আনন্দ প্লাস অফিসে এসেই বললেন, ‘‘আমি নাকি আমার পার্টনারের সঙ্গে দিল্লিতে থাকি! এটা কী হেডিং করেছিল আনন্দ প্লাস আমার সাক্ষাৎকারে! আমি তো অবাক।’’ টেবিলের ওপার থেকে উত্তেজনার স্বর! হলুদ রঙের শর্ট ়ড্রেসে অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। বলতে বলতে অবশ্য অর্পিতা মুচকি হাসছিলেনও! সঙ্গে ‘শব্’ ছবির পরিচালক ওনির আর আশিস বিস্ত।
লাভ মেকিং আসলে সেলিব্রেশন
‘শব্’-এ তাঁর খোলামেলা দৃশ্য নিয়ে নানা মহলে নানা কথা। সে সব উড়িয়ে দিয়ে অর্পিতা বললেন,‘‘আসলে বোল্ড সিন বলে কিছু হয় না। ইন্টারনেটের যুগে চাইলে যে কেউ যে কোনও ধরনের দৃশ্য দেখতে পারেন। সেখানে ছবিতে খোলামেলা দৃশ্য দেখার জন্য কেউ বসে থাকেন না। তাই ‘শব্’ ছবিতে বোল্ড সিন ঢুকিয়ে আলাদা কিছু করতে চাইনি আমরা।’’
অর্পিতার ঠিক পাশেই বসেছিলেন ছবির পরিচালক ওনির। বললেন,‘‘২০১৭তেও আমরা পোশাক খোলা নিয়ে এত কথা বলছি। কবে পরিণত হব আমরা?’’ গ্রিন টি-তে চুমুক দিয়ে জানালেন, তাঁর ধাঁচের ছবি যেন সব দিক থেকেই আলাদা।
আমার ছবিতে আইটেম নাম্বার থাকবে না
নিজের ধাঁচের ছবি বলতে কী বোঝেন ওনির? জানালেন, কোনও দিনই নাচ গানের ছবি, ভূতের ছবি তৈরি করতে পারবেন না। বললেন, ‘‘আমার ছবিতে কোনও আইটেম নাম্বার থাকবে না। জেন্ডার, মাইনরিটি আমার বিষয়। একটু সেন্সিবল সিনেমা নিয়ে ভাবতে ভালবাসি...’’ মনে করেন ছবির গল্পই আসল, যেমন ‘দ্য লাঞ্চবক্স’।
অর্পিতাকে দেখে তিনি মুগ্ধ
‘শব্’-এর চিত্রনাট্য ২০০০ এ লেখা। বোল্ড লাভ মেকিং দৃশ্যের জন্য ওনিরকে ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রথমে ভেবেছিলেন সঞ্জয় সুরি আর রবিনা টন্ডনকে নিয়ে ছবি করবেন। কিন্তু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ির সিঁড়িতে হোয়াইট শার্ট আর ব্লু জিনসের অর্পিতাকে দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। সেই মুগ্ধতা আজও অটল। অর্পিতা হেসে যোগ করলেন, ‘‘কাস্ট অ্যাট ফার্স্ট সাইট, এটাই স্টোরির ট্যাগলাইন’’ (হাসি)!
আরও পড়ুন:অদৃ্ষ্টে বিশ্বাস করি, আর মনে করি আমি ভাগ্যবতী
বুম্বাদার কাছ থেকে কাজ শিখেছি
ওনির জানালেন, এ ছবির অনেক কিছুই অর্পিতার ‘বসিং’-এর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। অর্পিতা ছটফটিয়ে উঠলেন, ‘‘আমি বসিং করি না। তবে বুম্বাদার সঙ্গে থাকতে থাকতে প্রোডাকশন হ্যান্ডল করা শিখেছি। তাতে দেখলাম স্টার হয়ে ট্যান্ট্রাম দেখাতে পারলাম না! আসলে ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান ভানে।’’
ছবি: প্রদীপ আদক
কেউ আমায় বাতিল করলে আমি তাকে বাতিল করি না
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে মুখ খুললেন আশিস। বাংলা একেবারেই জানেন না। পাশ থেকে অর্পিতা দুষ্টুমি করে বলে উঠলেন, ‘গালাগাল দিলেও বুঝবে না।’’ ওনিরের সঙ্গে তাঁর যখন আলাপ হয়েছিল, তখন আশিস অভিনয়ের ‘অ’ও জানতেন না। ‘‘একটুও অভিনয় পারত না। কিন্তু ওর নিষ্পাপ মুখটা বড্ড মন কেড়েছিল। আর এখন তো মুম্বইয়ে ‘মামি’-তে গিয়ে সব ছবি দেখে আমায় টেক্সট করে। সিনেমা নিয়ে এখন এতটাই আগ্রহ,’’ বললেন ওনির। আশিস মনে করেন, কাজ করার ইচ্ছে থাকলে লেগে থাকতে হয়। কেউ তাঁকে বাতিল করলেও তিনি যোগাযোগ রেখে যান। তবে প্রথম দিকে ওনিরের ছবির মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারেননি সেটাও অকপটে বললেন। পরে দেশ-বিদেশের ছবি দেখে সিনেমার জ্ঞান বাড়িয়েছেন।
‘টপলেস’ হওয়ার আলাদা প্রস্তুতি ছিল না
দীর্ঘ ওয়র্কশপের পর ‘শব্’-এর রায়না চরিত্রের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন অর্পিতা। যদিও ‘টপলেস’ হওয়ার জন্য আলাদা কোনও প্রস্তুতি ছিল না। নিজেকে ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বন্ধুর সঙ্গে পার্টনারশিপে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ওয়েব সিরিজ নিয়ে চলছে ভাবনাচিন্তা। সেখানেও ওনিরকে ছবি করতে বলেছেন অর্পিতা। ওয়েব সিরিজ নিয়ে উৎসাহ থাকলেও দু’জনেই মনে করেন সিনেমার জায়গা বড় পরদাই। কোনও নেটফ্লিক্স বা অ্যামাজন সেই জায়গা নেবে না। ‘‘তবে টেলিভিশন স্ক্রিনকে লোকে দশ বছর পরে শুধুই স্ক্রিন হিসেবে ব্যবহার করবে। কনটেন্টের জন্য নয়,’’ বললেন অর্পিতা।
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় এখনও ‘শব্’ দেখেননি। তাঁকে নতুন প্রেম-সম্পর্ক নিয়ে জিজ্ঞেস করায় অর্পিতা বলেন, ‘‘প্রেম না থাকলে জীবন মৃত! বাদবাকিটা জার্নালিস্টরা লিখবেন। আমি তাঁদের ওপর
ছেড়ে দিলাম...’’