Durga Puja 2025

পুজো আমার কাছে আতঙ্কের! ভয় হয়, আবার কে বুঝি বিদায় নেবে, শারদীয়া মানেই যেন মৃত্যুমিছিল

কত বছর পুজোয় নতুন জামা-কাপড় কিনি না! আনন্দ, উল্লাস, খাওয়া-দাওয়া— সব অতীত।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:৪২
Share:

পুজোয় আনন্দ করতে ভুলে গিয়েছেন দেবশ্রী রায়। ছবি: সায়ন্তন দত্ত।

২০২২ থেকে আমার কাছে দুর্গাপুজো আতঙ্কের। ওই বছর মাকে হারিয়েছিলাম। সেই শুরু মৃত্যুমিছিল। তার পর মায়ের সমান বড়দি চলে গেল। গত বছর আমার পিঠোপিঠি দিদিকে হারালাম। এখন ঢাক বাজলেই বুক গুড়গুড় করে। আবার বুঝি কে আমায় ছেড়ে চলে যাবে!

Advertisement

পুজোর বিশেষ সাজে দেবশ্রী রায়। ছবি: সায়ন্তন দত্ত।

আমার কাছে শারদীয়ার তাই আর কোনও আকর্ষণ নেই। গত কয়েক বছর ধরে পুজোয় নেই আমি। কলকাতা ছেড়ে চলে যাই। শহরের বাইরে, নির্জন কোনও জায়গায়। এমন কোনও জায়গায়, যেখানে কেউ চিনতে পারবে না। আমি নিজের মতো করে সময় কাটাই। ভুলতে চেষ্টা করি প্রিয়জন বিয়োগব্যথা।

২০২২ থেকে পুজোর জামাকাপড় কেনাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কার জন্য কিনব? নিজের জন্য কেনার ইচ্ছাটাই মরে গিয়েছে। একই ভাবে খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ। আগে, ভাই-বোনেরা মিলে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়তাম। মা বাড়ি আগলাত। আমাদের জন্য রান্না করত। মায়ের হাতের শাকের ঝোল কিংবা মাংসের স্ট্যু। আহা-হা! যেন স্বর্গীয় স্বাদ। মুখে লেগে থাকত। আমি নিজে কত বার মায়ের রাঁধা ওই পদগুলো রান্নার চেষ্টা করেছি! কিছুতেই সেই স্বাদ আনতে পারিনি।

Advertisement

‘মাতৃরূপেণ’ দেবশ্রী রায়। ছবি: সংগৃহীত।

এ বছরেও বাইরে চলে যাব। নিরালায় বসে প্রার্থনা করব দেবীর কাছে, আমায় যেন শোক সামলানোর শক্তি দেন।

এত খারাপের মধ্যেও একটা ভাল ঘটনা ঘটল এ বছর। পোশাক পরিকল্পক অয়ন হোড়ের ভাবনায় অনেক বছর পরে পুজোর শুটিং করলাম। ওরা লাল বেনারসি পরিয়েছিল আমায়। লাল রং এমনিতেই খুব প্রিয়। আমায় মানায়-ও বেশ। ওদের শুটিংয়ের বিষয় মাতৃশক্তি। দেবী দুর্গা বাঙালির কাছে মাতৃস্বরূপিণী। প্রত্যেক ঘরে, প্রত্যেক নারীর মধ্যে এই মাতৃরূপ লুকিয়ে। অয়নের ভাবনা ভাল লেগেছিল। তাই রাজি হলাম।

প্রথমে ঠিক হয়েছিল, সকাল থেকে গঙ্গার ঘাটে শুটিং হবে। কিন্তু তাতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই মাঝরাত পেরোতেই আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম। এই কাজের দৌলতে অনেক বছর পরে রাত দেড়টায় মেকআপে বসেছিলাম। সাজ সম্পূর্ণ করে ক্যামেরার মুখোমুখি যখন, তখন ভোরের আলো ফুটব ফুটব করছে। শান্ত আহিরিটোলা গঙ্গার ঘাট। সুন্দর করে সাজিয়েছিলেন রূপসজ্জাশিল্পী নবীন দাস। অনেক বছরের পুরনো রূপসজ্জাশিল্পী নবীন। ওঁর সঙ্গে কত কাজ করেছি!

অনেক বছর পরে পুজোর শুটিংয়ে দেবশ্রী রায়। ভাবনা ও আয়োজনে: অয়ন হোড়, ছবি: সায়ন্তন দত্ত, রূপটান: নবীন দাস, শাড়ি: ইন্ডিলুম,সুজাতম।

শুটিং শেষ করে অনেক বছর পরে সে দিন কচুরি-জিলিপি খেয়েছিলাম। উত্তর কলকাতার কচুরি-জিলিপি তো বিখ্যাত। এক আলাদা স্বাদ। কাজের পর সকলের সঙ্গে হইহই করতে করতে খাওয়া-দাওয়া— বহু বছর পরে ভাললাগার প্রলেপে শান্ত হয়েছিল অস্থির মন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement