নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করলেন অমিতাভ বচ্চন। ছবি: সংগৃহীত।
প্রায় ২০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে পহেলগাঁও কাণ্ডের। এই কয়েক দিনে বহু জল গড়িয়ে গিয়েছে গঙ্গা, সিন্ধু দিয়ে। বলিউডের তারকারা উদ্ভাসিত হয়েছেন সমাজমাধ্যমে, প্রথমে তাঁরা নিন্দা করেছেন কাশ্মীরে জঙ্গিহানার। তার পর তাঁরা প্রশংসা করেছেন ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর। ভারতীয় সেনার সাহস এবং কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে গর্ব বোধ করছেন। কিন্তু কোথাও দেখা মিলছিল না বলিউডের শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চনের।
অবশেষে তিনি এলেন, নিন্দা করলেন জঙ্গিহানার, আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন স্বামীহারা তরুণীর জন্য আর প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করতে পারলেন না নিজের পোস্টে। ঊর্ধ্বকমা-চিহ্নিত করে রাখলেন খানিকটা স্থান। কেন এমন করলেন বিগ-বি? নতুন করে উঠছে প্রশ্ন।
সারাদেশে অমিতাভের যে কোনও মন্তব্যের আলাদা মূল্য রয়েছে। ৮২ বছরের ‘রাগী যুবক’ আজও যথেষ্ট সক্রিয়, যেমন অভিনয়ে, তেমন সমাজমাধ্যমে। কিন্তু তাঁর কোনও বক্তব্যই জানা যাচ্ছিল না পহেলগাঁও কাণ্ডের পর থেকে। বরং এক্স হ্যান্ডলে তিনি কিছু সংখ্যা পোস্ট করছিলেন। তা নিয়ে অনুরাগী ও অনুসরণকারীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছিল প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছিলেন কোনও ইঙ্গিত দিতে চাইছেন বিগ-বি। কেউ আবার তাঁকে বিদ্ধ করছিলেন কটাক্ষে। কেন বর্ষীয়ান অভিনেতা একটি শব্দও ব্যয় করছেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন সকলে।
রবিবার সকালে সেই নীরবতা ভাঙলেন অমিতাভ। লিখলেন এমন পোস্ট যেখানে পহেলগাঁওয়ের নিন্দা, সদ্য স্বামীহারা এক তরুণীর হৃদয়বেদনা তো উঠে এলই, সঙ্গে এল প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নাম উল্লেখ করলেন না তিনি।
তিনি লিখলেন, “ছুটির অবসরে, ওই রাক্ষস, নির্দোষ স্বামী-স্ত্রীকে বাইরে টেনে এনে, স্বামীকে নগ্ন করে, তাঁর ধর্ম ষাচাই করার পর, যখন তাঁকে গুলি করতে শুরু করল, তখন স্ত্রী হাঁটু গেড়ে বসে অনুরোধ করল, তাঁর স্বামীকে যেন না মারা হয়; কিন্তু সেই নির্বোধ রাক্ষস তাঁর স্বামীকে খুবই নির্মম ভাবে গুলি করে তাঁকে বিধবা করে দিল!! স্ত্রী যখন বলল, ‘আমাকেও মেরে দাও!’ তখন রাক্ষস বলল, ‘না, তুই গিয়ে, ‘...’কে বলবি!’
ওই মেয়েটির মনের অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে আমার পূজনীয় পিতার একটি কবিতার পংক্তি মনে পড়ছে: ধরা যাক সেই মেয়ে ‘...’-র কাছে গেল, আর বলল:
‘হ্যায় চিতা কী রাখ কর ম্যায়, মাঙ্গতি সিন্দুর দুনিয়া’...(বাবার পংক্তি)
তো ‘...’ দিয়ে দিলেন সিঁদুর!!!
অপারেশন সিঁদুর!!!”
তবে এ পর্যন্তই নয়, পোস্টের একেবারে শেষেও হরিবংশ রাই বচ্চনের একটি কবিতার অংশ উদ্ধৃত করেছেন অমিতাভ। তিনি একেবারে শেষে লিখেছেন, “জয় হিন্দ, জয় হিন্দ কি সেনা/ তু না থামেগা কহিঁ, তু না মুড়েগা কভি, তু না ঝুকেগা কভি/ কর শপথ, কর শপথ, কর শপথ! অগ্নিপথ! অগ্নিপথ! অগ্নিপথ!!!” (জয় হিন্দ, জয় হিন্দের সেনা, তুমি কোথাও থামবে না, তুমি কোথাও ফিরবে না, তুমি কোথাও মাথা ঝোঁকাবে না, কর শপথ, অগ্নিপথ)।
অমিতাভ এই পোস্টও করেছেন একটি বিশেষ নম্বর দিয়ে, যেমন তিনি প্রতি বার করে থাকেন। কিন্তু গত কয়েকটি পোস্টে শুধু নম্বর ছিল। কোনও বক্তব্য ছিল না। এ বারের বক্তব্য থেকেও অনুসরণকারীদের মনে খানিকটা ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, অভিনেতার বাক্যগঠন অনেক স্থানে অসম্পূর্ণ, প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপকে এতখানি প্রশংসা করেছেন অথচ, তাঁর নাম উল্লেখ করলেন না। কেন? এই পোস্ট যখন অমিতাভ করছেন তত দিনে ‘অপারেশন সিঁদুর’ পেরিয়ে গিয়েছে বেশ কিছু দিন। ভারত-পাক সংঘর্ষ অন্য মাত্রা পেয়েছে, ভারতের মাটিতে বেড়েছে হতাহতের সংখ্যা। অবশেষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা হয়েছে। তবে এর পরেও জম্মু-কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী একাধিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করেছে পাক সেনা। কেন এত দেরিতে পোস্ট করলেন অভিনেতা, তা নিয়েও বাড়ছে জল্পনা।