Entertainment News

হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় রাত জেগে কী করছে পরমেশ্বরী?

আরও এক বার নরওয়ে। এ বার অপার্থিব সুমেরু প্রভা দেখতে। কেমন সে অনুভূতি? আনন্দবাজার ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়আরও এক বার নরওয়ে। এ বার অপার্থিব সুমেরু প্রভা দেখতে। কেমন সে অনুভূতি? আনন্দবাজার ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১৬:১৮
Share:

কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সারাদিন রং মেখে থাকি আমি। রঙের মধ্যে রংবেরঙের কাজ। হঠাৎ যদি আমার আকাশ, মাটি বরফের চাদরে ঢেকে যায়? আহ! কী যে স্বর্গীয় অনুভূতি! চারিদিক সাদা! ধুয়ে মুছে যায় সব কালি।

Advertisement

কথা ছিল এক বিমানে আকাশে উড়ব আমরা। আমি আর সুরজিৎ। বিয়ের পর যেমন গিয়েছিলাম। ঠিক ছিল আবার ফিরব আমরা নরওয়েতেই।

নর্দার্ন লাইট কিংবা সুমেরু প্রভার কথা নিশ্চয়ই শুনেছেন সকলেই,কেউ কেউ হয়তো দেখেছেনও৷ নরওয়েতে খুব সহজে কিন্তু এই আলোকচ্ছটার দেখা মেলে না৷ বর্ণিল আলোর খেলা দেখতে চাইলে তীব্র শীতে রাত জেগে অপেক্ষা করতে হয়৷ সেই অপেক্ষাই বন্দি ছিল আমাদের দুজনের মনে। দশ দিনের লম্বা ছুটির প্ল্যান করেছিল সুরজিৎ, কিন্তু আপনাদের পরমেশ্বরীর কি ছুটি মেলে? সুরজিৎ আগেই চলে গিয়েছিল। ডগ স্লেজিং করে আমায় ছবি দেখাতো!

Advertisement

সুমেরু প্রভা ও দম্পতি।

আমার মন খারাপ। পৌঁছলাম কয়েক দিন পর। আর আমাকে একেবারে অবাক করে দিয়ে ও দেখি এয়ারপোর্টে আমায় রিসিভ করার জন্য দাঁড়িয়ে। এই মুহূর্তের জন্য বেঁচে থাকা।

ট্রমসোর পথ ধরে চলতে গিয়ে ফিরে পেলাম আমার মধুযামিনীর অনুভূতি। বরফের কার্পেটে স্মৃতির সরণিতে হাঁটা। আনন্দে আত্মহারা আমি। ব্যস, এক কাণ্ড হল! নাচতে নাচতে বরফের মাঝে ধপাস। আসলে সাদা বরফ খানিক দুষ্টুমি করেছিল আমার সঙ্গে। তলায় কালো বরফ ছিল। কালো বরফে পা দিতে নেই যে!

এ বার আমরা রাতের অপেক্ষায়। কেন এই অপেক্ষা?

রাতের বেলা ট্রমসোর আকাশে থাকে রঙিন আলোর খেলা, যার নাম নর্দার্ন লাইটস বা সুমেরু প্রভা৷ আর দিনের বেলা সেই আলোর দেখা মেলে প্ল্যানেটরিয়ামে, ‘এক্সপেরিয়েন্স দ্য অরোরা’শিরোনামে৷ তবে অনেকেই রাতের আকাশে বর্ণিল এই আলোকচ্ছটা সরাসরি উপভোগ করতে চান৷ এ জন্য তুষার ঢাকা বিরূপ আবহাওয়াতেও রাতেরবেলা জেগে থাকেন তাঁরা৷ সুমেরু প্রভা দেখতে বাসে চড়ে চলে যান শহরের বাইরের দিকে৷

আমরাও সেই আলোকিত বিভার দিকে পা বাড়ালাম। বিস্ময়ের অপেক্ষায়।

তবে প্রতি রাতেই যে তা দেখা যাবে, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই৷

