Rituparna Sengupta

Bappi Lahiri death: বাপ্পিদার পোশাক নিয়ে বহু বিতর্ক, কিন্তু এক জন সুরের রাজাকে ওই জৌলুসেই মানাত: ঋতুপর্ণা

আমি যদি ভুল না হই, বাংলায় শেষ রেকর্ডিং বোধ হয় আমার সঙ্গেই করে গেলেন তিনি। দু’মাস আগে আমাকে ডেকে গান গাওয়ার জন্য জোর করলেন।

Advertisement

ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:০১
Share:

বাপ্পিকে নিয়ে কলম ধরলেন ঋতুপর্ণা।

গত রাত থেকেই এক অজানা উদ্বেগ নিয়ে শুতে গিয়েছিলাম। কিছুতেই ঘুম আসছিল না। বারবার বাপ্পিদার মুখটা মনে পড়ছিল। রেমার কাছে খবর নিলাম। জানলাম, বাপ্পিদার শরীরটা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। ভোর হতে না হতেই সেই খবর, বাপ্পিদা নেই।

Advertisement

আমি কোনও দিনও বাপ্পি লাহিড়ি হিসেবে দেখিনি ওঁকে। ছোট থেকেই আমাদের বাড়িতে যাতায়াত ছিল বাপ্পিদার। আমার মাসির পরিবারের সঙ্গে ওঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ছিল। মেসোকে বাপ্পিদা ‘গুরু’ হিসেবে মানতেন। সেই থেকেই আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর হয়। একই পরিবার যেন।

এত গুণী মানুষ, অথচ যখন মিশতেন, মনে হত না, কোনও খ্যাতনামী কারও সঙ্গে কথা বলছি। ওঁর পরিবারটাও সে রকম। ইদানীং নাতির কথা বলতেন। ও যে ভাল কাজ করছে, নিজের জায়গা তৈরি করেছে, তা নিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলেন বাপ্পিদা।

Advertisement

বাপ্পিদা এমন প্রচুর কাজ করেছেন, যা অনেকেই আমরা জানি না। হলিউডে বিশেষ জায়গা ছিল ওঁর। ‘ডিজনি’-র ‘মোয়ানা’ চরিত্রের জন্য যে বিশেষ আবহসঙ্গীত আমরা শুনতে পাই, তা-ও ওঁরই সৃষ্টি। সে কথা হয়তো কোনও সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে বলেননি। কিন্তু নিজের কাজটা মন দিয়ে করে গিয়েছেন তিনি।

বাপ্পিদার সোনা-প্রীতি নিয়ে মানুষের অনেক বক্তব্য রয়েছে জানি। কিন্তু উনি তো এক জন ডিস্কো কিং ছিলেন, সেই জৌলুস, সেই আবেগ নিজের পোশাকে ধরে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। নিঃসন্দেহে এক ব্যতিক্রমী সত্তা। তবে লিখতে লিখতে এটাও মনে হচ্ছে, শুধুই কি এক জন ডিস্কো কিং? একেবারেই নয়। তাঁর সুরে, ছন্দে যে ধরনের বৈচিত্র খুঁজে পাওয়া যায়, বারবার মুগ্ধ করেছে আমাকে।

আমার অজস্র ছবিতে তিনি সুর দিয়েছেন। আগামী ছবি ‘লবঙ্গলতা’-তে বাপ্পিদার শিল্পের ছোঁয়া আছে।

আমি একেবারেই আর লিখতে পারছি না। কান্না পাচ্ছে খুব। আমি যদি ভুল না হই, বাংলায় শেষ রেকর্ডিং বোধ হয় আমার সঙ্গেই করে গেলেন তিনি। দু’মাস আগে আমাকে ডেকে গান গাওয়ার জন্য জোর করলেন। আমি গান গাইব, আর সে গান রেকর্ড হবে, ভাবতেই পারিনি! কিন্তু যে ভাবে ভরসা জোগালেন উনি, মনে হল, একটু গেয়ে দেখিই না। গানের রেকর্ডিংয়ে কী ভাবে গাইব, কতটা গাইব, সমস্ত কিছুতে নিঁখুত যত্ন ছিল বাপ্পিদার।

সঙ্গীতে অসীম শূন্যতা আজ। আমার ব্যক্তি জীবনেও নিঃশব্দ হাহাকার। এগুলি লিখে বোঝানো যায় না। জন্ম থেকে উনি আমার পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু পারিবারিক সূত্রে, কাজের সূত্রে, নিত্য যাতায়াতের মাধ্যমে য়ে নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়েছিল, তা ঝট করে খসে পড়ল। কতই বা বয়স? ৬৯। আর কিছু দিন থাকতে পারত না বাপ্পিদা?
এ বার রওনা হব মুম্বইয়ের উদ্দেশে। যে মুম্বইয়ে বাপ্পিদা আর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন