Lagnajita Chakraborty

ঋতুস্রাবের সময় নারীদের শুনতে হয়, ‘ন্যাকামি করছে’! পুরুষদের তো ব্যথা নিয়ে কাজে যেতে হয় না: লগ্নজিতা

“কেউ ভেবেছিল বলেই আমরা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করি। শাড়ির কাপড় কেটে ব্যবহার করতে হয় না আর”, বললেন লগ্নজিতা চক্রবর্তী।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২৫ ০৯:০৪
Share:

নারীদের অবস্থান নিয়ে কথা বললেন লগ্নজিতা। ছবি: সংগৃহীত।

কোনও বিষয়ে মতপ্রকাশে দু’বার ভাবেন না। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে নিজের স্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন। সমাজে নারীদের অবস্থান নিয়েও কথা বলেছেন লগ্নজিতা চক্রবর্তী। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের পরেই ফের সেই বিষয়ে মুখ খুললেন গায়িকা। স্মরণ করিয়ে দিলেন, এখনও মহিলাদের বিভিন্ন বিষয়ে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। বেশির ভাগ বাধাই আসে মহিলাদের তরফ থেকেই। যদিও সেই মহিলারা নিজেও পুরুষতন্ত্রের শিকার।

Advertisement

বাড়ির মা, শাশুড়ি, কাকিমা, জেঠিমাদের থেকেই বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম বাধা আসে। একটা সময় তাঁরাও বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। তারই প্রতিফলন ঘটে। গায়িকার কথায়, “আমি আজ দশটা কথা বলতে পারলে, ওঁরা হয়তো সেই সময় কোনও ক্রমে দুটো কথা বলে উঠতে পেরেছিলেন। শ্বশুরবাড়ির প্রসঙ্গে মেয়েদের মানিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়। বাড়ির পুরুষদেরও তো মানিয়ে নিতে হবে। বাপের বাড়ি থেকে সব সময় মেয়েকেই মানিয়ে নিতে বলা হয়। কোনও সমস্যা হলে, তাঁরা ভাবেন তাঁদের মেয়েরই কোনও দোষ রয়েছে।”

মানুষ আজও মনে করে, শ্বশুরবাড়িতে কোনও সমস্যা হওয়া মানে মেয়েই হয়তো দুর্বিনীত হয়ে পড়েছে। লগ্নজিতা বলেছেন, “আমার সঙ্গে এক কাকিমার কথা হচ্ছিল। তিনি বললেন, ‘অত ভাবিস না’। কিন্তু একটা সময় কেউ ভেবেছিল বলেই তো আমরা এইটুকু এগোতে পেরেছি। কেউ ভেবেছিল বলেই আমরা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করি। শাড়ির কাপড় কেটে ব্যবহার করতে হয় না, কেউ একজন ভেবেছিল বলেই।”

Advertisement

সব কিছু মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে গেলেই সমাধান হবে না। বরং ভাবতে হবে এবং কিছু ক্ষেত্রে উদ্যোগী হতে হবে বলে মনে করেন লগ্নজিতা। তাই এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “একটা সময় মহিলাদের ‘স্তন কর’ দিতে হত। সেই কর দিতে না পারলে মহিলাদের স্তন কেটে বাদ দেওয়া হত। তখন একজন কেউ ভেবেছিল বলেই এগুলো বন্ধ হয়েছিল। তবে তার জন্য বহু রক্ত ঝরেছে। বাড়িতে বসে আন্দোলন হয়ে যায়নি।”

ঋতুস্রাব প্রসঙ্গে গত কয়েক দিন ধরে সমাজমাধ্যমে চর্চা হচ্ছে। ঋতুস্রাব চলাকালীন মহিলাদের ছুটি পাওয়া উচিত কি না, এই নিয়ে তরজা চলছে। এই প্রসঙ্গে লগ্নজিতা বলেন, “একটা সময় পর্যন্ত ব্যক্তিগত ভাবে ঋতুস্রাব চলাকালীন সমস্যা বোধ করিনি। পেটে যন্ত্রণার মতো সমস্যা আমার হত না। কিন্তু বহু বন্ধুবান্ধব রয়েছে, যারা ঋতুস্রাবের সময় যন্ত্রণায় উঠতে পারে না। ওদের এমনও শুনতে হয়েছে, ‘ন্যাকামো করছে’।” ঋতুস্রাবে সব মহিলার শরীরে সমান প্রভাব থাকে না। গায়িকা বলেছেন, “তিরিশ পার করার পরে আমার পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়েছে। সেটা যে কী যন্ত্রণাদায়ক, তা আমি বলে বোঝাতে পারব না। আমি এখন অনুভব করতে পারছি, অন্যরা কতটা কষ্ট পেত। একজন পুরুষকে তো তিন দিন পেটে যন্ত্রণা নিয়ে অফিস যেতে হয় না। তাই এই সময়টা যে মহিলাদের অতিরিক্ত কষ্ট হয়, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই।”

নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠন ভিন্ন। নারী সন্তান ধারণ করতে পারে বলেই তারা বেশি শক্তিশালী এমন নয়। গায়িকার স্পষ্ট বক্তব্য, “নারী হয়তো সন্তান উৎপাদন করতে পারে। কিন্তু তাঁর অন্য কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন আমার বর আমার চেয়ে চেহারায় বড়। তাই ও অনায়াসে ২০ কেজির ব্যাগ তুলে নিতে পারে। কিন্তু আমি হয়তো সেটা পারব না।” নারী-পুরুষের সমান অধিকারের লড়াই যুক্তিসঙ্গত। কিন্তু চেহারা বা শারীরিক গঠনের দিক থেকে ফারাক রয়েছে বলেই মনে করেন লগ্নজিতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement