কার সঙ্গে কতটা মিশব, সেই সীমারেখাটা আমিই টানি

তা বলে তিনি রূঢ় নন। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের বাংলা ছবির শ্যুটিংয়ে শহরে তনুজা। কথা বললেন আনন্দ প্লাসের সঙ্গেপরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নতুন বাংলা ছবি ‘সোনার পাহা়ড়’-এর শ্যুটিংয়ের জন্য কলকাতায় এসেছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী তনুজা। ঢিলেঢালা প্রিন্টেড শার্ট, ব্ল্যাক ট্রাউজার আর গলায় অরেঞ্জ স্কার্ফ, ঠোঁটে হাল্কা করে লিপগ্লস। সাজ বলতে এটুকুই।

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:০০
Share:

ছবি: সুদীপ্ত চন্দ

সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে মাথাব্যথা নেই। টেকনোলজি তাঁর কাছে ‘আবর্জনা’। তবে সাক্ষাৎকারের মাঝে প্রতিবেদক কেশে উঠলে, নিজেই স্মার্টফোন ঘেঁটে বার করলেন কাশি কমানোর দাওয়াই। বারবার করে বললেন, মনে করে যেন সেই পথ্য নেওয়া হয়।

Advertisement

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের নতুন বাংলা ছবি ‘সোনার পাহা়ড়’-এর শ্যুটিংয়ের জন্য কলকাতায় এসেছেন বর্ষীয়ান অভিনেত্রী তনুজা। ঢিলেঢালা প্রিন্টেড শার্ট, ব্ল্যাক ট্রাউজার আর গলায় অরেঞ্জ স্কার্ফ, ঠোঁটে হাল্কা করে লিপগ্লস। সাজ বলতে এটুকুই। সেলুলয়েডের ‘রাজকুমারী’র আভরণের প্রয়োজন হয় না। বলেই দিলেন, সাক্ষাৎকারের মাঝেই ছবি তোলা হোক। আলাদা করে তিনি পোজ দেবেন না।

Advertisement

প্র: কত বছর পরে কলকাতায় এলেন?

উ: তিন বছর হবে। (একটু ভেবে) শেষ বোধহয় চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছিলাম। যেখানে অমিত, শাহরুখও ছিল...

প্র: ওঁরা তো প্রতি বছরই আসেন...

উ: ও বাবা! তাই নাকি? ওঁরা প্রতি বছর আসেন? নাহ, আমার অত ধৈর্য নেই (হাসি)।

প্র: এই ছবিটা কেন বাছলেন?

উ: স্ক্রিপ্টটা খুব ভাল বলে। আর একটা বিষয়ও দেখি, গল্প বলা, চরিত্র বোঝানোর উপর পরিচালকের কতটা দখল আছে। আমি চরিত্রটা নিয়ে অবশ্যই ভাবি। তবে পরিচালক তো শেষ কথা বলেন। তাই তার মুনশিয়ানাটাও জরুরি। মানিকদা যদিও শিল্পীদের খুব একটা স্বাধীনতা দিতেন না। ওঁর কথাই শুনতে হতো (হাসি)।

প্র: পরমব্রতের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

উ: খুব ভাল। আসলে ও‌ নিজেও অভিনেতা তো। শিল্পীর কাছ থেকে ওর কী চাই, সেটার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। আমি হয়তো কোনও কিছু এক ভাবে করলাম। ওর মনমতো না হলে বুঝিয়ে দেয়, ও ঠিক কী চাইছে।

প্র: এখনকার বাংলা ছবি দেখেন?

উ: সৌমিত্র ছিল বলেই ‘বেলাশেষে’ দেখেছি। ওর সঙ্গে যোগাযোগ বজায় আছে। এই ছবিতে আমাদের একসঙ্গে দৃশ্যও আছে।

প্র: আর হিন্দি ছবি?

উ: ‘পিকু’, ‘থ্রি ইডিয়টস’ ভাল লেগেছে। সাধারণত আমি আমার আইপ্যাডেই ছবি দেখি।

প্র: হিন্দি ছবিতে আর কাজ করবেন না?

উ: আসলে তেমন কোনও প্রস্তাব এখনও পাইনি। আর বলিউডে এখন এত নতুন ধরনের ছবি হচ্ছে, সিনিয়র শিল্পীদের তেমন জায়গা নেই। আমার কাছে চরিত্র অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দু’মিনিটের চরিত্র করতেও রাজি, কিন্তু ছবিতে তার একটা তাৎপর্য থাকতে হবে।

প্র: সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখনকার অভিনেত্রীদের সঙ্গে ভক্তদের যোগাযোগ বেড়েছে। আপনার সময়ে এমনটা হলে কি ভাল হতো?

উ: আমাদের সময়ে ফোনটাও ছিল না (হাসি)। কী হতে পারত, কী হলে ভাল হতো, এ সব নিয়ে আমি একদম ভাবি না। ‘কিন্তু’ শব্দটাতেও আমার বেশ আপত্তি রয়েছে। কখনও-সখনও অবশ্য বলেও ফেলি। অনেকে বলে, আমি নাকি আমার প্রাপ্যটুকু পাইনি। আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, আদৌ পাওয়ার কিছু ছিল কি? আমি আমার কাজ করেছি। আমার জায়গা তৈরি করেছি। আমার কোনও আফসোস নেই। আর আমি মনে করি, এই পৃথিবীতে সকলের জায়গা ও কাজ নির্দিষ্ট করা আছে। হিন্দি, বাংলা, মরাঠি, গুজরাতি, মালয়ালম ভাষায় ছবি করেছি। প্রতিটা ভাষার নিজস্ব চলন আছে। এখনও আমি সেই কাজটাই করছি। মানুষ আমি ভালবাসি। তবে কতটুকু মিশব, সেই সীমারেখাটাও আমিই টানি।

প্র: কাজল-তনিশাকে কখনও অভিনয়ের বিষয়ে গাইড করেছেন?

উ: আমি অভিনয়ের কিছুই জানি না। কী শেখাব (হাসি)? অভিনয় শেখানো যায় না। কাজ করতে করতে শিখতে হয়। জীবনে চলতে গেলে যে মূল্যবোধের দরকার হয়, আমি ওদের সেটা শিখিয়েছি। সিদ্ধান্ত নিতে শিখিয়েছি। প্রতিকূল অবস্থা কী ভাবে কাটিয়ে উঠতে হয়, তার শিক্ষা দিয়েছি। বাকিটা ওদের জীবন, ওরাই ভাল বোঝে। আমি আমার মতো জীবন কাটাই। স্মোক-ড্রিংক করি বলে অনেকে আমাকে পাশ্চাত্যমনস্ক ভাবে। আরে, আমি গ্রামে গিয়ে দেখেছি অধিকাংশ মহিলা কিন্তু মদ-বিড়ি খেতে অভ্যস্ত। এতে পাশ্চাত্যের সঙ্গে কী সম্পর্ক! কারও সঙ্গে দেখা হলে আমি কিন্তু ‘নমস্কার’ই বলি।

প্র: অবসর সময় কী ভাবে কাটান?

উ: অনেক বই পড়ি। বাগানে গাছেদের সঙ্গে কথা বলি। আর অনেক সময়ে চুপচাপ বসে থাকি। কিছু না ভাবার চেষ্টা করি। অনেক বছর ধরেই এটা করার চেষ্টা করছি। কারণ কিছু না কিছু ভাবনা আমাদের মাথায় চলেই আসে। আর ভাবনা-চিন্তা মানেই বস্তুভিত্তিক ভাবনা। আমি তার ভার বইতে চাই না (হাসি)।

প্র: কলকাতায় এসে বিশেষ কোনও জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছে?

উ: এই তো দক্ষিণেশ্বর গিয়েছিলাম। খুব ভাল ভাবে মায়ের দর্শন হয়েছে (হাসি)। এর পর লেক কালীবাড়ি যাব। কালীঘাটও যাব।

প্র: নাতি-নাতনিদের কাছ থেকে কি টেকনোলজি শিখছেন?

উ: একদম। আমি তো নাইসাকে (কাজলের মেয়ে) বার বার বলি এটা-ওটা দেখিয়ে দিতে। ও বলে, ‘নানি, কতবার তোমাকে শেখালাম। আমি না থাকলে কে দেখাবে বলো তো?’ আমি বলি, তোমার মা বা ভাই (হাসি)। আমার আট বছরের নাতি কম্পিউটারের সবটা জানে। মেয়েদের থেকেও কত কিছু শিখেছি। আগে খুব রেগে যেতাম। একদিন শ্যুট থেকে ফিরেছি। মুখ থমথমে। কাজল ঠিক বুঝতে পেরেছিল। বলছে, মা তুমি বারবার কেন হারিয়ে ফেলো ওই জিনিসটা? একেবারেই হারিয়ে ফেলতে পারো। প্রথমে বুঝিনি ও কী বলছে। পরে বুঝলাম আমার মেজাজের কথা বলছে। ছোটদের থেকেই তো আমরা বেশি শিখি (হাসি)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন