বর্ণনা করে চলত মহাভারতের কাহিনি, যেন নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে নজর রাখছে কেউ, ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহের উপর। এ সংলাপ রজ়ারই লেখা।

‘মেকিং অফ মহাভারত’-এ বিআর চোপড়া বলেছিলেন, “মানুষ মনে করত এটি হিন্দু মহাকাব্য, আমরা এমন কোনও দিন মনে করিনি... তাই সমস্ত বাধা জানলা দিয়ে উড়ে পালাল। যে ভাবে রাহি চিত্রনাট্য লিখেছিলেন, আমরা একবাক্যে সই করে দিলাম।” কিন্তু সমস্যা যে একেবারে হয়নি তা নয়। স্বয়ং রাহি এক সময় জানিয়েছিলেন, তাঁকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, সেই সময় হুমকি পেয়ে অবাক হয়ে যান। তাঁর কথায়, “আমি কি ভারতীয় নই? বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আমাকে চিঠি পাঠিয়েছিল। আমি তার উত্তর দিই। পরে পরিষদ আমার কাছে ক্ষমা চায়। যদিও ওই হুমকি নিয়ে আমি চিন্তিত ছিলাম না।”

এ বিষয়ে মুখ খুলেছিলেন বিআর চোপড়ার পুত্রবধূ রেণুও। তিনি দাবি করেন, “বাবা বলেছিলেন, ‘মহাভারত কোনও হিন্দু মহাকাব্য নয়। বরং প্রতিটি ঘরের কাহিনি।’ এমনকি বাবা জানিয়েছিলেন, রাহি সাহেব কাজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হলে তিনিও আর কাজটি করবেন না।”

ঘটনা হল শুধু রাহি নন। বিআর চোপড়ার মহাভারত ধারাবাহিকে ‘অর্জুন’ চরিত্রাভিনেতাও ছিলেন মুসলিম। তাঁর আসল নাম ফিরোজ় খান। কিন্তু নাম ফলকে তাঁকে ‘অর্জুন’ বলেই উল্লেখ করা হত। হয়তো অতিরিক্ত বিতর্ক এড়াতেই এই পদক্ষেপ করেছিলেন বিআর চোপড়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement