তিনি পার্টি করেন না। নিজেই বলেন, ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর কোনও বন্ধু নেই। মিডিয়ার সঙ্গেও তেমন যোগাযোগ নেই। তবে কাজের ক্ষেত্রে সে সব ছাপ ফেলতে পারেনি। মুম্বই-কলকাতা দু’জায়গায়ই ব্যস্ত ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত। ‘‘আমি ওই খেজুরটা করতে পারি না। ফোন করে ইন্ডাস্ট্রির লোকদের বলতে পারি না, ‘চলো একটু আড্ডা মারি’। আরে ভাই সকলেই বোঝে, এমনি এমনি কেউ কিছু করে নাকি,’’ বলছিলেন তিনি।
ইন্দ্রনীলের পাকাপাকি ঠিকানা এখন মুম্বই। কলকাতায় ‘কিরীটী’র শ্যুটিংয়ের সময় তাই আস্তানা বালিগঞ্জে বন্ধুর বাড়ি। কথা হচ্ছিল সেখানেই। শ্যুটিং শেষ করে মুম্বইয়ের ফ্লাইট ধরবেন। কলকাতায় কম সময় থাকার দু’টো কারণ। এক, ‘‘বেশিদিন এখানে থাকলে মুম্বইয়ে সকলে বলবে, ‘ইন্দ্রনীল তো কলকাতায় পড়ে থাকে’।’’ তাতে অনেক প্রজেক্ট হাতছাড়া হয়েছে। সেই ভুল আর করতে চান না। তবে দ্বিতীয় কারণটাই মুখ্য। ‘‘আরও বেশি সময় মেয়ের সঙ্গে কাটাতে চাই,’’ বললেন তিনি।
বাংলা ছবি খুব একটা দেখেন না। তবে প্রথম সপ্তাহে দেখে নিয়েছেন ‘বাহুবলী টু’। হিন্দি ছবির জন্য বাংলা ছবির ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, সেটা মানতে নারাজ ইন্দ্রনীল। ‘‘দু’টো বড় বাংলা ছবি একই দিনে রিলিজ করলে ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু একই দিনে রিলিজ করা ‘ফাস্ট অ্যান্ড দ্য ফিউরিয়াস’ বা ‘বাহুবলী’ কি করে বাংলা ছবির দর্শক কাটতে পারে? এই লজিকটা আমি বুঝি না,’’ বলেন তিনি।
তাঁকে দেখতে সুন্দর। অভিনয়ও ভালই করেন। মুম্বইয়ে থেকেও হিন্দি ছবিতে জায়গা করতে পারলেন কই? ‘‘সুন্দর দেখাটা বলিউডে কোনও ফ্যাক্টরই না ভাই। বলিউড ইজ ফ্লাডেড উইথ গুড লুকিং অ্যাক্টর্স।’’ তা হলে কারণটা কি ‘ক্যাম্প’? সেখানে না ঢুকতে পারলে, ছবি আসবে না? ‘‘ধুর, সেটার জন্য বলিউডকে দোষ দিয়ে কী হবে! ক্যাম্প তো টলিউডেও আছে। আমার মনে হয়, বাড়িতেও ক্যাম্প আছে,’’ হাসতে হাসতে বলছিলেন ইন্দ্রনীল।
টলিউডেও যে তাঁকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে না? এতক্ষণ পিছনে ঝুঁকে বসে থাকলেও, এ বার সোজা হলেন। বললেন, ‘‘ওটা আমি নিজে থেকেই কমিয়েছি। মনে করি, মুম্বই আমার বাড়ি। বছরে যখন ছ’-সাতটা বাংলা ছবি করতাম, তখনও শ্যুট শেষ করেই ফিরে গিয়েছি। আমি ওখানেই কাজ করতে চাই। বলিউড না হোক, ন্যাশনাল টেলিভিশন তো আছে।’’ একটু থেমে যোগ করলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম, টিভিতে কাজ করব আর ভাল বাংলা ছবি করব। ভাল ছবি তো আর ভাল টাকা দেয় না। এ দিকে সংসার চালাতে হবে। তাই যা ছবিই আসত করতে লাগলাম। একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, ধুর এর থেকে সিরিয়ালই ভাল।’’
আবার এখন টলিউডে কাজ করছেন। তার মানে ‘কিরীটী’ মনে ধরেছে? ‘‘গোয়েন্দা করার ইচ্ছেটা ছিলই। আমি ডাই হার্ড ফেলুদা ফ্যান। বেণুদা (সব্যসাচী চক্রবর্তী) যখন ফেলুদা ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিল, আমি বাবুদাকে (সন্দীপ রায়) ফোন করেছিলাম। এতটাই পিছনে পড়েছিলাম। কিন্তু সেটা যখন হল না, কিরীটীর অফার পেলাম। স্ক্রিপ্টটাও ভাল লেগে গেল। আর মনে হল, চরিত্রটার উপর জাস্টিস করা হচ্ছে,’’ এক নিঃশ্বাসে বলেন ইন্দ্রনীল। টলিপাড়ায় কিন্তু জোর গুজব বেশ ভাল টাকাই পাচ্ছেন... উত্তর পেতে দেরি হল না। হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘যারা বলছে, তারা কার সঙ্গে তুলনা করে বলছে ভাই!’’
আরও পড়ুন:ফারহানের সঙ্গে সম্পর্কের কথা শুনলে হাসি পায়
অনেকেই বলেন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পেতে পিআর স্কিল খুব জরুরি। কিন্তু ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত তো নিজে থেকে কাউকে ফোন করেন না! ‘‘আমার ওই ক্ষমতাটাই নেই,’’ বলেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও বন্ধুও নেই, যার সঙ্গে আড্ডা মারবেন? ‘‘একবার জিতের সঙ্গে ডিনার করেছি। তাও তো বরখা (স্ত্রী) আর জিতের বৌ ছিল তাই। শুধু কলকাতা না, মুম্বইয়েও আমার কোনও ইন্ডাস্ট্রির বন্ধু নেই।’’ মুখচোরা স্বভাবের জন্যই কি সৃজিত মুখোপাধ্যায় মুম্বই গেলেও ফোন করেননি? ‘‘দেখুন, সৃজিত আর আমি দু’জনেই প্রফেশনাল। আমাকে যখন দরকার মনে হয়েছে, তখন কাস্ট করেছে। চেয়ে কাজ নেওয়া আমার ভাল লাগে না,’’ সোজাসাপটা উত্তর তাঁর।
আর এতদিন ধরে ক্লিন ইমেজ বজায় রাখার সিক্রেটটা কী? ‘‘আমি জানি প্রায়োরিটি কোনটা। ফ্যামিলি ইজ দ্য মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট থিং। কাজ না-ও থাকতে পারে। খারাপ সময় আসতে পারে। ফ্যামিলি সব সময় পাশে থাকবে,’’ বলেন তিনি। কিন্তু অভিনেতাদের একটা ‘পার্কস’ তো মেয়েদের অ্যাটেনশন, ফ্লার্টিং সেগুলো সামলান কী করে? ‘‘শুধু মেয়েরা কেন! ছেলেরাও ফ্লার্ট করে,’’ মুচকি হেসে বলেন ইন্দ্রনীল। যোগ করলেন, ‘‘এনজয় করি না বললে ভুল বলা হবে। তবে ওই যে বললাম, প্রায়োরিটি ঠিক করে নিয়েছি।’’
ইন্দ্রনীলের প্রায়োরিটি এখন মেয়ে মীরা। বলছিলেন, ‘‘বেড়াতে গেলেও ভাবি, মীরার কোথায় গেলে ভাল লাগবে। নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ এখন ব্যাকসিটে।’’ কাজের ক্ষেত্রে কোনও ‘প্ল্যান’ নেই তাঁর। যেমন প্রোজেক্ট আসবে, তেমন যেতে চান। ‘‘হিন্দি ছবি করতে চাই বা হলিউডে একজন এজেন্ট ধরতে হবে... এমনটা ভাবি না,’’ বলেন তিনি। ঘুরে বেড়াতে চান। কারণ, ‘‘গাড়ি-বাড়ির কোনও শেষ নেই। স্মৃতিতে যেটা থেকে যাবে, সেটাই আসল।’’
কারও সাহায্য নয়। কারও ‘ফেভার’ না। ‘‘কেউ যেন বলতে না পারে, আমার জন্য ইন্দ্রনীল এই জায়গায়। হওয়ার থাকলে, ঠিক হবেই।’’ যেমন করে টিভিতে কাজ করতে করতে একদিন সুযোগ পেয়েছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর ‘জানালা’য়। অথবা সুজয় ঘোষ ফোন করেছিলেন ‘কহানি’র জন্য। ইন্দ্রনীল বিশ্বাস করেন, ‘‘ওয়াক্ত সে পহেলে অউর নসিব সে জাদা কিসিকো কুছ নেহি মিলতা।’’