প্রাকৃতিক আলোর খেলা উপভোগ করতে হয় অন্ধকার পরিবেশে৷ তাই শহরের বাইরে চলে যান পর্যটকেরা৷ আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে সুমেরু প্রভা সহজে ফুটে ওঠে৷ এখানে ছবি তোলার বিশেষ টেকনিক আছে। সুরজিৎ সে সব গুছিয়ে নিয়ে আসে। ও দারুন ট্র্যাভেলার। ছবি তুলতে চাইলে শুরুতে কোনও একটি পাহাড়ের দিকে ফোকাস ঠিক করতে হবে৷ আর পাহাড় এখান থেকে অনেক দূরে৷ তাই ‘ইনফিনিটি সেটিংস’ না থাকলে, শুধু পাহাড়ের দিকে ফোকাস করলেই চলবে৷ ক্যামেরায় পাহাড়ের ছবি পরিষ্কারভাবে উঠলে পরে সুমেরু প্রভার ছবিও উঠবে৷ এমনটাই বুঝেছি।

অরোরা বরিয়ালিস

আকাশ পরিষ্কার থাকলে মাঝে মাঝে সুমেরু প্রভা দেখা যায়৷ কিন্তু সব সময় নয়। তবে আলোর খেলা সারারাত বা আধ ঘণ্টাও স্থায়ী হতে পারে৷

প্রচণ্ড শীতের সময়ে এখানে এসে কেমন একটা ঘোরের মাঝে পড়ে যাই, কখন যে রাত আর কখন যে দুপুর ঘড়ি না থাকলে তা বোঝার কোনও উপায় নেই, দিনের আলো বলতে দুপুরের মাঝখানটায় সন্ধ্যের মতো একটু আলো হয়তো বা দেখা যায়, তা-ও আবার খুবই অল্প সময়ের জন্য, রাত আর দিনের আলোর পার্থক্য বোঝার উপায় থাকে না | রাত-দিনের মিলনক্ষেত্র এতই গাঢ় যে আলাদা হয় না।

আকাশে সূর্য কখনওই ওঠে না তবে বাইরে খানিক আলো দেখতে পাওয়া যায়। আমরা এসেছি নিজেদের ধুলোবালি জীবন মুছতে। এত শীতলতা, নিস্তব্ধতা! হঠাৎ দেখি আমার নাকের ডগাতে সেই আগের মতোই কোনও বোধ খুঁজে পাচ্ছিনা, মনে হচ্ছে নাকের ডগাটা হারিয়ে ফেলেছি | হারাতেই তো এসেছি সব।

সারাটা দিন এই শীতের সৌন্দর্যকে উপভোগ করে রাতের আলোর অপেক্ষা।

হঠাৎ করেই থেমে গেল সব।

দেখি অন্ধকারকে ভেদ করে মাথার উপর সবুজ মিশ্রিত হলুদ রঙের আলোর নাচন যেন ঢেউ খেলে খেলে আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে চলে যাচ্ছে। অরোরা বরিয়ালিস!

ছুটির মেজাজে...

জীবনে অনেক ধরনের আলোর খেলা দেখেছি বটে কিন্তু আকাশের উপর এ ভাবে আলোর নাচন দেখে বিস্ময়ে তাকিয়ে আছি| কোথাও কোনও শব্দ নেই, পুরো পৃথিবীটা যেন নির্জনতাকে ভালবেসে ঘুমিয়ে আছে, নির্জনতাকে প্রাণের সমস্ত আবেগ দিয়ে অনুভব করছি আমি আর সুরজিৎ, মিনিট দশেক পর এই আলোকনৃত্য আস্তে আস্তে হারিয়ে গেল| এই উজ্জ্বল আলোর নৃত্য আসলে সূর্য থেকে বৈদ্যুতিক চার্জ নিয়ে পরমাণু কণা সমূহ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় এক সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়, যা কিনা উত্তরে ‘অরোরা বরিয়ালিস’নামে আসে। সবুজ মিশ্রিত হলুদ রঙের আলোর ঢেউ তৈরি করে, কখনও কখনও এই আলোর রং লাল, হলুদ, সবুজ, নীলএবং ভায়োলেটের মতো দেখায়,ঘড়ির কাঁটা না দেখলে উপায় নেই যে কখন রাত আর কখন দিন।

বলিউড-টলিউড-টেলিউডের হিট খবর জানতে চান? সাপ্তাহিক বিনোদন সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম বাংলা চলচ্চিত্র উত্সব

আরও পড়ুন, রবির প্রেম-এ মুমতাজ

আমরা হারিয়ে যাই একে অপরের কাছে। রঙের মাঝে। আকাশে তখন হোলি!

ছবি— কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৌজন্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন