Kadak Singh Actress

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের জন্যই পরিষ্কার বাংলা বলতে পারেন, জানালেন সুশান্তের শেষ ছবির নায়িকা

সদ্য ওটিটি-তে মুক্তি পেয়েছে অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরীর ‘কড়ক সিংহ’। ছবিতে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘দিল বেচারা’ খ্যাত অভিনেত্রী সঞ্জনা সাংভি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:১৪
Share:

অভিনেত্রী সঞ্জনা সাংভি। ছবি: সংগৃহীত।

কলকাতা এসেছিলেন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘কড়ক সিংহ’-এর প্রচারে। সাক্ষাৎকার শুরু হওয়ার আগেই কানে আসে স্পষ্ট বাংলায় কথা বলছেন সুশান্ত সিংহ রাজপুতের শেষ ছবির নায়িকা সঞ্জনা সাংভি। ‘‘আমি একটু একটু বাংলা বলতে পারি, সবটা পারি না।’’ সাধারণত বলিউড থেকে আসা নায়িকারা ভাঙা বাংলায় ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ বলে থাকেন। অন্য রকম বাক্য শুনেই কৌতূহল হল। বাংলা কোথা থেকে শিখলেন জিজ্ঞেস করতেই সঞ্জনা একগাল হেসে বললেন, ‘‘আমার প্রথম ছবি ‘দিল বেচারা’তে আমার চরিত্রটা বাঙালি ছিল। সে সময় একদম আনকোরা নতুন ছিলাম। আমার বুদ্ধি আমায় বলেছিল, বাঙালি চরিত্র পেয়েছ যখন, ভাষাটা শিখে ফেলো। সাধারণত অভিনেতারা শুধু নিজেদের সংলাপগুলোর উচ্চারণ ঠিক করে শেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিজ়ির চরিত্র করার সময় আমি আমার ১০০ শতাংশ দিয়েছিলাম। মনে হয়, ভালই করেছিলাম। কারণ, সে সময় বাংলার সঙ্গে যে সম্পর্কটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তা অতুলনীয়।’’

Advertisement

সঞ্জনা ‘কড়ক সিংহ’ ছবিতে পঙ্কজ ত্রিপাঠীর মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলেও সঞ্জনার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন অনেকেই। ছবির শুটিংয়ের জন্য ২০২২ সালে অনেকটা সময় কলকাতায় কাটিয়েছিলেন অভিনেত্রী। তিনি জানালেন, পার্ক স্ট্রিট বা ধর্মতলা চত্বরে শুটিং করার সময় এ শহরের কমবয়সি অনুরাগীদের আন্তরিকতা তাঁকে অবাক করেছে। অন্য কোনও জায়গায় তিনি এত ভালবাসা পাননি। সঞ্জনা বললেন, ‘‘‘দিল বেচারা’র কাস্টে প্রচুর বাঙালি ছিলেন। শাশ্বতদা আমার সঙ্গে ইচ্ছে করে সব কথা বাংলায় বলতেন। যাতে আমি অভ্যস্ত হয়ে যাই। আসলে যে কোনও ভাষার কথ্য তো আলাদা হয়। শাশ্বতদার সঙ্গে আমার অনেক দৃশ্য ছিল। আমার যাতে অসুবিধা না হয়, তাতে অনেকটাই সাহায্য করেছিলেন শাশ্বতদা।’’

২০২০ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘দিল বেচারা’। কিন্তু তার পর থেকে খুব বেশি সংখ্যায় ছবি করেননি সঞ্জনা। কী ভাবে ছবি বাছাই করেন তিনি? উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেক অভিনেতার কাজ করার পিছনে আলাদা অনুপ্রেরণা থাকে। কেউ টাকার জন্য কাজ করেন, কেউ খ্যাতির জন্য। আমার ক্ষেত্রে এই দুটোর কোনওটাই নয়। আমি পড়াশোনায় বরাবরই ভাল ছিলাম। সাংবাদিক, আইনজীবী, মার্কেটিংয়ের পেশাদার— যে কোনও কেরিয়ার বেছে নিতে পারতাম। কিন্তু অভিনয় করার ঝুঁকি নিয়ে ফেললাম। এর পেছনের কারণটা খুব স্বার্থপর। আমি আমার দর্শকের সঙ্গে একটা মনের যোগ তৈরি করতে চাই। ঠিক সেই কারণেই আমি ‘প্রজেক্ট’ করতে চাই না, ছবি করতে চাই। কোনও কাজ করা ‘উচিত’ বলেই রাজি হয়ে যেতে পারি না। বেশি সংখ্যায় ছবি করা হয়তো খুবই জরুরি। ব্যাঙ্ক ব্যালান্স বাড়বে, ইনস্টাগ্রামে অনুরাগীর সংখ্যা বাড়বে। কিন্তু আমি এমন একটা ফিল্মোগ্রাফি বানাতে চাই যা দেখে পরে নিজেরই গর্ব হয়।’’

Advertisement

১৩ বছর বয়সে সঞ্জনা রণবীর কপূরের ‘রকস্টার’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসাবে অভিনয় করেছিলেন। তার পর থেকেই অভিনয় করার ইচ্ছেটা জন্ম নেয় তাঁর মধ্যে। ছোট থেকে কত্থক নৃত্য করতেন সঞ্জনা। এক বার স্কুলে পারফর্ম করছিলেন। সেখানেই তাঁকে দেখে মনে ধরেছিল পরিচালক ইমতিয়াজ আলির। ছবিতে অভিনয় করার সময় রণবীর নিজে তাঁর মাকে অনুরোধ করেছিলেন, মেয়েকে অভিনয়ে উৎসাহ দেওয়ার জন্য। সঞ্জনার অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন সেই মুহূর্ত থেকেই। ‘রকস্টার’-এর পর প্রচুর বিজ্ঞাপনের প্রস্তাব পেয়েছিলেন তিনি। অন্য যে কেউ হলে হয়তো স্কুলের পাট চুকিয়ে মুম্বই চলে যেতেন। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করেছিলেন সঞ্জনা। দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজ থেকে স্নাতক স্তরে পড়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ড মেডেলিস্ট হন তিনি। ‘‘সে সময় আমি নিজেকে বুঝিয়েছিলাম, পড়াশোনা করলে পরে আমারই লাভ হবে। এখনও পর্যন্ত যে পরিচালকের সঙ্গেই কাজ করেছি, প্রত্যেকে আমায় বলেছেন, আমি অনেক পরিণত। দুনিয়া সম্পর্কে আমার জ্ঞান অনেক বেশি। আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম। কাল যদি আমি একটা রাজনৈতিক পিরিয়ড ড্রামার প্রস্তাব পাই, আমি হয়তো চরিত্রগুলো অনেক বেশি আত্মস্থ করতে পারব।’’

অনিরুদ্ধের নাকি সব ছবি দেখা হয়ে গিয়েছে তাপসীর। ‘অন্তহীন’ বা ‘পিঙ্ক’ কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল রাধিকা আপ্টে এবং তাপসী পন্নুর। ‘কড়ক সিংহ’ ছবি করার সময় সঞ্জনার কি সেই বিষয়টি মাথায় ঘুরছিল? সঞ্জনা বললেন, ‘‘আমি যে কোনও বিষয়ে নিজের সেরাটা দিতে চাই। শীর্ষে অবশ্যই পৌঁছতে চাই। কিন্তু কোনও শর্টকাট নিয়ে নয়, পরিশ্রম করে। ছবি সই করার সময় কোনও ফর্মুলা দেখা ঠিক নয়। তবে তাপসী আমার খুব কাছের বন্ধু। আমার আগের ছবি ‘ধক ধক’-এর ও অন্যতম প্রযোজকও। ওর কেরিয়ার আমি খুব মন দিয়ে লক্ষ করেছি। ও যে ভাবে এগিয়েছে, তা প্রশংসনীয়। তাই অবশ্যই ওর মতো হতে চাই আমি। দর্শক যে ভাবে ‘পিঙ্ক’ পছন্দ করেছিলেন, তার কিছুটাও যদি ‘কড়ক সিংহ’-এর ভাগ্যে জোটে, তা হলেই আমি খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন