ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ, ককপিট এবং প্রজাপতি বিস্কুট ছবির দৃশ্য।
দুগ্গা ঠাকুর আসার আগেই এসে যাচ্ছে কার্তিক ঠাকুর। সঙ্গে সত্যান্বেষী। পড়ছে সার্কাসের রঙিন তাঁবুও। এর সঙ্গে হলিউড স্টাইলে ফ্লাইট টেকঅফও করবে। দর্শকের কঠিন পরীক্ষা, কোন ছবিটা আগে দেখবেন। পুজোর বাজেট পরিকল্পনা বরং এখনই সেরে রাখুন। ষষ্ঠীর ঠিক চার দিন আগেই হলভর্তি ছবি! রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পাশাপাশি সিনেমা দেখার জন্য আলাদা বাজেট রাখতেই হবে।
গত বছরখানেক ধরে অঞ্জন দত্ত তাঁর ব্যোমকেশ নিয়ে পুজোয় আসছেন। ব্যোমকেশের মুখ বদলে গেলেও পুজো স্পেশ্যাল আগমন বজায় রয়েছে। যিশু সেনগুপ্তকে দর্শক সত্যান্বেষী হিসেবে পছন্দ করেছেন। এ বারের গল্প ‘ব্যোমকেশ ও অগ্নিবাণ’। যাঁরা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় পড়েছেন, তাঁরা জানেন, গল্পটা বেশ জমাটি। আর অঞ্জনও তাঁর ‘দুর্নাম’ কাটাতে বদ্ধপরিকর। বলা হয়, তাঁর ব্যোমকেশে গ্র্যাঞ্জার কম। পরিচালকের দাবি, এ বার আর সেটা বলা যাবে না। বছর কয়েকের বক্স অফিস পরিসংখ্যানে দেখা যাবে, ব্যোমকেশ প্রতিবারেই ভাল ব্যবসা করেছে। সুতরাং এ বারেও ব্যোমকেশের ভাগ্যে লক্ষ্মীলাভের আশা রয়েছে প্রযোজক কৌস্তুভ রায়ের। বাদবাকি ছবি নিয়ে চাপ নেই? ‘‘প্রতিবারেই অনেকগুলো করে ছবি থাকে। সমস্যা হয় না তো। আর ব্যোমকেশ যে পুজোতে আসবে সেটা বাকি নির্মাতারাও জানেন, দর্শকও। এ বারেও আমাদের ছবি হিট হবে,’’ আত্মবিশ্বাসী গলায় বললেন কৌস্তুভ।
ব্যোমকেশের যদি লক্ষ্মীলাভের আশা থাকে, তা হলে ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর কার্তিক সহায়! অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় একদম আটপৌরে গল্প নিয়ে আসছেন পুজোতে। ছবির গান, ট্রেলার ইতিমধ্যেই হিট। তাঁর ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর মিঠে স্বাদ এখনও দর্শকের মুখে লেগে রয়েছে। তবে কার্তিক সহায়ের চেয়ে বড় হল ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর পিছনে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়-অতনু রায়চৌধুরী রয়েছেন। তাঁদের বিপণন বুদ্ধি যে তুখোড়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বড় বড় ছবির ভিড়ে দুই নবাগতকে দিয়ে পুজোর বাজিটা বেশি ঝুঁকির হয়ে গেল না কি? শিবপ্রসাদ অবশ্য ঝুঁকির বিষয়টাকে গুরুত্ব দিলেন না, ‘‘আমার সিনেমা বোধ বলছে, রথী-মহারথীদের ভিড়ে নতুন নায়ক-নায়িকাকে দর্শকের ভালই লাগবে।’’ আট মাস আগেই তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ পুজোয় মুক্তি পাবে। ‘‘ডিস্ট্রিবিউটর, এক্সিবিটরদের সঙ্গে কথা বলা আছে। আর কোন হাউস থেকে ছবিটা আসছে সেটা দেখে মাল্টিপ্লেক্স। আমাদের কাছে ‘বেলাশেষে’, ‘প্রাক্তন’, ‘পোস্ত’র মতো ছবি। সে ক্ষেত্রে হল পাওয়ার সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না,’’ বললেন শিবপ্রসাদ। ‘প্রজাপতি বিস্কুট’-এর বড় সুবিধে, এর বাজেট কম। শিবপ্রসাদের কথায়, ‘‘বাকিদের তুলনায় আমাদের ছবির ঘরানা আলাদা। আর যে সব ছবির গান ভাল হয়, পুজোতে তার ব্যবসাও ভাল হয়।’’
চলচ্চিত্র সার্কাস ছবির একটি দৃশ্য।
বাঙালি সাহিত্য, বাঙালি ঘরানার পাশে দেবের ‘ককপিট’ একেবারে অন্য রকমের ছবি। পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় যেমন বলছেন, ‘‘বাংলা বা হিন্দিতে এমন ছবি আগে কোনও দিনই তৈরি হয়নি। হলিউ়ডের ‘ফ্লাইট’ বা ‘সালি’ আমাদের অনুপ্রেরণা ছিল।’’ ছবিতে দেবের সঙ্গে রুক্মিণী আর কোয়েল। প্রযোজক দেব নিজেই। পুজোতে একটা ছবি রাখতে হবে বলেই কি ‘ককপিট’ রিলিজ করলেন? এই প্রশ্নের জবাবে আনন্দ প্লাসকে দেব জানিয়েছিলেন, ১৭০টা হলে চলবে এমন ছবিই তো পুজোয় দরকার। সেই ভাবনা থেকেই ‘ককপিট’। প্রথমে ঠিক ছিল না ‘ককপিট’-এর মুক্তি পাওয়া। বরং দেবের ‘ধূমকেতু’ রিলিজের সম্ভাবনা ছিল প্রবল। কিন্তু প্রযোজক রানা সরকারের সঙ্গে ঝামেলার জেরে গা-জোয়ারি করেই দেব ‘ককপিট’ রিলিজ করছেন। তবে একটা অন্য স্বাদের ছবি তো দেখতে পাবেন দর্শক।
চুপ করে বসে নেই রানা সরকারও। তিনিও ‘ধূমকেতু’র বদলে ‘চলচ্চিত্র সাকার্স’ নিয়ে পুজোয় আসছেন। মৈনাক ভৌমিকের ছবিতে সব সময়েই একটা সেন্স অব হিউমারের ছোঁয়া থাকে। এ ছবিতে তার বাড়বাড়ন্ত। ইন্ডাস্ট্রিকেই খানিকটা মক করা হয়েছে ছবিতে। একেবারে শেষ মুহূর্তে ছবির রিলিজ ঘোষণা করা হয়েছে। তত দিনে বাকিরা নিজেদের তাস খেলে দিয়েছেন। প্রযোজক জানাচ্ছেন, তিনি আরও কিছু দিন পর তাঁর টেক্কা প্রকাশ করবেন। বাকিদের নিয়ে রানা চিন্তিতও নন। বললেন, ‘‘বাজেট কম। রিকভারি নিয়ে ভাবছি না। তবে ‘ককপিট’ বা ‘প্রজাপতি বিস্কুট’ ঠিক পুজো রিলিজের মতো ছবি নয়। ওগুলো ডিসেম্বর নাগাদ এলে ভাল হতো।’’
কেউ কাউকে ময়দানে জমি ছাড়তে রাজি নন। তাতে অবশ্য লাভ দর্শকেরই। হাতে অপশন বেশি। স্বপন সাহার ‘শ্রেষ্ঠ বাঙালি’ এবং জিতেরও একটি ছবি মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বরই বোঝা যাবে, দর্শকের রায় কোন দিকে।