সমাজে শ্যামবর্ণাদের অবস্থানের উন্নতি হয়েছে, কালো বলে দেবের ‘বোন’ হয়েছিলাম, এখন তাঁরই নায়িকা!

আমার এক পিসিমার দুচিন্তা ছিল আমায় নিয়ে। এত কালো আমি। বিয়ে হবে তো? মা-বাবা কী করে পার করবেন আমায়?

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:০৩
Share:

শ্যামাপুজোয় শ্যামবর্ণাদের নিয়ে পাওলি দাম। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

ঘরে-বাইরে কম জ্বালাতন শ্যামবর্ণাদের? আমাকেই কি কম ঝঞ্ঝাট পোহাতে হয়েছে? মা-বাবা খুবই মুক্তমনা। আমার গায়ের রং নিয়ে মোটেই মাথাব্যথা ছিল না ওঁদের। কিন্তু যৌথ পরিবারের টীকা-টিপ্পনী যাবে কোথায়? আমাকে নিয়ে এক পিসিমার সে কী চিন্তা! এই গায়ের রং নিয়ে কী করে বিয়ে হবে?

Advertisement

অথচ, আমার পিসিমা ১৯৫০ সালে নিজের পছন্দে বিয়ে করেছেন। তাঁর গায়ের রং আমার চেয়েও কালো!

এ রকম ঘটনা কত আছে! পাড়ায়, কোচিংয়ে পড়তে গিয়েছি। সেখানেও গায়ের রং নিয়ে কম কথা শুনতে হয়নি। মনটা এক এক সময় খারাপ হয়ে যেত। আচ্ছা, কালো মানেই কুৎসিত আর ফর্সা মানেই সুন্দর?

Advertisement

আমার মনখারাপ প্রথম ভাল করে দিয়েছিলেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। ওঁর সঙ্গে ‘কালবেলা’য় অভিনয় করার সময় আমায় বলেছিলেন, “পাওলি, তোর গায়ের রংটা তো দুর্দান্ত! কী ভাল ত্বক।” সেই প্রথম কালো মেয়ের প্রশংসা করলেন কেউ। চোখটা ভিজে গিয়েছিল। চাপা গায়ের রঙের জন্যই ‘আই লভ ইউ’ ছবিতে দেবের ‘বোন’ হতে হয়েছিল। তখন ইন্ডাস্ট্রিতে ধারণা ছিল, নায়িকা মানেই ফর্সা। পরে যখন অতনু রায়চৌধুরীর ‘সাঁঝবাতি’ করলাম, তখন ওই একই নায়কের নায়িকা! প্রচারে বেরিয়ে বলেছিলাম, কালো মেয়েদের উন্নতি হয়েছে। আমি দেবের ‘বোন’ থেকে নায়িকা হয়েছি!

তখন থেকে ঠিক করেছিলাম, প্রতিবাদ জানাব। লড়াই করব আগামী প্রজন্মের জন্য, যাতে ওদের আমার মতো কষ্ট পেতে না হয়। এ বার প্রশ্ন, প্রতিবাদ জানাব কী ভাবে? বড়জোর সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলতে পারি। তার পর? লেখা ক’জন পড়েন! তাতে সমাজ কতটা বদলাবে?

এমন চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু করলাম, যেখানে গায়ের রং হাতিয়ার। প্রতিবাদী, জোরালো, বলিষ্ঠ চরিত্র। ভিতরে জমে থাকা আগুন উগরে দিতাম। সেই সময়কার পরিচালকেরাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেছিলেন। ফলাফল, এখন অনেক ছবি, সিরিজ়ের নায়িকার গায়ের রং কিন্তু চাপা! আর একটি জিনিস বুঝেছি। শুধুই নায়িকা নন, নায়কদেরও এই লড়াইয়ে এগিয়ে আসতে হবে। লিঙ্গসাম্য যে কোনও সমস্যার সমাধান করতে পারে। আর পারে মেয়েদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা।

যিনি আমার বিয়ে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন আমার বিয়ের সময় সেই পিসিমাই বলেছিলেন, পাওলির মতো সুন্দরীর তো সুন্দর বর-ই হবে।

এ ভাবে প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতেই সমাজ কেমন এগিয়েছে। এখন আর ফর্সা হওয়ার ক্রিমের তেমন রমরমা নেই! ‘ফেয়ারনেস’ শব্দও ব্যবহার করা যায় না। রূপটান বাছতে গেলে নিজের গায়ের রঙের নিতে হয়। এটুকুই বা কম কী?

শেষে বলি, যাঁরা আমার মতো বা আমার থেকেও শ্যামবর্ণা তাঁরা মনখারাপ করবেন না। কালোর মধ্যে কিন্তু এক গভীর রহস্য থিতিয়ে। বলিউডের রেখাজিকে দেখুন। ওঁর মতো ‘প্রহেলিকা’ আর কে আছেন? আমিও নাকি ‘রহস্যময়ী’, বলেন অনেকে। পাওলি ‘কালী’ না ‘দুর্গা’, আগেই যদি লোকে বুঝে যায়, তা হলে আর আমার প্রতি আকর্ষণ রইল কী?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement