—নিজস্ব চিত্র।
তিনি ফিরলেন। প্রায় বছরখানেক পর আবার বড় পর্দায়। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতার বায়োপিক ‘মানবপ্রেমী মহাপুরুষ’-এ। কিন্তু এত দিন তিনি ছিলেন কোথায়? শেষ ছবি ‘যোগাযোগ’। তারপর তো টলিউডের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বিছিন্ন!
প্রশ্নটা শুনে মৃদু হাসলেন অর্জুন।
‘‘ওই সিনেমাটার পর একটা মেগা সিরিয়ালে কাজ করেছিলাম। গান, কবিতা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ‘অর্জুনের অ-কবিতা’ বলে একটা বই বেরোল। এই সিনেমাটাতেও আমার লিপে আমার গান আছে। চারটে অ্যালবাম করলাম। তার মধ্যে দুটো স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্তের সঙ্গে,’’ বলছিলেন অর্জুন চক্রবর্তী।
অনেকেই তো বলেন গানে আপনার মাইলেজ পাওয়ার আসল কারণ হলেন স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। প্রশ্ন শুনে একটু থমকালেন। তারপর বললেন ‘‘অফকোর্স। ও থাকায় রবীন্দ্রসঙ্গীতে মাইলেজ তো হয়েইছে। শুনুন, আমাদের বহু দিনের আলাপ। ১৯৮৫ সাল থেকে আমি ওকে চিনি। স্বাগতালক্ষ্মীর কাছেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখেছি, এটা ঠিক। স্বাগতালক্ষ্মী আমাকে আবিষ্কার করেছে, এটা ওর ক্রেডিট। কিন্তু দেখুন, গানটা না জানলে তো বিশ্বভারতী থেকে, এইচএমভি থেকে ডাক পেতাম না। কেউ পথ দেখাতে পারে। কিন্তু সুর-তাল-লয় তো একেবারে নিজের।’’
প্রোডিউসার ধরতে পারি না
পরিচালনায় অর্জুন চক্রবর্তীর সিভিটা বেশ ইমপ্রেসিভ। প্রথম জীবনে তিনি যাঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিলেন, তাঁকে দুনিয়া চেনে গুলজার নামে। গুলজারের সঙ্গে চারটি হিট ছবিতে কাজ করেছেন।
২০০৮-য়ে নিজে যখন ‘টলিলাইটস’ ছবিটি পরিচালনা করলেন, তখন গুলজারের কাছে শেখা জিনিসগুলো কাজে লেগেছিল।
সেই ছবি প্রশংসিত হওয়ার পর, পরিচালনায় আর দেখা যায়নি তাঁকে। কারণটা জানালেন অর্জুন স্বয়ং।
‘‘আসল কথা কী জানেন, প্রোডিউসার কী করে ধরতে হয় আজও আমার জানা নেই। ২০০৮-এ প্রযোজকই আমার কাছে এসেছিলেন। এখনও ৬-৭টা স্ক্রিপ্ট রেডি করে বসে আছি। কিন্তু প্রোডিউসার ধরতে গেলে নিজস্বতা জলাঞ্জলি দিয়ে, তার পিছনে পড়ে থাকা, তাকে প্রাধান্য দেওয়া, এগুলো আমার দ্বারা জাস্ট হয় না।’’
ইন্ডাস্ট্রির প্রতি রাগ, অভিমান
গুলজারের সঙ্গে কয়েক বছর কাজের পর আশির দশকের একেবারে শেষে টলিউডে এসেছিলেন অর্জুন। কাজ করেছেন তপন সিংহ, মৃণাল সেনের সঙ্গে। যাঁর বায়োডাটায় এমন সব নাম তাঁর কেরিয়ার গ্রাফ তো আরও শার্প হওয়া উচিত ছিল। প্রশ্নটা শুনে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলেন। তার পর বললেন, ‘‘আমি যে সব পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি, আমার মনে হয় না বাংলায় কেউ এই কম্বিনেশনে কাজ করেছেন। কত রকমের রোল করেছি। আই ডিজার্ভড মোর... কিন্তু টলিউডে অনেক সময় সম্পর্কের উপর নির্ভর করে ক্যাপাসিটি, ক্যাপাবিলিটি বিচার করা হয়।’’
একটু থেমে আবার যোগ করলেন, ‘‘মুম্বইতে স্ক্রিপ্টের যত ভ্যারাইটি, টলিউডে এখনও সেটা নেই। বলিউডে অমিতাভ বচ্চনের যেমন জায়গা আছে, অক্ষয়কুমারেরও আছে। ষোলোটা সুপারস্টার। আবার নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, ইরফান খানেরা আছেন। কারণ বলিউডে স্ক্রিপ্টের ভ্যারাইটি অনেক বেশি। টলিউডে কিন্তু প্রায় প্রত্যেক আর্টিস্টকে সম্পর্কের জোরে নিজের জায়গা করে নিতে হচ্ছে। দক্ষতা প্রমাণের মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্পর্ক! একটা জায়গা পাওয়ার জন্যে এত কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে যে বাই দ্যাট টাইম দে আর লস্ট...’’
খারাপ পিআর স্কিল!
‘‘মাঝে মাঝে কী মনে হয় জানেন, কী যে ক্লিক করল না সেটাই ধরতে পারি না। অহঙ্কার করে বললে, বলতে হয় আই অ্যাম টু গুড ফর দিস ইন্ডাস্ট্রি। আর বিনয় করে বললে বলতে হয় যে, আমার কাঠামোটা ইন্ডাস্ট্রির স্ক্রিপ্টে এখনও ফিট করছে না,’’ স্বগতোক্তির মতো বলছিলেন অর্জুন।
ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলে উঠতে পারি
টালিগঞ্জ পাড়ার এত দিনের বাসিন্দা হয়েও তিনি কেমন যেন মিসফিট! কখনও কি মনে হয় রাগ অভিমান ভুলে নিজেকে একটু পাল্টাই? ‘‘না, পাল্টাতে চাই না। তবে আমি মনে করি যে কোনও সময়ে ফিনিক্স পাখির মতো জ্বলে উঠতে পারি। যেমন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। ও কিন্তু আগেও ভাল অভিনেতা ছিল। এখনও আছে। ‘কহানি’ করার পর লোকে ওকে নতুন করে চিনল। আমি চাই লোকে আমাকেও নতুন করে আবিষ্কার করুক। আই অ্যাম ভেরি হোপফুল। কারণ আমি কাজ জানি। আর ট্রিমেন্ডাস লেভেলের কনভিকশন আছে আমার মধ্যে,’’ বলে একবার বাইরের দিকে তাকালেন...