‘পকেটভর্তি দশ-বারোটা দেশলাই!’

তাঁর জীবনের মজাদার গল্প শোনালেন রঞ্জিত মল্লিকতাঁর জীবনের মজাদার গল্প শোনালেন রঞ্জিত মল্লিক

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩০
Share:

একান্তে। ফাইল চিত্র

মৃণালবাবুর একটা অদ্ভুত স্বভাবের কথা বলি। খুব সিগারেট খেতেন উনি। যখনই মুখে একটা সিগারেট ধরাতেন, যে সামনে আছে, তার কাছে দেশলাই চাইতেন। তার পর সেটা নিজের পকেটে রেখে দিতেন। সেও লজ্জায় আর চাইতে পারত না। আমাকে একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘যখন বাড়ি ফিরি, পকেটে গোটা দশ-বারো দেশলাই!’

Advertisement

আরও একটা ঘটনা বলি, খুব শীতকাতুরে মানুষ ছিলেন। শীতকালে একদম স্নান করতে চাইতেন না। বৌদি বলতেন, ‘তুমি যদি স্নান না করো, তোমাকে আমি খেতে দেব না।’ একদিন মৃণালবাবুর বাড়িতে গিয়েছি। শুনছি বৌদি বলছেন, ‘শুনছো, তোমার স্নান হয়েছে?’ উত্তর দিলেন, ‘ক-ও-ও-বে...’। এই কবে মানে কিন্তু অনেকক্ষণ আগে নয়! আসলে মানুষটা ছিলেন খুব মজাদার। ‘ফুল অফ লাইফ’ যাকে বলে। তবে বৌদি মারা যাওয়ার পরে ভেঙে পড়েছিলেন খুব।

প্রতি বছর ২ অগস্ট ওঁর বাড়িতে যাওয়াটা আমার রুটিনের মধ্যে পড়ত। ওই দিনই ‘ইন্টারভিউ’র জন্য কার্লোভি ভ্যারি থেকে পেয়েছিলাম সেরা অভিনেতার প্রথম আর্ন্তজাতিক পুরস্কার! এই ছবিটা দিয়েই আমার কেরিয়ার শুরু। তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। আমার কাকার সঙ্গে মৃণালবাবুর যোগাযোগ ছিল। কাকাকে বলেছিলাম, একটা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে। নেওয়া না নেওয়া তো ওঁর সিদ্ধান্ত।

Advertisement

‘ইন্টারভিউ’ ছবিতে

আলাপ করার পরে জিজ্ঞেস করেছিলেন, সিনেমা সম্পর্কে কোনও অভিজ্ঞতা আছে না কি। বলেছিলাম, তা নেই। তবে আপনি যে ইউথ প্রবলেম নিয়ে ছবি করছেন, সে সমস্যাটার ব্যাপারে আমি ওয়াকিবহাল। তার পর একদিন সকাল সাড়ে ছ’টার সময়ে লেকের ধারে ডাকলেন। উনি ক্যামেরার পিছনে। আমাকে বললেন, ‘খুব রাগী রাগী মুখ করো তো। প্রাণ খুলে হাসো। অবাক হও...’ এ রকম বলে যাচ্ছেন আর আমি সেই অনুসারে রিঅ্যাক্ট করছি ক্যামেরার সামনে। মাসখানেক পরে জানতে পারলাম, আমি সিলেক্টেড।

আরও পড়ুন: ‘উনি আমার নাম বদলে রেখেছিলেন মাধবী’, স্মৃতিচারণে মাধবী

‘ইন্টারভিউ’ ছবিটাও ছিল খুব অন্য রকম। বাস্তব আর সিনেমার অদ্ভুত মিশেল। থানায় একদিন শুটিং করছি। শুটিংয়ের আগে সংলাপ সব সময়েই হাতে পেয়ে যাই। কিন্তু সে দিন শুরু হওয়ার আগের মুহূর্তেও তা হাতে পাইনি। মৃণালবাবুকে তা বলতেই, গম্ভীর গলায় বললেন, ‘ডায়লগ আবার কী! ওসি যে রকম প্রশ্ন করবে, সে রকম উত্তর দিয়ে যাবে। ঘটনাটা তো তুমি জানো। আমার তরফ থেকে পরামর্শ, যত তাড়াতাড়ি পারো, ওখান থেকে বেরোতে চেষ্টা করবে। তোমার ইন্টারভিউ আছে।’ ওই ভদ্রলোককে শেখানো ছিল আমাকে আটকে রাখার জন্য নানা প্রশ্ন করতে। শুটিং শুরু হয়ে গেল। চলল প্রশ্নোত্তর। শুধু আমার মুখে ছিল অধৈর্য।

আরও পড়ুন: ‘আমাকে মৃণাল বলবি, মৃণালদা নয়’

ছবিটা আমার জীবনে মাইলস্টোন। তাই মৃণালবাবুকে ভুলিনি। এ বছরও গিয়েছিলাম দেখা করতে। যদিও খুবই অসুস্থ তখন। কথাও বিশেষ বলছিলেন না। তবে সেই সত্তর সাল থেকে আমার নিয়মের কিন্তু অন্যথা হয়নি, শুধু একবার আমেরিকায় থাকার জন্য যেতে পারিনি। তবে নতুন বছর থেকে নিয়মটা বদলে যাবে।

অনুলিখন: পারমিতা সাহা

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement