তিনি ‘অদ্রিজা’। তিনি ‘ঝিলিক’। কিন্তু ‘রিল’ চরিত্রের নামের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছে ‘রিয়েল’ নামটাই। তিনি শ্রীতমা ভট্টাচার্য। এমন সুন্দরী জাঁদরেল ভিলেন এই মুহূর্তে টলিউডে খুব একটা নেই। কখনও প্রেম, কখনও বা কেরিয়ার নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় ‘ইচ্ছেনদী’র অদ্রিজা। শুটিংয়ের মাঝে লাঞ্চ ব্রেকে অন হল রেকর্ডার।
পাবলিকের হাতে মার খেয়েছেন কখনও?
(প্রচণ্ড হেসে) কেন বলুন তো?
না! মানে আপনি পর্দায় যে পরিমাণ নেগেটিভ, মেঘলার ক্ষতি করার জন্য যা যা করেন, তাতে তো রাস্তাঘাটে মার খেয়ে যাওয়া উচিত।
থ্যাঙ্কস ফর দ্য কমপ্লিমেন্ট। এই চরিত্রটা করে আমি খুব ভাল ফিডব্যাক পাই। কোথাও শো করতে গেলে স্টেজে দাঁড়িয়ে আগেই সারেন্ডার করে দিই, তোমরা আমাকে মারবে না তো?
চরিত্রটা করতে রাজি হয়েছিলেন কেন?
কিছু কিছু চরিত্র থাকে যাদের নিয়ে লেখিকারা এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালবাসেন, অদ্রিজা তেমনই একটা চরিত্র। ওর নিজের একটা লজিক আছে যে, কেন ও খারাপ। তবে মাঝে মাঝে একঘেয়েও লাগে।
কেন?
আসলে লেখিকা লীনা গঙ্গোপাধ্যায় লোভ বাড়িয়ে দিয়েছেন। একই ট্র্যাকে গল্প চললে তখন মনে হয় এ বার একটু অন্য রকম হলে ভাল।
আরও পড়ুন, ‘ইন্ডাস্ট্রি আমাকে ইউজ করতেই পারত, করেনি’
এখনকার সিরিয়ালে কনটেন্টে বাস্তবের সঙ্গে কতটা মিল?
দেখুন পজিটিভ, নেগেটিভ দু’রকমই আছে। সিরিয়ালে অডিয়েন্সকে তো লেসন দেওয়া হয়। যাঁদের মেন্টালিটি ঠিক নয়, সেটা তাঁরা মিসইউজ করেন।
ঠিক বুঝলাম না।
‘ইচ্ছে নদী’তেই দেখানো হয়েছে গাড়িতে তুলে একটি মেয়ের শ্লীলতাহানি করা হয়েছে। সেরকম তো বাস্তবে হামেশাই হচ্ছে। তাই বাস্তবের সঙ্গে মিল তো আছেই।
কিন্তু এই যে নায়কের দু’টো করে বউ, নায়িকার দু’টো করে বর বা শাশুড়ি-বউমার নিরন্তর ঝগড়া—
(প্রশ্ন থামিয়ে দিয়েই) যতটা দেখানো হয় ততটা হয়তো বাস্তবে হয় না। তবে গল্প তো। একটু মশলা দিলে লোকে খাবে ভাল।
অভিনেতাদের কি গল্প নিয়ে সত্যিই কিছু করার থাকে?
ফেসবুকে আমাকে অনেকে বলেন, অদ্রিজা কেন এত খারাপ? কেন অনুরাগকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল? কিন্তু এটা অডিয়েন্সকে বুঝিয়ে উঠতে পারি না যে, আমরা নিরুপায়। পুতুল মাত্র। আমাদের দিয়ে করায় বলেই আমরা করি। কিন্তু এটাও ঠিক ‘মা’ সিরিয়ালের ‘ঝিলিক’-এর মতো চূড়ান্ত পজিটিভ চরিত্র করার পর আমি একটু অন্যরকম কাজই চেয়েছিলাম। আর নেগেটিভ চরিত্র তো থাকবেই। সেটা না থাকলে তো পজিটিভটা এত ভাল লাগবে না। তাই আমাদের ওপর কোনও কিছু জোর করা হয় না।
অনেকে বলছেন, বাংলা সিরিয়াল নাকি এখন এতই খারাপ যে একটানা বসে দেখাই যায় না। কী বলবেন?
যাঁরা বলছেন, তাঁরাই কিন্তু সন্ধেবেলা বসে পড়ছেন টিভির সামনে। ‘মা’ চলেছে সাড়ে পাঁচ বছর। তখন আমার বন্ধুরাই রোজ বলত, কবে শেষ হবে? আর তো নেওয়া যাচ্ছে না। আবার তারাই সেটা রোজ দেখত, আমাকে ফিডব্যাক দিত। আমি তো এদের নিজের চোখেই দেখেছি।
আরও পড়ুন, ‘বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ডাকলেও যে লেজ উঠিয়ে যেতে হবে, তার কোনও মানে নেই’
শ্রীতমা আর ‘অদ্রিজা’র মধ্যে মিল কোথায়?
জেদ। আমি যেটা মনে করব সেটা করবই। ‘অদ্রিজা’ও খুব জেদি।
শুধুই জেদ? শোনা যায় শ্রীতমার প্রেমের গ্রাফটাও বেশ গোছানো?
(লজ্জা পেয়ে) ধুস। এ সব আবার কে বলল?
সামনেই তো ভ্যালেন্টাইনস ডে। কী প্ল্যান সে দিন?
কোনও প্ল্যান নেই। আর আমি মনে করি প্রেমের জন্য সেরা দিন হল দোল। ভ্যালেন্টাইনস ডে নয়।
‘ইচ্ছেনদী’র দুই বোন, মেঘলা ও তিতি।
বেশ, তা হলে দোলের প্ল্যানটাই বলুন।
এখনই কোনও প্ল্যান ঠিক করিনি।
তা সেই বিশেষ মানুষটির কোনও আবদার নেই?
আপনাকে কে বলল এসব?
সোর্স তো বলা যাবে না।
(মুচকি হেসে) এসব নিয়ে আমি কথা বলব না। মা পড়বে ইন্টারভিউটা। খুব বকবে।
প্লিজ…। এখনও মা বকবেন?
আচ্ছা বলছি। ছ’বছর আগে ভ্যালেন্টাইস ডে-র দিনই আমাকে প্রোপোজ করেছিল সে। আর অভিনয় করতে এসে অনেক কিছু ওর থেকে শিখেছি। ব্যাস, এটুকুই। আর কিছু বলব না (হাসি)।
আরও পড়ুন, ‘পোশাক কোনও কোনও ক্ষেত্রে উত্তেজনা তৈরি করে, এটা মেয়েরাও জানে’
বিয়ে করছেন কবে?
এখনই কোনও প্ল্যান নেই। কম করে পাঁচ বছর তো বটেই। আমার আর ওর মতিভ্রম না হলে বিয়ে করব।
বাহ! আবার কেরিয়ারে ফিরি। কোনও খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে আপনার?
খারাপ অভিজ্ঞতা হয়েছে বলেই আজ হয়তো আমি এই জায়গায়।
সেটা কী রকম?
দেখুন, আমি তো অভিনয়টা করতে করতে শিখেছি। অভিনয়ের কোনও ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। ‘মা’-এর শুটিংয়ে এমন পরিচালক পেয়েছি যিনি বলেছেন, ফ্লোর থেকে বেরিয়ে যাও, তোমার শুটিং হবে না আজকে, প্যাক আপ। তখন কষ্ট হত। কিন্তু এখন মনে হয়, ভাগ্যিস ওই ঘটনাগুলো হয়েছিল।
প্রায় আট বছর কাজ করছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার বন্ধু কে?
এখানে কোনও বন্ধু নেই। বরং বলব, খুব ভাল একজন গার্জেন পেয়েছি। মোটামুটি সে আমার শুভাকাঙ্খী। আমার ‘অপা মা’। অপরাজিতা আঢ্য।
তিনি বন্ধু নন?
না। সব কিছু শেয়ার করি তাঁর সঙ্গে, কিন্তু তিনি বন্ধু নয়।
তা হলে ইন্ডাস্ট্রিতে কারও বন্ধু হয় না, বলছেন?
ইন্ডাস্ট্রিতে বন্ধু হয় হয়তো, আমার হয়নি। আমার বন্ধুরা ইন্ডাস্ট্রির বাইরের। কারণ প্যাক আপের পর আর কলিগদের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ থাকে না।
আপনার পছন্দের অভিনেতা কে?
অনেকে আছেন। কিন্তু কারও কথা স্পেসিফিক করে বলতে চাই না। কারণ কাজটা তো সবার সঙ্গেই করতে হবে (হাসি)।
ছবি: অনির্বাণ সাহা।