বর্ষীয়ান বলিউড অভিনেতা অনুপম খের।—ফাইল চিত্র
পূর্বসূরি গজেন্দ্র চৌহানকে নিয়ে বহু বিতর্কের পরে এই পদে আনা হয়েছিল তাঁকে। পুণের ‘ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটউট অব ইন্ডিয়া’ (এফটিআইআই)-র সেই চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন বর্ষীয়ান বলিউড অভিনেতা অনুপম খের। গত কাল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌরকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন অনুপম। জানিয়েছেন, আমেরিকায় একটি টিভি শো-য়ে অভিনয় করার জন্য আগামী তিন বছরের বেশির ভাগ সময় সে দেশে থাকতে হবে তাঁকে। দেশের বাইরে থেকে এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সামলানো উচিত হবে না বলে লিখেছেন অনুপম। সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশনের চেয়ারম্যান আর ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার ডিরেক্টরের পদও সামলেছেন তিনি।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী রাঠৌর অনুপমের ইস্তফাপত্র গ্রহণ করেছেন। প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সুষ্ঠু ভাবে সামলানোর জন্য অভিনেতাকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। এ দিন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে অনুপম জানান, পরবর্তী চেয়ারম্যানের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কাছে দু’-তিনটি নাম প্রস্তাব করেছেন তিনি।
তবে অনেকেই মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদীর প্রবল অনুরাগী হিসেবে পরিচিত অনুপমের পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তের পিছনে অন্য কিছু কারণও থাকতে পারে। সদ্য ‘অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’-এর শুটিং শেষ করেছেন তিনি। যেখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের চরিত্রে অভিনয় করেছেন খের। অল্প দিন পরেই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা। কেউ কেউ বলছেন, এখন কিছুদিন ছবির প্রচারেই মন দেবেন তিনি। ক’দিন আগে যেমন টুইটারে মনমোহনের প্রশংসা করে লিখেছেন, ‘‘এই চরিত্রে অভিনয়ের আগে আমিও আপনাকে ভুল চিনেছিলাম। কিন্তু ইতিহাস শেষ পর্যন্ত আপনাকে ভুল বুঝবে না।’’
অনুপম নিজে মোদীর ভক্ত। তাঁর স্ত্রী বিজেপি সাংসদ। তাঁর মুখে মনমোহনের প্রশংসা কেন? একটা মত হল, অনুপম কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করার চেষ্টা করছেন। এমনিতে যে কোনও বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বদা সরব অনুপম গত আট-ন’মাস ধরেই বেশ চুপচাপ। সেটা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আবার বাকিরা বলছেন, এ সবই প্রচারের কৌশল। আসলে গাঁধী পরিবারের সঙ্গে মনমোহনের ‘সংঘাত’-কাহিনি প্রচার করে বিজেপির সুবিধা করে দেওয়াই লক্ষ্য। তবে নিজে সরকারি পদে থেকে লাগাতার মনমোহনের বেশে উপস্থিত হওয়া, তাঁর হয়ে কথা বলাটা জনসমক্ষে অস্বস্তির হতে পারে। পদ ছাড়ার সেটাও কারণ হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁদের মত।
সেই সঙ্গেই উঠেছে মিটু-র প্রসঙ্গ। নব্বইয়ের দশকে এক জুনিয়র অভিনেত্রী অনুপমের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছিলেন। এখন যখন মিটু আন্দোলন জোরদার, সংবাদমাধ্যমে সেই ঘটনা ফের প্রকাশ্যে এসেছে। নিন্দুকেরা বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ উঠতে পারে ভেবেই হয়তো আগেভাগে সরে এসেছেন অনুপম।
অনুপম নিজে অবশ্য কাজের কথাই বলছেন বারবার। তাঁর কথায়, ‘‘আমি বিদেশে অনেকটা সময় থাকলে ছাত্র-ছাত্রী বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত অন্যদের অসুবিধে হবে। সেটা চাইনি বলেই সরে আসার সিদ্ধান্ত। তবে ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্য বা পরামর্শ প্রয়োজন হলে সব সময় আছি।’’