ধর্মেন্দ্র দেওলকে নিয়ে স্মৃতিচারণায় টোটা রায়চৌধুরী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
নানা রূপে নানা ভাবে পর্দায় ধর্মেন্দ্র দেওলকে দেখেছি। প্রত্যেকটা রূপ খুব প্রিয়। তার পরেও কেন জানি না মনে হয়, ‘সুপারস্টার’ তকমা ওঁরও প্রাপ্য ছিল! সেটা উনি সম্ভবত পাননি।
আমার এই উপলব্ধি কর্ণ জোহরের ‘রকি ঔর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে। ওই ছবিতে তারকার মেলা। আমার আগ্রহের অন্যতম কারণ ধর্মেন্দ্রজি। জয়া বচ্চন ওঁর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “ধরমজি, টোটা রায়চৌধুরী। বাংলা থেকে এসেছেন।” পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে গিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে হাত ধরে নিলেন! নরম করে বললেন, “পা হাত দিয়ো না কারও। জোড়হাতে নমস্কার জানাও।” কী সুন্দর করে সে দিন হেসেছিলেন! বলেছিলেন, “সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেতা-অভিনেত্রী বাংলায় থাকেন।”
উদার হৃদয় তাঁর। আমায় বলেছিলেন, “জানো, আমার অভিনেতাসত্তাকে প্রকাশ্যে এনেছেন তাবড় বাঙালি পরিচালকেরা। হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়, অসিত সেন সেই তালিকায়। আমার বাঙালি নায়িকারাই বা কম কী! সুচিত্রা সেন, শর্মিলা ঠাকুর, জয়া বচ্চন, রাখি গুলজ়ার— ওঁদের সঙ্গে অভিনয় করে ‘অভিনেতা’ ধর্মেন্দ্রের তকমা পেয়েছি। বাংলার কাছে আমার ঋণ থেকে গেল।” বিশ্বাস করুন, খুব গর্ব হচ্ছিল।
আমার যখন শট না থাকত, চুপ করে বসে ধরমজির অভিনয় দেখতাম। ৯০ বছরের এক অভিনেতা, সুদীর্ঘ অভিনয়জীবন— তিনি বিনীত স্বরে ছেলের বয়সি পরিচালককে অনুরোধ করে বলেছেন, “করণ, এই শটটা একবার এ রকম করে নেবে? আমি এ রকম ভেবেছিলাম। দেখো না, হয়তো তোমারও ভাল লাগতে পারে!” পোড়খাওয়া এক অভিনেতা এত বিনয়ী! নিজেকে নতুন করে প্রমাণ করার আর তো কিছুই নেই। তবুও অভিনয়ের খিদে একটুও কমেনি। বুঝলাম, আমাকেও এই খিদে ধরে রাখতে হবে।
এমনিতে কম কথার মানুষ। মুঠোফোন থেকে দূরে। হয় নিচু স্বরে কারও সঙ্গে কথা বলছেন। নয়তো নিজের মনে বসে।
ওঁকে দেখতে দেখতে কখনও মনে পড়ত ‘ব্ল্যাক মেল’, ‘মেরে হমদম মেরে দোস্ত’। ‘শোলে’ তো ‘চিরসবুজ’ সিনেমা। তখনই মনে হয়েছিল, পর্দায় ওঁর রোম্যান্টিসিজ়মও অসাধারণ। সুপুরুষ, ওই হাসি, চাহনি, প্রেমের দৃশ্যে অনবদ্য আবেদন— এটাও যেন কম দেখানো হয়েছে। অথচ, ওঁর কণ্ঠে মহম্মদ রফি, কিশোরকুমারের একগুচ্ছ সেরা রোম্যান্টিক গান! আসলে মানুষটা নিজের প্রতি, নিজের পেশাজীবনের প্রতি একটু যেন উদাসীন। যা পেয়েছেন তাতেই খুশি। অন্য অনেক তারকা অভিনেতার মতো, একটা ভাল রোলের জন্য দিনের পর দিন পরিচালকের বাড়িতে পড়ে থাকেননি। নিজের প্রভাব খাটাননি। নিজেকে প্রমাণিত করতে এ সবের খুবই দরকার। নিজের জন্য তো নিজেকেই বলতে হয়!
আর একটা দৃশ্য মনে থেকে যাবে, ছবিতে শাবানা আজ়মি আর ওঁর চুম্বনদৃশ্য। সেই দৃশ্য পর্দায় সাড়া ফেলে দিয়েছিল। আমার চোখে ওর থেকে পবিত্র দৃশ্য আর হয় না। ধরমজি-শাবানা আজ়মি দু’জনেই যথেষ্ট পেশাদার। উভয়েই নানা ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছেন। কর্ণ যে দিন চুম্বনদৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন, সে দিন দাঁড়িয়ে দেখেছিলাম। কী পেশাদারিত্বের সঙ্গে দৃশ্যে অভিনয় করলেন ওঁরা! ওঁদের অভিনয়গুণে নান্দনিকতার সেরা উদাহরণ হয়ে থাকল ‘রকি ঔর রানি কি প্রেম কহানি’র বহুলচর্চিত চুম্বনদৃশ্য।